আমি যখন ধরি ভালো করেই ধরি

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ মানবাধিকারকর্মীদের অব্যাহত সমালোচনার মধ্যেও মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলমান অভিযানে নিহতের ঘটনাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সমর্থনের প্রকাশও ঘটিয়েছেন তিনি। এই অভিযানে কাউকে ছাড় না দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

মাদক নির্মূল অভিযানে নিহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে যাওয়ার পর তাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এলে সাংবাদিকরা এই অভিযান নিয়ে তাকে প্রশ্ন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “মাদক সমাজে একটা ব্যাধির মতন। আপনারাই পত্র-পত্রিকায় লিখেছেন মাদকের বিরুদ্ধে। আবার আজকে যখন অভিযান চলছে তখন কোনটা কীভাবে কী হচ্ছে সেটার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার শুরু করেছেন। কোনটা চান অভিযান চলুক, না কি বন্ধ হয়ে যাক?

মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে হতাহতের ঘটনায় সমালোচনা করে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, অভিযানে আইনের চেয়ে বন্দুকের ব্যবহার বেশি ঘটছে। বুধবার দুপুরেই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মাদক নির্মূল অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায় তাদের উদ্বেগ জানিয়ে আসেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে সমর্থন রেখে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, “খুব স্বাভাবিক এই ধরনের অভিযান চালাতে গেলে কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। যখন পুলিশ বা র‌্যাব একটা অভিযানে যায়, যখন তাদের একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়, আর সেই ঘটনায় যদি কোনো কিছু ঘটে যায়, সেটা নিশ্চয়ই ….। তবে যদি ‘অন্যায়’ কিছু ঘটে, তার বিচারের আশ্বাসও দেন প্রধানমন্ত্রী।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, আপনারা একটাও ঘটনা দেখান যে, কোনো নিরীহ ব্যক্তি এর শিকার হয়েছে। যদি কোনো নিরীহ ব্যক্তি শিকার হয়ে থাকে আমরা নিশ্চয়ই তার ব্যবস্থা নেব।

কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের কয়েকজনের পরিবার দাবি করেছেন, তাদের স্বজনকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কক্সবাজারের নেতারা সেখানে দলীয় এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

অভিযানে মৃত্যুর ঘটনাগুলোকে বড় করে দেখিয়ে গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলোকে গণমাধ্যম আড়াল করছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে আসছে না বলে তার মত।

অভিযানে এই পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কিন্তু একটা অভিযান চালাতে গিয়ে যদি কোন ঘটনা ঘটে, আর সেটাই যদি বড় করে দেখান, তাহলে বলেন অভিযান বন্ধ করে দেই?

মাদকের বিস্তারে যাদের ভূমিকা রয়েছে, তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে- এক সাংবাদিক জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, “কাকে গডফাদার বলছেন? কে গডফাদার, কে ডন, সেটা কিন্তু আমরা জানি না। যারাই এর সঙ্গে জড়িত, যাদের বিরুদ্ধেই এতটুকু খবর পাওয়া যাচ্ছে … আমি যখন ধরি ভালো করেই ধরি, এটা তো ভালো করেই জানেন। কার ভাই, কার চাচা, কার কী, ওটা কিন্তু দেখি না। এটা একটু মাথায় রাখেন।

চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মতো জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময়ও প্রশ্ন ওঠার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। যখন সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান করতে গেছি, তখনও একই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। সন্ত্রাস আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। মাদকবিরোধী অভিযান যেটা চলছে, সারাদেশের মানুষ কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছে। এটা মানুষের দাবি।

প্রধানমন্ত্রী সমাজে মাদকের ভয়াবহ বিস্তারের কথা তুলে ধরে বলেন, মাদক ঘরে ঘরে। আজকে মেয়ে বাবা-মাকে হত্যা করছে, ছেলে মাকে-বাবাকে হত্যা করছে, ভাই ভাইকে হত্যা করছে এই মাদকের কারণে। আজকে সমাজে একটা হাহাকার এই মাদক নিয়ে। তার বিরুদ্ধে কি অভিযান চালানো যাবে না?

সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন শেখ হাসিনা। পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ও বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন এবং আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দিতে দুই দিনের এই সফর করেছিলেন তিনি।

 

Print Friendly

Related Posts