‘জাতীয় মঙ্গলের কবি’

শাহ মতিন টিপু:  ভোলার কবি মোজাম্মেল হককে বলা হয় ‘জাতীয় মঙ্গলের কবি’। তিনি ছিলেন শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক। তার প্রথম কাব্য জাতীয় মঙ্গল প্রকাশিত হয় ১৯০৯ সালে। মুসলমানদের কর্মে অনুপ্রাণিত করাই ছিল তার কবিতার লক্ষ্য। সমাজে জাগরণ আনতে তার কবিতার ছত্রে ছত্রে ধ্বনিত হয়েছে জাগরণী গান। শিক্ষাদীক্ষায় ও রাজনৈতিকভাবে অবহেলিত মুসলমানদের উন্নতির জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন।

তার জন্ম ভোলা জেলার তাফতা গ্রামে। ১৯০১ সালে তিনি কলকাতা মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আইএ পাস করেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। ১৯১৫ সালে তিনি গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেন। তিনি ভোলা জেলার তৃতীয় গ্র্যাজুয়েট।

১৯১৫ সালে ময়মনসিংহে বঙ্গীয় কৃষক প্রজা পার্টি গঠিত হয়। মোজাম্মেল হক ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত বঙ্গীয় আইন পরিষদে জমিদারি অত্যাচার ও মহাজনী শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন।

ছাত্রজীবনে তিনি ভোলা মহকুমা শহরের বার লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখতে পান, ৬৩ জন আইনজীবীর মধ্যে একজন মাত্র মুসলমান। বিষয়টি তার মনে গভীর রেখাপাত করে। সে সময়ই সমাজ জীবনে একটি বিপ্লব সৃষ্টির জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। তিনি একক প্রচেষ্টায় ভোলায় ১০টি হাইস্কুল ও তিনটি সিনিয়র মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন।

১৯১১ সালে কলকাতা ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি’ এবং লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। মোজাম্মেল হক ছিলেন এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক। ১৯১৮ সালে সমিতির পক্ষ থেকে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। এর যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন তিনি।

১৯১৫ সালে কবির প্রচেষ্টায় কলকাতা শহরে ‘মুসলমান ছাত্র সমিতি’ গঠিত হয়। ১৯১৯ সাল পর্যন্ত তিনি এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মোজাম্মেল হক দীর্ঘ ২৭ বছর বরিশাল জেলা শিক্ষা বোর্ডের সদস্য, ১২ বছর কলকাতা হজ কমিটি ও কলকাতা টেক্স্ট বুক কমিটির সদস্য এবং তিন বছর বেঙ্গল প্রাইমারি এডুকেশন কমিটির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া দুস্থ মানবতার খেদমতের জন্য খাদেমুল ইসলাম সমিতি গঠন করেন।

কলকাতার পত্রপত্রিকা এবং বিশিষ্ট মুসলিম ও হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা জাতীয় মঙ্গল কাব্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সমাজ মঙ্গল (৫০টি কবিতার সঙ্কলন), উত্থাপন সঙ্গীত, কুরআনের বঙ্গানুবাদ (১০ পারা) প্রভৃতি। ১৯৭৬ সালের ১ আগস্ট কবি মোজাম্মেল হকের জীবনাবসান ঘটে।

 

 

 

Print Friendly

Related Posts