জনসেবা দিবসে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১১ জনকে সম্মাননা

মোঃ মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ: আন্তর্জাতিক জনসেবা দিবস-২০১৮ উদযাপন উপলক্ষে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে র‌্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার সাথে কর্মক্ষেত্রে অবদান রাখায় ১১ জনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

২৩ জুন শনিবার সকালে র‌্যালী শেষে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন- পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা, এলজিইডি হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মোঃ আবু জাকির সেকান্দার, হবিগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ সফিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নূরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক এবং শিক্ষা ও আইসিটি) ফজলুল জাহিদ পাভেল, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ইসহাক মিয়া, বিটিভি জেলা প্রতিনিধি আলমগীর খান সাদেক, হবিগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাব সভাপতি রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন। এতে জেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও তৃণমূলের লোকজন অংশগ্রহণ করেন।

জেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপস্থিত সকলেই বললেন জনসেবায় দিন বদলের কথা। জেলা প্রশাসকের মহতী উদ্যোগে সংবর্ধনা দিয়ে সম্মাননা জানানো হল জেলার একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় নীরবে নিভৃতে কাজ করেন এমন ১১ জন নিবেদিত প্রাণ জনসেবককে।

তাঁরা কেউই বড় কোন কর্মকর্তা, পদধারী নন। কিন্তু জনসেবায় তাদের ভূমিকা অত্যন্ত মহৎ এবং অনুকরণীয়। ভূমিসেবা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, জননিরাপত্তা (পুলিশ বিভাগ), কৃষি, প্রাণিসম্পদ, গ্রাম পুলিশ আর একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর হাতে তুলে দেয়া হল সম্মাননা স্মারক।

Habiganj--2

জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ সভায় জানান, ঢাকা- সিলেট মহাসড়কের উপর শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ পেরিয়ে লস্করপুর গেলেই একটা রেল ক্রসিং। আব্দুর রহিম আজ প্রায় ৩২ বছর ধরে এই ক্রসিং-এ ফটক বন্ধ করেন এবং খোলেন। রাত ১.৩০ টায় আসে উপবন। তারও দুই ঘন্টা বাদে উদয়ন। আব্দুর রহিমের বিরাম নেই। পালাক্রমে রাত জেগে থাকেন। কখন সিগন্যালের লাল বাতিটি জ্বলবে। হাতের ছোট্ট প্রদীপ শিখাটি দুলিয়ে দূর হতে তিনি ট্রেনের চালককে জানিয়ে দেবেন- রাস্তা পরিস্কার। মধ্যরাতের নির্জনতা ভেঙ্গে রেল ক্রসিং পেরিয়ে কোন অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা ছাড়াই গন্তব্যে ছুটবে ট্রেন। তিনি একজন সরকারী কর্মচারী।

আজমিরীগঞ্জের কথাই ধরুন। কেওলজড়ি হাওরের উপর যাত্রাপুর কিংবা আরও আরও দুর্গম অন্য কোন অজপাড়াগাঁয়। সেখানে যারা বাস করেন, তাদের বাড়িতেও আজ উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদের, কিংবা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া একটা টিউবওয়েল স্বচ্ছ পানি দেয়। তাদের বাড়ির গৃহকত্রীকে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী। ঘরের টিনের চালের উপর লেগেছে সোলার প্যানেল। হাওড়ের উপর একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়। একহাঁটু কাদাজল পেরিয়ে বিদ্যালয়ের উঠোনে আসা দেবদূতের মত শিশুদের পাঠ দিচ্ছেন একজন শিক্ষিকা।

আমাদের আর্থিক সামর্থ্য কম হতে পারে। হতে পারে আমাদের জনবল নেই। কিংবা দুর্যোগে নেই পর্যাপ্ত রসদের যোগান। আমরা তবুও অদম্য জনসেবায়। সরকারের প্রতিটি বিভাগ, শহর থেকে গ্রাম আর গ্রামান্তরে আমরা জনসেবকগণ ছুটে চলেছি নিরন্তর। রাত একটায় খোয়াই নদীর উপর শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল ধরলে (জেলা প্রশাসক) ছুটে যান মানুষের পাশে। সন্ধ্যা ছয়টায় বাল্য বিয়ের খবর এলে ইফতারি ফেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছুটে যান সেই কণ্যাশিশুটিকে আশ্রয় দিতে। গভীর রাতে আগুন লাগলে ছুটে যায় দমকলের গাড়ি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অহর্নিশ ব্যস্ত থাকে পুলিশ বিভাগের প্রতিটি স্তরের সদস্য। সরকারী হাসপাতালে ছড়ানো ন্যাপথালিন আর হাজারো মানুষের উচ্ছিষ্টের তীব্র গন্ধ উপেক্ষা করে দিবারাত্রি জরুরি বিভাগের আলো জ্বেলে রাখছেন ডাক্তার। আজ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে সেবা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এভাবেই আজ বদলে গেছে জনসেবকদের কাজের ধারা। আমাদের কোন সরকারী দপ্তরে সেবা গ্রাহক কেউ এলে আজ কেউ বলে না আপনি কি চান? তারা বলেন- আপনার জন্য কি করতে পারি?

 

Print Friendly

Related Posts