অধিভুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে

গোলাম কিবরিয়া পিনু

এই এক দেশ – যেখানে রক্তাক্ত হাইড্রোজেনের ভেতর
মেঘজমাট বেঁধে সৃষ্টি হয়েছিল
এক চন্দ্রধারা
সেই চন্দ্রধারার নামই দেদীপ্যমান মুক্তিযুদ্ধ।

সৃষ্টির সময়ে ছিল
এক একেকটি আগুনের গোলক
যার সমবেত নাম বিদ্রোহী-জনতা
যেন এক আগ্নেয়গিরির যাদুঘর
টকবক হয়ে ফুটেছিল–দিগন্তরেখায়
উড়ছিল ধোঁয়ার কুণ্ডলি
ঘনমেঘ-নীরদপুঞ্জ
কুড়ুলে মেঘ-আঁধিঝড়
তার মধ্যে থেকে উপচে উঠলো আমাদের স্বপ্নভূমি !

বিস্ময়কর রাসায়নিক মিশ্রণে
মরিয়া হয়ে উঠেছিল জনগণ
পাথরখণ্ডে সপ্তমুখী জবা ফুটলো
অসীম সাহসে
একেকটি বরফের চাঁই গলে গলে
ফল্গুধারা তৈরি হলো !

রঙের ভিন্নতা ছিল না
শরীরের যেকোনো স্থানে–মুখমণ্ডল, গলা, কাঁধ
হাত, পা, বুক অথবা পিঠে
সকল ধমনিতে একই রক্তের ধারা প্রবাহিত হয়েছিল
মস্তিষ্কের নিউরণে একই বাদ্যের দ্রিমি-দ্রিমি তাল ছিল
আমাদের দৃষ্টিহীনতা ছিল না
এমন কি আমরা একচক্ষু হরিণও ছিলাম না
আমাদের রক্ত জমাট বাঁধেনি
বিপন্ন সময়ে আমরা পরস্পর থেকে দূরে সরে থাকেনি
শিরদাঁড়া উঁচু ছিল
আমাদের ছিল না পতঙ্গ-পতন !

রক্তক্ষরণের মধ্যে দিয়েও রক্তের প্রবহমানতা
আন্তঃনদী হয়ে জেগেছিল !
হৃদয়তন্ত্র কোন্ মন্ত্র নিয়ে জেগে উঠেছিল সেদিন ?
আমাদের কাঙ্ক্ষিত আকাঙ্ক্ষা ছিল
পরাধীনতার শৃংখলে–পরশাসিত থাকবো না
বশংবদ থাকবো না
দাসানুদাস হয়ে–পরনির্ভর থাকবো না
মেহনতি, শ্রমজীবী, কৃষিজীবীর ইশতেহার নিয়ে
শোষকশ্রেণির কব্জা থেকে বের হয়ে
নিজের চারণভূমিতে
বৈষম্যহীন অবস্থায় সংহত হয়ে বেঁচে থাকবো !

অহিংস পথ দিয়ে আমরা যেতে চেয়েছিলাম
তবে সে পথে যেতে পারিনি
রক্তাক্ত যুদ্ধের পথেই যেতে হয়েছিল !
ক্ষমতালোভী, সমরবণিক, যুদ্ধবাজ, ধর্মান্ধ-কালজ্ঞ শক্তি
ও সাম্রাজ্যবাদ
সোনার খাঁচায় আমাদের আটকে রাখতে পারেনি
আমরা হয়েছিলাম বালিহাঁস
ডাকপাখি
নীলকণ্ঠ
সোনাচড়াই !

বীতরাগ থেকে
নিঃস্পৃহতা ভেঙে আমরা জেগে উঠেছিলাম,
দ্বিধাহীনতা থেকে
অকুণ্ঠচিত্তে গীতি-নৃত্যে জেগে উঠেছিলাম,
মায়ামুগ্ধ থেকে
নিজের কোকিল সুরে জেগে উঠেছিলাম,
মনস্তাপ থেকে
ধ্যানমগ্ন হয়ে জেগে উঠেছিলাম,
ভয়গ্রস্ত থেকে
দুঃসাহসে জেগে উঠেছিলাম,
শোকবিহ্বল থেকে
প্রাণপ্রাচুর্য নিয়ে জেগে উঠেছিলাম !

আর এখন
আমরা কোন্ বিনষ্টির মধ্যে ?
আর এখন
আমরা কোন্ কপটভাষ্যের মধ্যে ?
আর এখন
আমরা কোন্ স্বভাবদোষের মধ্যে ?
আর এখন
আমরা কোন্ অশ্রুলোচনের মধ্যে ?

আমাদের অলোকসামান্য মুক্তিযুদ্ধ
আমাদের দেদীপ্যমান মুক্তিযুদ্ধ
ম্রিয়মান হয়ে যাবে ?
হারাবে তার স্বভাব-সৌন্দর্য
হারাবে তার উজ্জ্বলন
ও আকাশদিউটি !
যারফলে আমাদের দৃষ্টি জ্বালানোর পিলসুজ পর্যন্ত থাকবে না ?

এত অকুঞ্চিত অন্ধকার
এত ছায়া-প্রচ্ছায়া
এত অন্ধকূপ
ধূপ জ্বালানোর লতাগৃহ নেই
রাত্রি নামে–তমসাবৃত দিন !

চলো–অধিভুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে
চলো–কুণ্ঠামুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে
চলো–নবাঙ্কুর হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে
চলো–প্রসববন্ধন হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে।

Print Friendly

Related Posts