গুজব থেকে সংঘাত

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি গুজব ছড়ানোর পর সংঘাত ঘটেছে ঢাকার ধানমণ্ডির জিগাতলায়। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতে নানা অপপ্রচার চলছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসার মধ্যে দলটির সভানেত্রীর কার্যালয় নিয়ে এই গুজব ছড়ানো হয়।

জিগাতলায় অবস্থানরত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দুপুর ২টার দিকে ধানমণ্ডি ৩/এ সড়কের আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে  গেলে সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারী একজনকে আওয়ামী লীগের এক কর্মী ধরে নিয়েছে বলে গুজব ছড়ানোর পর শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে যায়।

এক চা বিক্রেতা বলেন, “ছাত্ররা হঠাৎ করে জিগাতলা মোড় থেকে আসতে থাকে। তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। ছাত্ররা বাধা না মানলে বাক-বিতণ্ডা হয়। ছাত্রছাত্রীরা স্লোগান দিয়ে পার্টি অফিসের দিকে আগালে পার্টি অফিসের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দেয়।”

লাঠিসোঁটা হাতে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ধাওয়ার মুখে শিক্ষার্থীরাও ঢিল ছুড়তে থাকে। এই সময় বিভিন্ন ফেইসবুক আইডি থেকে চার শিক্ষার্থী নিহত ও ধর্ষণের গুজব ছড়ানো হয়।

অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ বিকাল ৪টার দিকে ফেইসবুক লাইভে এসে বলেন, “জিগাতলায় আমাদের ছোট ভাইদের একজনের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে, দুজনকে মেরে ফেলা হয়েছে।”

নওশাবাকে তখন ফোন করা হলে তিনি বলেন, তিনি উত্তরায় আছেন, ঘটনাটি অন্যের কাছে শুনেছেন। নওশাবার মতো অন্য অনেকে ফেইসবুকে এই ধরনের প্রচার চালান। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।

তারা তখন জিগাতলা ছাড়িয়ে ধানমণ্ডি তিন নম্বর সড়কের দিকে এগিয়ে গেলে হেলমেট পরা একদল যুবকের সঙ্গে তাদের সংঘাতে বাঁধে। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ঢিল ছোড়াছুড়ি। ধাওয়ার মুখে শিক্ষার্থীরা পিছু হটে ধানমণ্ডি ২ নম্বর সড়কের স্টার রেস্তোরাঁর দিকে সরে যায়।

বিকাল ৫টার দিকে আম্বালা হোটেলের সামনে থেকে হেলমেট পরা যুবকরা শিক্ষার্থীদের দিকে ইট ছুড়তে থাকে। ওই যুবকদের মধ্যে একজনকে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়তেও দেখা যায়। এসময় শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ঢিল ছুড়ছিল, তাদের কারও কারও হাতে লাঠিও ছিল।

শিক্ষার্থীদের যে পাশে হেলমেট পরা যুবকরা ছিল, তার বিপরীত পাশে সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড়ে বিকালে লাঠি হাতে ৪০/৫০ জন যুবককে অবস্থান নিতে দেখা যায়। স্টার রেস্তোরাঁর কাছে সড়কে দুটি মোটর সাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে পুলিশ থাকলেও তাদের কোনো তৎপরতা ছিল না।

এদিকে শিক্ষার্থীরা শেষ বিকালে আবার জিগাতলার দিকে এগিয়ে যায়। ওই সময় আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে কয়েকজন বেরিয়ে এসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

এরপর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ওই কার্যালয়ে যায়, তাদের সঙ্গে পুলিশও ছিল। তারা ওই কার্যালয় ঘুরে সাংবাদিকদের বলেন, তারা এখন বুঝেছেন, গুজব শুনে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন তারা।

শিক্ষার্থীদের একজন ঢাকা আইডিয়াল কলেজের কাজী আশিকুর রহমান তূর্য বলেন, দুপুরে নামাজের পর হঠাৎ কিছু লোক এসে হঠাৎ বলে, আমাদের চারজন বোনকে আর কজন ছেলেকে আওয়ামী লীগ অফিসে আটকে রাখা হয়েছে। পরে আমাদের একটি অংশ আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে চলে আসে। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ অফিসে এসে দেখলাম, এমন কিছু ঘটেনি। সেখান থেকে বেরিয়ে তূর্য আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, আন্দোলনকারীদের মেরে ফেলা ও আটকে রাখার যে তথ্য আমরা পেয়েছিলাম, তা গুজব। আপনারা কেউ গুজবে কান দেবেন না।

নিরাপদ সড়ক দাবির শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতে নানা ধরনের গুজব, অপপ্রচার চলছে বলে পুলিশ সতর্ক করে আসছে। শিক্ষার্থীরা কার্যালয়ে আসার ঠিক আগে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসে হামলার ঘটনায় প্রশিক্ষিতরা জড়িত ছিল। যারা হামলা চালিয়েছে, তারা সাধারণ ছাত্রছাত্রী নয়, তারা রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত।”

হামলায় আওয়ামী লীগের ১৭ জন নেতা-কর্মী আহত হন বলে ওবায়দুল কাদের জানান। তারা জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান তিনি। এই সংঘাতের মধ্যে কালের কণ্ঠের আলোকচিত্র সাংবাদিক তারেক আজিজ নিশকের উপর হামলা হয়, তার ক্যামেরাও ভাংচুর করা হয়।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে পাশের পপুলার মেডিকেল কলেজে নিতে দেখা যায়।পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল কো অর্ডিনেটর মো. আনহারুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের এখানে ৩০-৪০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। সবাই মাইনর ইনজুরড।

Print Friendly

Related Posts