এশিয়া কাপে অন্য বাংলাদেশকে দেখল ক্রিকেটবিশ্ব ॥ ভারত মিডিয়া

এক সময় ১২০-০। সেখান থেকে ২২২ রানে অল আউট! এ যেমন বাংলাদেশের একটা দিক, তেমনই ২২২ রান তুলেও ভারতের সাত উইকেট ফেলে দিয়ে শেষ বল পর্যন্ত জেতার লড়াইয়ে থাকা। এটা বাংলাদেশের আর এক দিক। শুক্রবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপে যে বাংলাদেশকে দেখল ক্রিকেটবিশ্ব, তা এক নতুন বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো বিশ্বকাপজয়ী দল যখন ক্রমশ ব্যর্থতার অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছে,  তখন বাংলাদেশের এই উত্থান এশিয়ার ক্রিকেটের পক্ষে অবশ্যই ভাল খবর।

আর শুক্রবারের এই এশিয়া কাপ ফাইনাল নিশ্চয়ই ক্রিকেটদুনিয়ার কাছে এই বার্তা দিল যে, ভারত কোন পরিস্থিতিতেই হার না মানা দল। সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটাররা এটাও বুঝলেন যে, কোনও প্রতিপক্ষকেই কম গুরুত্ব দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কয়েক মাস আগে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালেও এই বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই শেষ ওভারে ভারতকে যে ভাবে শেষ বলে উদ্ধার করেছিলেন দীনেশ কার্তিক, শুক্রবার সে ভাবেই শেষ বলে ভারতকে জেতালেন কেদার যাদব।

এই দুই ঘটনায় এটাই বোঝা যায়, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ কিন্তু ক্রমশ ভারতের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে দিয়েছে। সমানে সমানে টক্কর দেওয়াটা এখন তাঁদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। শুধু অভিজ্ঞতার অভাবে এই চাপ কাটিয়ে জিততে পারছে না তারা, এই যা। অভিজ্ঞতার অভাবেই হয়তো সেটা হচ্ছে। এই সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে তাঁদের খুব বেশি সময় লাগবে না বোধহয়। যে ভাবে ভারতকে এ দিন শুরু থেকেই চাপে ফেলে দেন মাশরফি মর্তুজারা, তার পরে এ কথা স্বীকার করতেই হচ্ছে। ১৭ ওভারের মধ্যেই শিখর ধওয়ন, অম্বাতি রায়ডু ও রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে মর্তুজারা যে চাপটা তৈরি করেছিলেন, ৩০ ওভারের পরে দীনেশ কার্তিক ও মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে ফিরিয়ে তা আরও বাড়িয়ে তোলেন। যা শেষ বল পর্যন্ত রেখেছিলেন তাঁরা।

ওপেনাররা ছাড়া বাংলাদেশের অন্য ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হলেও ওদের বোলারদের নিখুঁত স্টাম্প টু স্টাম্প বোলিং আর অনবদ্য ফিল্ডিংই ওদের জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে চলে এসেছিল। কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাবই ওদের শেষ বলে জয় পেতে দেয়নি। আর বিরাট কোহালিহীন ভারতের ব্যাটিং? ধওয়ন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে বাজে শট খেলে আউট হন। রায়ডু অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে কিপারের হাতে ধরা পড়েন। ২২২ রান তাড়া করতে গিয়ে কেন এত তাড়াহুড়ো? আর রোহিতের দুর্ভাগ্য, যে পুল শট তিনি সব চেয়ে ভাল মারেন, সেই শটই ব্যাটে-বলে হওয়া সত্ত্বেও বাউন্ডারির মধ্যে রয়ে যায়।

ভারতের ভাগ্য যাঁর হাতে ছিল, সেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনিও অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে স্টাম্পের পিছনে মুশফিকুরের হাতে ক্যাচ দেন। ব্যাটিং নিয়ে, ধোনিকে নিয়ে এ বার ভাবতে হবে। গত দশ ম্যাচে তাঁর কোনও ৫০ রানের ইনিংস নেই। শ্রীলঙ্কায় শেষ ৫০ রান করেছিলেন তিনি। দীনেশ কার্তিক নীচু হয়ে যাওয়া বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান। এ বার তাঁকে নিয়ে ভাবতে হবে নির্বাচকদের। বিশ্বকাপে তাঁকে নিয়ে গেলে ভুগতে হতে পারে। এ সবের পরে আবার কেদার যাদবের হ্যামস্ট্রিং তাঁকে ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে বাধ্য করে। দিনটা ভারতের পক্ষে মোটেই সোজা ছিল না।

 

 

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

আনন্দবাজারপত্রিকা

Print Friendly

Related Posts