অভিশপ্ত যৌতুকের বলী রাজধানীর কদমতলীর গৃহবধূ হাসি!

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর কদমতলী এলাকায় যৌতুকের দাবিতে স্বামীর নির্যাতনে গৃহবধু নিহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ময়না তদন্তের পর গৃহবধুর লাশ গতকাল শুক্রবার বিকেলে মিরপুর কালশি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, মিরপুর পল্লবী ১২ নম্বর সেকশনের ৫৭ নম্বর বাড়ির হাবিবুর রহমানের মেয়ে উম্মে হাবিবা হাসি (২২) কে গত ৪ বছর আগে পারিবারিকভাবে জুরাইন কমিশনার গলির ১৫৫৮ নম্বর বাসার খালেদ হাসান মিঠুর সঙ্গে বিয়ে দেন। হাসির বাবা হাবিবুর রহমান জানান, তার তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে হাসি। বিয়ের সময় মেয়ের স্বামী মিঠুকে আসবাবপত্র, স্বর্নালংকারসহ মোট ৫ লাখ টাকার আসবাবপত্র দেয়া হয়। তাদের ঘরে হুমায়রা নামে তিন বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

হাবিব জানান, বিয়ের আগে হাসির স্বামী মিঠু বিদেশ থেকে ছুটিতে এসে তার মেয়েকে বিয়ে করলেও পরবর্তীতে সে আর বিদেশ যায়নি। বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে মেয়েকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে স্বামী মিঠু। কখনো নিজের সংসারের প্রয়োজনে, কখনো পুনরায় বিদেশ যাবার জন্য টাকার প্রয়োজন জানিয়ে হাসির উপর নির্যাতন করা হতো তার বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মিঠু ফোন করে শ্বশুর হাবিবের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু এত টাকা কোথা থেকে পাবেন জানালে মিঠু ক্ষুব্ধ হয়ে ফোন রেখে দেন। এরপর বিকেলে মেয়ের বাসায় আবারো ফোন করেন হাবিব। এসময়ে মেয়ের নাম্বার বন্ধ পান তিনি। এরপর মিঠুর নাম্বারে ফোন দিলে তাও বন্ধ পান। পরে মেয়ের শাশুড়ির নাম্বারে ফোন দিলে শাশুড়ি তাকে জানান আপনার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে।

এ কথা শুনে হাবিব জানতে চান এত মানুষের মধ্যে আমার মেয়ে কী করে গলায় ফাঁস দিতে পারে। শ্বাশুড়ি জানান তারা সবাই ছাদে ছিল। এই ফাঁকেই মেয়ে গলায় ফাঁশ দেয়। এরপর মেয়েকে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরাই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে পৌছে হাবিব তার পরিবারসহ জানতে পারেন তার মেয়ে আর নেই।

হাবিব জানান, তার মেয়েকে সুপরিকল্পিতভাবে ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মেয়েকে হত্যা করে একে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাইছে। তিনি অভিযোগ করেন, আত্মহত্যা করলে সাথে সাথে শ্বশুড় পক্ষের লোকজন পুলিশকে খবর দিল না কেনো। যে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে তার আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে সেই ফ্যানের নীচে থাকা বিছানার দুরত্বে কোনভাবেই তার মেয়ের উচ্চতার কেউ ঝুলে আত্মহত্যা করতে পারেনা। হাবিব তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টমহলসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়েছেন।

অন্যদিকে হাসির শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে ঘটনা মিমাংশার জন্য হাবিবের পরিবারকে বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু হাবিব জানান আপোষ করার প্রশ্নই আসে না । আমি চাই এ বিচার ও সাজার মাধ্যমে যেন আর কোন বাবার কোল খালি না হয়।

ঢামেক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৮টার দিকে হাসির স্বামী মিঠু, শ্বশুর আফজাল হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন হাসিকে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসিকে দেখে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে কদমতলী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

Print Friendly

Related Posts