ডাক্তারের গাড়ী চালানো শেখায় আহত যুবক মারা গেছে

আনোয়ারা পারভীন : একজন সমাজ সচেতন সরকারি ডাক্তার জনবহুল হাইওয়েতে গাড়ী চালানো শিখতে গিয়ে দু’যুবককে চাপা দেন । এই ঘটনায় আহত যুবকদের মধ্যে একজন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে দীর্ঘ ১৯ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আজ শুক্রবার বিকেলে মারা গেছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরা’র শ্যামনগরে। ঘটনার নায়ক ডা. আনিসুর রহমান। তাঁর প্রাইভেটকার চাপায় গুরুতর আহত শ্যামনগরের টগবগে কৃষি ডিপ্লোমাধারী যুবক শাহীন কাদির ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে দীর্ঘ ১৯ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শুকবোর বিকেলে মারা গেছেন। এতো দিন তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে,গত ৩ জুন দুর্ঘটনার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শাহীনের জ্ঞান ফেরেনি। ডাক্তাররা জানান, তার মস্তিকের ক্ষমতা ৭৫ ভাগ বিলুপ্ত হয়েছিলো। আঘাত জনিত কারণে তার মাথার মগজ বেরিয়ে যায়। কয়েকটি স্নায়ুতন্ত্র বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রচুর রক্তপাত হয়। মেরুদন্ডের উভয় স্কন্ধের হাড় ভেঙে যায়। এছাড়াও স্পাইনাল কর্ড ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। সারা শরীর থ্যাতলানো শাহীন কাদিরের লিভার বড় হয়ে যায়। সে এতো দিন কোমায় ছিলো। তরতাজা এই যুবক সাতক্ষীরা’র শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের শ্রীফলকাটি গ্রামের এসএম মুজিবর রহমানের ছেলে। সে সম্প্রতি কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের চেষ্ঠা করছিল। অপরদিকে শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালের আরএমও ডা. আনিসুর রহমান একই উপজেলার হাওলভাঙ্গি গ্রামের আবু দাউদ সরদারের ছেলে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. আনিসুর রহমান নতুন প্রাইভেটকার কিনেছেন। তিনি জনৈক সোহারাব মোড়লের নিকট গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। ঘটনার সময় তিনি চালক না হয়েও বেপরোয়া ভাবে নিজের প্রাইভেটকার চালিয়ে শ্যামনগর অভিমুখে আসছিলেন। অপরদিকে শাহিন কাদির তার বন্ধু হাবিবুর রহমানের মোটর সাইকেলে বসে বিপরীতমুখী কালিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলো।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্যামনগরের খানপুর ফিলিং স্টেশনের কাছে একটি ছোট কালভাটের ওপর ডা. আনিসের মালিকানাধীন সাদা রঙের (রেজি নং ঢাকা মোট্রো গ ৩০-১২১১) প্রাইভেটকারটি শাহিন কাদিরকে চাপা দেয়। শাহিন কাদিরকে গুরুতর আহত দেখেও চালক ডা. আনিস সরাসরি শ্যামনগরের দিকে পালিয়ে যান। প্রামবাসী এ সময় তাঁকে তাড়া করেও ধরতে ব্যর্থ হন। স্থানীয়রা শাহিন কাদিরকে শ্যামনগর হাতপাতালে ভর্তি করলেও ডা. আনিস তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসা দুরের কথা এমনকি তার সামনেও আসেননি।

শাহিন কাদিরের বাবা এসএম মুজিবুর রহমান জানান, তার ছেলেকে শ্যামনগর থেকে সাতক্ষীরায় পরে খুলনা এবং সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। এসব টাকা তিনি জমি বিক্রি ও বন্ধক এবং সমিতি থেকে লোন নিয়ে খরচ করেছেন।

Print Friendly

Related Posts