খালেদা জিয়া ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ করেছেন!

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ করেছনে বলে ধারণা করছেন কারাগারে তাকে পর্যবেক্ষণকারী চিকিৎসকরা।  আজ শনিবার বিকেলে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী দেখে আসার পর সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী।

এর আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে  যান তার ব্যক্তিগত চার চিকিৎসক।  অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকীর সঙ্গে ছিলেন নিউরো মেডিসিনের অধ্যাপক সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান, চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং কার্ডিওলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ মামুন। সেখানে তারা দেড় ঘণ্টা অবস্থান করেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক কার্ডিওলজিস্ট  ডা. মোহাম্মদ মামুনও  ছিলেন। দেড় ঘণ্টারও  বেশি সময় পর  বেরিয়ে ঢাকা  মেডিকেল কলেজের  মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী তাদের পর্যবেক্ষণ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘গত ৫ জুন তিনি দুপুর  বেলা হঠাৎ করে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন এবং ৫-৭ মিনিট আনকনসাস (অচেতন) ছিলেন। উনি মনেই করতে পারছেন না কী ঘটেছিলো। তাকে তার অ্যাটেনডেন্স যে  মেয়ে ছিলো যারা তারা অনেক কষ্ট করে তাকে বসিয়েছে। এখন আমরা  চেক করে যেটা  দেখেছি এটাকে বলে টিআইএ (ট্রানজিন অ্যাসকেভিক অ্যাটাক)। একটা মাইল্ড ফর্মে স্ট্রোকের মতো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। উনি এখনো কথা  যে বলেন একটু সাইল্ড স্পাড আছে। বাট সি  কেন কমিউনিকেড (কিন্তু তিনি কথাবার্তা বলতে পারছেন), ভালো কথা বলতে পারছেন। মাইল্ড একটা  স্ট্রোক।

মেডিসিনের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘যেটা সবচেয়ে বিপদজনক  সেটা হচ্ছে- টিআইএ কারো হয় তাহলে সেটা ইন্ডিকেট করে যে, সামনে তার একটা বড় ধরনের অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। আমরা এই মতামতটাসহ অন্যান্য অবজারভেশন লিখে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়ে এসেছি। আমরা মনে করি তার কতগুলো বিশেষ ধরনের পরীক্ষা করা দরকার। সেজন্য আমরা বলেছি, এসব সুবিধা রয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতালে। উনাকে যদি খুব দ্রুত ভর্তি করানো জন্য আমরা একটা সাজেশন দিয়ে এসেছি এজ এ ফিজিশিয়ান। এটা খুব তাড়াতাড়ি একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমরা আশা করছি।’

খালেদা জিয়ার পরীক্ষাগুলো তুলে ধরে এই চিকিৎসক বলেন, ‘উনার পরীক্ষার জন্য প্রসথেসিস কম্পিটেবল এমআরআই মেশিন দরকার। উনার ক্যারোপিড ডটলাইট স্টাডি করে ব্রেইনের সার্কুলেশন স্টাডি করা দরকার। উনার নার্ভ কনডাকশন স্টাডি করা দরকার। উনার সমস্ত মেটাবলিক প্রফাইল টাইম অ্যাণ্ড টাইম করা দরকার। যেহেতু উনি এখন মাঝে মাঝে ব্যালেন্স রাখতে পারেন না। উনি হাঁটলে একবার এদিকে আরেকবার ওদিকে মনে হচ্ছে যে উনি পড়ে যান। উনি জোর করে দাঁড়িয়ে থাকেন। পড়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তিনি ওই সময়টার কথা বলতে পারছেন না। তার একটি মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা নিয়ে চার পৃষ্ঠার একটি সুপারিশমালা কারা কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন বলে জানান অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা সবকিছু পরীক্ষা করে আমরা আমাদের সমস্ত মতামত ও সমস্ত অবজারভেশন পূর্ণাঙ্গভাবে ওখানে লিখে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়ে এসেছি। আমরা চার পৃষ্ঠার একটা মেডিকেল রিপোর্ট দিয়েছি, যেখানে সম্পূর্ণভাবে উল্লেখ করা আছে যে, কী ঘটেছে ,কী হচ্ছে এবং সামনে তার কী টিট্রমেন্ট করা উচিত। আমরা আশা করে উনার এটা দেখবেন এবং নিশ্চয়ই আপনারা সাথে এটা শেয়ার করবেন, আপনারা তা জানতে পারবেন।’

খালেদা জিয়াকে কেমন দেখেছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনার কথায় কিছুটা জড়তা আছে, তবে কমিউনিকেশন করতে পারছেন।’

এর আগে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া গত ৫ জুন (মঙ্গলবার) কারাগারে মাথা ঘুরে পড়ে যান। সম্প্রতি কারাগারে তার নিকটাত্মীয়রা দেখা করতে যান। এ সময় তিনি একথা জানান। সরকারের জিঘাংসার কষাঘাতের তীব্রতা যে কত ভয়াবহ, সেটি বোঝা যাবে শুধু খালেদা জিয়ার প্রতি অমানবিক আচরণের মাত্রা দেখলেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া গত তিন সপ্তাহ ধরে ভীষণ জ্বরে ভুগছেন। যা কোনোক্রমেই ঠিক হচ্ছে না। চিকিৎসা বিদ্যায় যেটিকে বলা হয় টিআইএ (ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক)। দেশনেত্রীর দুটো পা এখনও ফুলে আছে এবং তিনি তার শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছেন না।’

গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসান খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। এ মামলায় অন্য আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায়ের পর খালেদা জিয়াকে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। বর্তমানে সেখানেই বন্দি রয়েছেন তিনি।

Print Friendly

Related Posts