থাই গুহায় আটকাপড়াদের যেভাবে উদ্ধার

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ থাইল্যান্ডে একটি গুহায় আটকে পড়া দলটির ১৩ জনের সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার ও সোমবার চারজন করে মোট আট জনকে উদ্ধার করা হয়েছিল, আর আজ বাকি পাঁচজনকেও বের করে এনেছেন উদ্ধারকারীরা।

চিয়াং রাই প্রদেশের থ্যাম লুয়াং নামের ওই গুহাটিতে ১২ জন কিশোর এবং তাদের ফুটবল কোচ আটকা পড়ে গত ২৩শে জুন। থাই নৌবাহিনীর সীল দল এই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন – তারা এক বিবৃতিতে বলেছেন. ১২ জন কিশোর এবং তাদের ফুটবল কোচকে বের করে করে আনা হয়েছে, এক অসাধারণ উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন হয়েছে – যার দিকে পুরো বিশ্বের দৃষ্টি ছিল। ফেসবুকে এক পোস্টে দ্য সীল বলেছে – “ওয়াইল্ড বোর (বুনো শূকর) দলের ১২ জন এবং তাদের কোচ এখন গুহার বাইরে। সবাই সুস্থ।”

গত দু’দিনের মত আজও উদ্ধারকৃতদের সবাইকেই হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । তাদের সাথে গুহার ভেতরে অবস্থান করছিলেন একজন ডাক্তার এবং নৌবাহিনীর তিনজন ডুবুরি। তারা আটকা পড়া শেষজনকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত গুহার ভেতরেই ছিলেন। ইতিমধ্যে তারাও গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং অভিযানটি সম্পূর্ণ সমাপ্ত হয়েছে।

রোববার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টি শুরু হওয়ায় গুহার ভেতরে আটকা পড়াদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল। ভারী বৃষ্টির পর গুহার ভেতর পানির উচ্চতা আরও বেড়ে যেতে পারে এমন আশংকায় রোববারই এই উদ্ধার অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটি ছিল একটি আন্তর্জাতিক অভিযান – যাতে ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া সহ অনেকগুলো দেশের উদ্ধারকারী ও বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

দক্ষ ডুবুরিরা আটকে পড়া কিশোরদের ডুবে যাওয়া সুড়ঙ্গের পানির ভেতর দিয়ে পথ দেখিয়ে গুহার প্রবেশ মুখে নিয়ে আসেন। প্রত্যেক কিশোরকে পুরো মুখ ঢাকা অক্সিজেন মুখোশ পরতে হয়। প্রতিজনের সামনে এবং পেছনে দুজন ডুবুরি ছিল গাইড হিসেবে। এরা তাদের এয়ার সিলিন্ডারও বহন করেন। গুহার যে জায়গায় এই ছেলেরা আটকে পড়ে, সেখানে যাওয়া এবং সেখান থেকে আবার গুহামুখ পর্যন্ত ফিরে আসতে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ডুবুরিরও প্রায় এগারো ঘন্টা সময় লেগেছে।

এর মধ্যে কিছুটা পথ হাঁটতে হয়, বাকি পথটা পানির ভেতর দিয়ে হেঁটে এবং ডুব সাঁতার দিয়ে এগোতে হয়। অনেক চড়াই-উৎরাই আছে গুহার ভেতরে, অনেক জায়গা পানিতে ডোবা। পানিতে ডুবে থাকা অংশ প্রায় এক মাইল লম্বা। এর অনেকটা অংশ ডুব সাঁতার ছাড়া পার হবার উপায় নেই। আর এই পুরো যাত্রাটাই হচ্ছে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে।

সবচেয়ে কঠিন অংশটা মাঝামাঝি জায়গায়। এটিকে একটা টি-জাংশন বলে বর্ণনা করা হয়। এই জায়গাটা এতটাই সরু যে সেখানে ডুবুরিদের তাদের এয়ার ট্যাংক খুলে ফেলতে হয়। এরপর ক্ষণিকের যাত্রাবিরতির জন্য গুহার মধ্যে একটা ক্যাম্প মতো করা হয়। সেখান থেকে বাকীটা পথ পায়ে হেঁটে তাদের গুহামুখে আসতে হয়। বেরিয়ে আসার পর তাদের সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।

Print Friendly

Related Posts