গুপ্তধনের সন্ধানে মিরপুরে ছয় ঘণ্টা খোঁড়াখুঁড়ি!

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার মিরপুরের একটি বাড়ির ভেতরে ২০ জন শ্রমিক দিয়ে টানা ছয় ঘণ্টা মাটি খোঁড়া হয়েছে, মেলেনি গুপ্তধনের সন্ধান। শনিবার সাতকক্ষের আধাপাকা ওই বাড়ির দুটি কক্ষের প্রায় চার ফুট মাটি কাটা হয়। এরপরেও কিছুর সন্ধান না মেলায় এদিনের মতো খোঁড়াখুঁড়ি স্থগিত করেন ঢাকা জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামান।

টিনশেড ঘরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় খনন কাজ স্থগিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খুব শিগগিরই আবার চেষ্টা চালানো হবে। অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই বাড়ি ঘিরে পুলিশ পাহারা থাকবে বলে মিরপুর থানার ওসি দাদন ফকির জানিয়েছেন।

মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ১৬ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওই বাড়ির মালিক মনিরুল আলম একজন ব্যবসায়ী। তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রায় আট বছর আগে টিনশেড বাড়িটি কেনেন। এরপর থেকে একজন ‘কেয়ারটেকারের’ মাধ্যমে বাড়ির সাতটি কক্ষই ভাড়া দিয়েছিলেন। সেখানে নতুন করে ভবন নির্মাণের জন্য সম্প্রতি ভাড়াটিয়াদের বিদায় করে দেন মনিরুল।

কিছু দিন ধরে বাড়িটি ফাঁকাই ছিল। গত ১২ জুলাই রাতে আবু তৈয়ব নামে এক ব্যক্তিসহ দুইজন বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে কেয়ারটেকার তাদের বাধা দেয়। তখন তারা তাকে আর্থিক প্রলোভন দেখায়। বলে, এখানে গুপ্তধন আছে। তাদের গোপনে সুযোগ করে দিলে তার ভাগও তাকে দেওয়া হবে, বলেন তিনি।

কেয়ারটেকার বিষয়টি তাকে জানালে মনিরুল মিরপুর থানায় যান। পুলিশের পরামর্শে একটি জিডি করেন তিনি। পরে বিষয়টি ঢাকার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে গেলে সেখান থেকে একজন নির্বাহী হাকিমের উপস্থিতিতে বাড়ির মাটি খুঁড়ে গুপ্তধনের সন্ধান করার সিদ্ধান্ত হয়। মনিরুলের পাশাপাশি তৈয়বও থানায় একটি জিডি করেছেন বলে ওসি দাদন ফকির জানিয়েছেন।

কক্সবাজারেরে বাসিন্দা তৈয়ব জিডিতে বলেছেন, এই বাড়িটি তার এক বন্ধুর আত্মীয়ের ছিল। যুদ্ধের সময় তারা বাড়ি বিক্রি করে চলে গেছেন। যাওয়ার সময় তারা সেখানে দুই মণ সোনা মাটির নিচে পুঁতে রেখে গেছেন-বিষয়টি পরে তিনি ওই বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। এই ‘সোনা’ উদ্ধারের জন্য পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন তৈয়ব।

ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সকাল ১০টার দিকে শ্রমিকদের দিয়ে ওই বাড়িতে মাটি খোঁড়া শুরু করে। পশ্চিম দিকের দুটি ঘরের মেঝের নিচে প্রায় চার ফুট খোঁড়া হয়েছে এদিন।

ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত কিছুই পাননি তারা। কোথায় গুপ্তধন আছে সে বিষয়েও কারও কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। বাড়িটির অবকাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ। বেশি খুঁড়লে ধসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাড়িতে গুপ্তধন পাওয়া গেলে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন বাড়ির মালিক মনিরুল।

ওই এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার জহিরুল ইসলাম মানিক বলেন, এই বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল। এরশাদ সরকার আমলে জমিটি কেনার সুযোগ দেওয়া হলে স্থানীয় একজন কিনে নেন। পরে কয়েক দফা হাতবদল হয়ে বাড়িটি বর্তমান মালিক মনিরুলের কাছে এসেছে।

Print Friendly

Related Posts