খাঁচায় বন্দি এক পাখি শ্রীদেবী

রামগোপাল বর্মা

 

কথাগুলো লিখব, না লিখব না, তা নিয়ে নিজের সঙ্গে লড়াই করছিলাম। অনেকের নাম জড়িয়ে। কিন্তু শ্রীদেবীর ভক্তদের সত্যিটা জানা উচিত। সব চেয়ে সুন্দর, সব চেয়ে বড় তারকা! সুন্দর মুখ, দারুণ প্রতিভা, দু’টো সুন্দর মেয়েকে নিয়ে ঝকঝকে পরিবার। কিন্তু শ্রীদেবী কি সত্যিই খুব সুখী ছিলেন? ওঁর জীবনটা জানলাম দেখা হওয়ার পরে, আমার তেলুগু ছবি ‘ক্ষণ ক্ষণম’ এবং ‘গোবিন্দা গোবিন্দা’-য় কাজ করার সুবাদে। জানলাম, বাবার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত উনি ছিলেন মুক্ত বিহঙ্গ। আর বাবা চলে যাওয়ার পরে মায়ের অতিরিক্ত শাসনে খাঁচাবন্দি এক পাখি!

অভিনেত্রী মেয়ে যে পারিশ্রমিক পেতেন, তা সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে বন্ধু-আত্মীয়দের উপরে ভরসা করতেন শ্রীদেবীর বাবা। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরে আত্মীয়রা বিশ্বাসঘাতকতা করেন। সম্পত্তি নিয়ে ধারণা না থাকায় ভুলভাল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিপদ বাড়িয়েছিলেন ওঁর মা। ওই সময়ে শ্রীদেবী কপর্দকশূন্য। জীবনে এলেন বনি। কিন্তু তিনিও ঋণভারে জর্জরিত। শ্রীদেবীর মা আমেরিকায় গিয়ে মস্তিষ্কে ভুল অস্ত্রোপচারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রতিবেশীর ছেলের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেন বোন শ্রীলতা। মৃত্যুর আগে মা শ্রীদেবীর নামে সব সম্পত্তি লিখে দিলেও মামলা করেন বোন। দাবি করেন, উইল সইয়ের সময়ে মা প্রকৃতিস্থ ছিলেন না।

অগুনতি ভক্তের প্রিয় নায়িকা আসলে খুব একাকী, নিঃস্ব ছিলেন। থাকার মধ্যে ছিলেন শুধু বনি। তবে বনির মা শ্রীদেবীর উপরেই সংসার ভাঙার দায় চাপিয়ে ছিলেন। পাঁচতারা হোটেলের লবিতে প্রকাশ্যে তাঁর পেটে ঘুষি মেরেছিলেন (যদিও বলা হয়, ঘটনাটির পিছনে ছিলেন বনির প্রথম পক্ষের স্ত্রী মোনা কপূরের মা)।

‘ইংলিশ ভিংলিশ’-এর হঠাৎ ঝলক ছাড়া শ্রীদেবীর জীবন অসম্ভব যন্ত্রণাময়। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, ব্যক্তিগত জীবনের ওঠাপ়ড়ায় কুৎসিত সব মুহূর্ত— ওঁর মনে ছিল গভীর সব ক্ষত। শিশুশিল্পী হিসেবে কেরিয়ার শুরু করে এত কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে ওঁকে, যে বেড়ে ওঠাটাই স্বাভাবিক হয়নি। একসময় আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টাও করেন।

সবাই বলতেন উনি সুন্দরী। নিজে কি তাই ভাবতেন? হ্যাঁ, ভাবতেন। সব অভিনেত্রীর দুঃস্বপ্ন হল বয়স। উনিও ব্যতিক্রম নন। কসমেটিক সার্জারি করান, যার প্রভাব স্পষ্ট দেখা গেল। নিজের চারপাশে দেওয়াল তুলে দিয়েছিলেন, যাতে কেউ বুঝতে না পারে, ভিতরে কী চলছে। ওঁর নিরাপত্তাহীনতা যে কেউ বুঝে ফেলবে— আতঙ্কে ভুগতেন। আসলে শ্রীদেবী প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার শরীরে বন্দি এক শিশু! কখনও বাবা-মা, কখনও স্বামী, বা মেয়েরা— ওঁদের ইচ্ছেতেই চালিত হয়েছেন বরাবর। ক্যামেরার সামনে ‘অ্যাকশন’ আর ‘কাট’-এর মধ্যে ওঁকে শান্তি পেতে দেখেছি। এ বার চিরদিনের শান্তি।

(ফেসবুক পোস্টের অংশ)

Print Friendly

Related Posts