ঈদে ফুটপাতই গরীবের ভরসা

খান মাইন উদ্দিন, বরিশাল: ঈদুল ফিতর সমাগত। সব মুসলিমের জীবনেই ঈদ নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ। ধনী, গরীব নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ এ দিন মেতে ওঠে উৎসবে।

ঈদে কেউ পোশাক কেনেন জমকালো বিপণি বিতান থেকে, আবার কেউ কেনেন ফুটপাত থেকে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অভিজাত বিপণী বিতানগুলোতে বিত্তবানরা কেনা-কাটায় ব্যস্ত থাকেন। নিম্নবিত্তরা এসব বিপণী বিতানের আলোকসজ্জা দেখতে পারলেও সেখানে ঢোকার কিংবা কেনা-কাটার সামর্থ তাদের নেই। তাই বলে তাদের ঈদ কেনা-কাটা কিন্তু থেমে নেই। নগরীর ফুটপাতই তাদের ভরসা। সেখানেই তারা সেরে নিচ্ছেন তাদের ঈদ বাজার। তাদের আনন্দ সেখানেই।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নগরীর মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে বঙ্গবাজার খ্যাত হাজী মুহাম্মদ মহসিন মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নিম্নবিত্ত মানুষ। যেন সাধ্যের সবটুকু দিয়ে সাধের ঈদ করার চেষ্টা। মুখভরা হাসিতে ঈদ উদযাপনের উচ্ছ্বাস।

মেয়েরজন্য জামা-জুতা কিনতে এসেছেন পলাশপুরের আছিয়া খাতুন। মেয়ে বায়না ধরেছে,  তাকে নতুন জামা কিনে দিতে হবে। ভারতীয় সিরিয়ালে সে একটি জামা দেখেছে। বেশ কয়েকটি দোকান খুঁজে অবশেষে পাওয়া গেল কাঙ্খিত ডিজাইনের জামাটি। এখন দরদাম করে নেয়ার পালা। দোকানি প্রথমে বেশী দাম হাঁকলেও শেষ পর্যায়ে আছিয়ার বলা দামেই বিক্রি করল।

আছিয়া খাতুন বলেন, আমগো তৌফিক যা আছে হেইয়া দিয়া পোলা-মাইয়োগো মুহের হাসি দ্যাখতে চাই।

আছিয়া জানান, মেয়ের জন্য ৩শ’ টাকায় একটা জামা এবং ছেলের জন্য ২শ’ পঞ্চাশ টাকায় একটা শার্ট কিনেছেন তিনি। এখন বাকি জুতো।

ছেলের বায়না অনুযায়ী একটি গেঞ্জি পছন্দ করেছিলেন পোর্ট রোডের মাছঘাটে শ্রমিকের কাজ করা জাকির।  দোকানী তার কাছে গেঞ্জির মূল্য ৭শ’ টাকা বললে তিনি তার দাম বলেন মাত্র দেড়শ টাকা। এ নিয়ে দোকানী দু’চার কথা শুনালেও তাতে তেমন ভ্রুক্ষেপ নেই তার।

এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ভাই রোজকার আয় দিয়া রোজ চলতে হয়। একমাত্র ছেলে। একটি গেঞ্জি পছন্দ করেছে। ওর পছন্দ অনুযায়ী দামও করলাম কিন্তু দামে না বোনায় দোকানী দিলনা। কি আর করা। এখন অন্য দোকান দেখতে হবে। আজ না পারি কাল কিনবো।

এই মার্কেটের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখর চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের এই মার্কেটের ক্রেতা মূলত গরীব শ্রেনীর। তাদের পছন্দ ও বাজেট অনুযায়ী সকল দোকানী তাদের দোকানে পোশাক উঠিয়ে থাকেন। এবার বেচাকেনা এখনো খুব একটা জমেনি। ঈদের আগের রাত পর্যন্ত তাদের বিকিকিনি চলবে বলে জানান তিনি।

মার্কেট থেকে বাইরে খানিক দূরে জেলা পরিষদ পুকুরপাড় এলাকায় গিয়ে সেখানকার অস্থায়ী দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও উপচে পড়া ভিড়।

নগরীর কাউনিয়া পুরান পাড়া এলাকার ভ্যানচালক শামছুল আলম এসেছেন তার ছেলেমেয়ের জন্য জুতা কিনতে। তিনি জানান, নগরীর মার্কেটগুলোতে জিনিসপত্রের দাম খুব বেশী। তিনি যা রোজগার করেন তা দিয়ে ওসব দোকান থেকে জিনিসপত্র কেনার সামর্থ তার নেই। তাই দিঘীর পাড়ের এ সস্তার বাজারেই তার স্বস্তি।

শামছুল আরো জানান, তিনি ছেলে মেয়ের জন্য মাত্র ১ হাজার টাকার জামা-কাপড় কিনেছেন। এখন জুতা বাকি থাকায় তা কিনতে এসেছেন। নিজের জন্য কিংবা স্ত্রী’র জন্য কিছু কিনবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন ঈদে কবে নতুন পোশাক পরেছি তা মনে নেই। স্ত্রীকেও প্রয়োজনের বাইরে ঈদ কিংবা কোরবানীতে নতুন পোশাক দিতে পারেন না। তাদের দুজনের (স্বামী-স্ত্রী) না হলেও চলবে। সন্তানগো খুশীতেই তাদের খুশী।

Print Friendly

Related Posts