জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় ক্ষুদে উদ্ভাবকদের ড্রোন, রোবট

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে ক্ষুদে উদ্ভাবকদের ক্ষুরধার মগজের ঝিলিক দেখা যাচ্ছে তাদের নিয়ে আসা নানা উদ্ভাবনী প্রকল্পে।

বাংলাদেশের আকাশে উড়ছে অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ড্রোন, জয় করা সমুদ্র সীমায় কড়া নজর রাখছে চালকবিহীন স্বয়ংক্রিয় জলযান, সোফিয়ার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট কথা বলছে, প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে হেসে-খেলে। এমন কল্পনা যে খুব তাড়াতাড়িই বাস্তব হবে; এমন ভরসাই দিচ্ছে দেশের ক্ষুদে-তরুণ বিজ্ঞানী-উদ্ভাবকরা।

নিজেদের তৈরি ড্রোন, রোবট, চালকবিহীন জলযান, গাড়ি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি উৎপাদন, নাগরিক সমস্যার সমাধানসহ উদ্ভাবনী সব বিষয়বস্তু এবং মডেল নিয়ে স্কুল পড়ুয়ারা হাজির হয়েছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের বিজ্ঞান মেলায়। সব মিলিয়ে এই জাদুঘর প্রাঙ্গনে জমেছে দেশের ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান চিন্তার মিলনমেলা।

‘মেধাই সম্পদ, বিজ্ঞান প্রযুক্তিই ভবিষ্যৎ’ এই মূলবাণী নিয়ে আজ ৩৯তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের এই মেলার উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। তিনি বলেন, দেশকে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রগতি আসছে। এখন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গ্রামের মানুষও পাচ্ছে প্রযুক্তি সুবিধা। ইউনিয়ন ও ঢাকার মধ্য কোনো তফাৎ নেই। গ্রাম থেকেও ভিডিও কলে দেশের বাইরে কথা বলা যাচ্ছে। আমরা যদি আমাদের স্কুল-কলেজগুলোতে বিজ্ঞান চর্চা বাড়াতে পারি, তাহলে বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ বাড়বে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সভাপতি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায় বলেন, শুধু বিজ্ঞান মেলা করেই শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান চর্চায় এগিয়ে আনা যাচ্ছে যাচ্ছে না। তাই গত বছর থেকে বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ ও অলিম্পিয়াড শুরু করেছি। আশা করছি, আগামী বছর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে এই আয়োজনটি করার চেষ্টা করবো। আগামী বছর প্রতি জেলা থেকে অন্তত একজন করে প্রতিযোগীকে দেশের বাইরে বিভিন্ন বিজ্ঞান আয়োজনে পাঠানোর চেষ্টা শুরু করা হবে।

এবারের মেলায় সারাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থী-শিক্ষক মিলিয়ে ৭০০ জন অংশ নিচ্ছেন। জাদুঘরে ১৯২ টি অস্থায়ী স্টলে তাদের ১৯২ টি প্রকল্প প্রদর্শিত হচ্ছে, কৌতুহলী দর্শনার্থীদের নিজেদের প্রকল্প সম্পর্কে সহজ করে বুঝিয়ে বলছে শিক্ষার্থীরা।

একটি স্টলে দেখা গেলো স্কুল শিক্ষার্থী সাইয়েদুল মোস্তায়িন তরঙ্গ বসে আছেন ‘তারু’র পাশে। তারু তরঙ্গের নিজের হাতে তৈরি হিউম্যানয়েড। লাল ক্যাপ পরা তারুকে দেখে মনে হচ্ছে তরঙ্গের রোবট বন্ধু সে। তারুকে তৈরি করা সম্পর্কে তরঙ্গ বলেন, তারু একটি হিউম্যানয়েড। রোবটটি আমার নিজের ডিজাইন এবয় আমার নিজের করা কোড দিয়ে তৈরি। এটির পুরো সিস্টেমটি চলে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ইনপুটের মাধ্যমে। এটি আমার নিজের ডেভেলপ করা তারু নামের অ্যাপের মাধ্যমে কথা বুঝতে পারে, জবাব দিতে পারে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে তারুকে চালানো যায় স্মার্টফোন দিয়েই।

তারু-তরঙ্গকে রেখে মেলায় আরেকটু ঘুরতে চোখ আটকে গেলো কয়েকটি ড্রোনের দিকে। কর্কশিটের তৈরি একটি ড্রোন তো দেখতে হুবহু আফগানিস্তান-পাকিস্তানের আকাশে কড়া নজর রাখা মার্কিন ড্রোনের মতো দেখতে! প্রকল্পের নামেও কেমন যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব, “ফিউচার সোলজার অব বাংলাদেশ”!তবে হালকা-পলকা এই দেশী ড্রোন আপাতত যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য সক্ষম না হলেও উড়তে সক্ষম, ভিডিও চিত্র ধারণ করতে সক্ষম বলে জানালেন ড্রোনগুলোর নির্মাতা নরসিংদী থেকে আসা শাওন।

আরেকটি স্টলে গিয়ে জয় করে আনা সমুদ্র সীমা নিয়েও দুশ্চিন্তা অবসানের আশা পাওয়া গেলো। চালকবিহীন স্বয়ংক্রিয় বোট বা জলযানের মডেল নিয়ে হাজির ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির ৪ জন শিক্ষার্থী। দলনেতা রোমান হোসেন জানালেন তাদের নিয়ে আসা এই জলযানটি আসলে একটি স্বয়ংক্রিয় টহল স্পিটবোট। এটি পানির নিচের প্রপেলার এবং উপরে বাতাসে কামড় বসানো প্রপেলারে দিব্যি চলতে সক্ষম। দেশের জলসীমার নিরাপত্তায় জিপিএস সুবিধা সম্বলিত এই স্পিড পেট্রোল বোটের ব্যবহার হবে এমন স্বপ্ন দেখেন তারা। অনেক সময় রাত পেরিয়ে ভোর-সকাল হলেও রাস্তায় বাতি জ্বলতে থাকে, হতে থাকে বিদ্যুৎ অপচয়। এই অপচয় বন্ধের ভাবনা নিয়ে ঢাকায় এসেছে রাঙ্গামাটির কাউখালী ডিগ্রি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

মেলা ২৪ ও ২৫ জুন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা এবং ২৬ জুন সকাল ১০ টা দুপুর ২ টা পর্যন্ত চলবে।

Print Friendly

Related Posts