পায়রা বন্দর গড়ছি ॥ এএইচএম নোমান এর কবিতা


পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করছি,
পায়রা বন্দর নিজের শ্রমে সম্পদে গড়ছি।
ঝড় বৃষ্টি সইছি
খাল বিল সমুদ্র বাইছি
জমি পুকুর ক্ষেত খামার দিচ্ছি।
৭ হাজার একর জমি ভূমি,
দিয়েছি খাল নাল ধান পাট
প্রকৃতি নিলয়, অবারিত শাকসবজি তরিতরকারী।
ঘর বাড়ী হাট বাজার দোকান ভাংছি,
পায়রা বন্দর গড়ছি।


চার হাজার দু’শ পরিবার মিলছি,
কম্পিউটার, ড্রাইভিং, মিস্ত্রী,
মাছ চাষ, রাজ কাজ, কৃষি পুষ্টি কাজ শিখছি,
উন্নত চিন্তায় স্বপ্ন দেখছি,
পায়রা বন্দর গড়ছি।


পরিবর্তন স্রোতে নৌবাহিনী যোগে
শক্ত শিকল বেঁধেছি,
১৪টি পুনর্বাসন গ্রামে নোঙ্গর গেড়েছি।
কৃষক শ্রমিক জেলে তরুন মা বোনেরা
‘নিজের পায়ে দাঁড়ান সমিতি’ বদ্ধ হয়েছি।
স্কুল, মসজিদ, পানি, বিদ্যুৎ, সংযোগ সড়ক
পুকুর পরিকল্পিত পাকা ঘর করছি।
পায়রা বন্দর গড়ছি।

যমুনা সেতু উভয় পাড় দৃষ্টান্তে
প্রশিক্ষণ, জীবিকায়ন, সঞ্চয় করব,
উঁচু শির নিজের পায়ে দাঁড়াব।
পায়রা বন্দর গড়ব।
খাল বিল নদ নদীর পানি
মহা মিলন তুমি হৃদয়ে-গভীর সমুদ্রে,
নলুয়া, খেপুপাড়া, কলাপাড়া
বাতি ঘর হয়ে জানান দিবে বিশ্ব ভ্রমান্ডে।
সূর্য উঠে সূর্য ডুবে
সূর্য হাতের তালুতে,
কূয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে
দেখনা এসে আমার বাহুতে
পায়রা বন্দর সমুদ্র আমিই রেখেছি আলগে।


হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান রাখাইন
জেলে তাতী চাষী সাম্যে সবাই।
ধীক সূচী, মিয়ানমার, নোবেল জয়ের অপমান।
সামাজিক সম্প্রীতিতে বন্ধনে
দূর্জয় সমুদ্র আলিঙ্গনে,
আমরা চলছি পায়রা বন্দর গড়ছি।
সমুদ্র জল পায়রার স্থল বিশালতায়
জাহাজ নৌকা, ডোং, খোন্দা, পানসী, ভেলা
লাল সবুজের পতাকার চাদরে
সৃষ্টি কালচারের চৌদ্দ ভাগে একাকার।
ঘর বাঁধব দূর দিগন্ত নব দিগন্ত ছুঁইব,
পায়রা বন্দর গড়ব।


মুক্ত স্বাধীন বাংলায়
নিজের সম্পদ নিজের টাকায় দেশজ পরিকল্পনায়
নিজ দেশে প্রথম সমুদ্র বন্দর গড়ছি।
বুকে সাহস, মুখে মুক্তির ভাষা
চোখে আকাশ ছোঁয়া আশা।
নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্ত হাতল ধরছি
শান্তির ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে
শান্তির পায়রা প্রতীক, সমুদ্র বন্দর পর্যটন কেন্দ্র গড়ছি।
সাম্যতা ও ন্যায্যতার সন্ধান পেয়েছি।

মাতৃভূমির মাতৃত্বে
উন্নয়ন ’তলরেখা’র ‘মা’ আছেন নেতৃত্বে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা আবাসন কর্মসংস্থান
স-ব আছে এই ভান্ডারে।
মাছ মুরগী গবাদি পশু (মামুগ) আদরে,
বিশ্ববাসী দেখবে, দক্ষিণ বাংলাকে জানবে।
উত্তাল-শান্ত সাগরের আগলে ধরা ত্যাগ দূর্দমনীর তাঁরা।
পায়রা বন্দর
সরকার জনতা কিভাবে গড়ছে।


হারিয়েছি, তার চেয়ে কম কি পেয়েছি ?
তবুওত স্বপ্নের জাল বুনেছি।
মুক্তির গন্ধ পেয়েছি।
অন্যায় অবিচারকে লাথি মার,
দূর্নীতিকে আটকে ধর, দূর্নীতিবাজকে ঘৃণা কর।
সুনীতি কায়েম কর
শান্তির পায়রা সমুদ্রের বিশালতায়
আকাশের উদারতায়
সত্য-শান্তির বাণী উড়তে দাও।
শান্তির ডানা মেলতে দাও।
নেশাখোর লোভীদের কালো হাত ভেঙ্গে দাও।
সমুদ্র দিগন্ত পাড়ে পূর্ব কোণে নূতন সূর্য উঠতে দাও।
বল, উচ্ছেদ নয়, পুনর্বাসিত নারী পুরুষ শিশু।
ভাইবোন মা-খালা দাদা-নানা যাদের
কবর হারিয়েছি, প্রেম-প্রীতি ভালবাসা, ক্ষেত খামার বাগান বিছানা হারিয়েছি।
কি হয়েছে ?
ভেঙ্গে চুঁড়ে নূতন সমাজ গড়ছি
পায়রা বন্দর-সমাজ-দেশ গড়ছি।


আকাশের চাঁদ দেখতে দাও,
সমুদ্রের উথাল পাথাল
লেপ্টে পড়া মিলন ঢেউ, ভোগ করতে দাও।
উদার আলিঙ্গনে ভরে দাও,
দেখবে কিভাবে কত কিছু, কত ভাবে নিপিড়ীত ওরা দিতে পারে,
দেখবে কিভাবে ওরা
হতাশাকে ছুঁড়ে মারে,
শোককে শক্তিতে আনে,
বিপদে ধৈর্য্য ধরে
সৎ কর্মে উৎসাহ বোধ করে,
ভাল লোককে সম্মান করে,
ঝড় ঝঞ্চার শক্ত মনে হাল ধরে,
প্রকৃতির ভয় ভীতিকে জয় করে ।

১০
আর দেখছো কিভাবে-
আমরা যারা নরপিশাচ, সন্ত্রাসী
ঘুষখোর, নেশাখোর মদ্যপী
লুটেরা টেন্ডারবাজ পায়রার শান্তিকে বিনাশ করি ?
দানবের চোর চোর দূর্ধর্ষ শকুন চরিত্রের যারা।
সমুদ্রের পাহাড়সম ঢেউ তরঙ্গ
বিলীন করতে পারবে কি এস-ব ?
পারবে, পারতেই হবে-
জনতা জাগছে জাগতেই হবে ।
পায়রা দেশময় শান্তি আসতেই হবে, আসবি,
নিজের শৌর্যে বীর্যে শ্রমে পায়রা বন্দর গড়ছি।

১১
ইছা মাছ, বৈছা মাছ, গুরা মাছ
কচুর লতি, লাউ, কুমড়া, আলু
হাট বাজার গঞ্জ ঘাট ক্ষেত
নানাবাড়ী, দাদাবাড়ী, শ্বশুড় বাড়ী কোথায় পামু মামু খালু।
লন্ড ভন্ড ছিন্ন বিছিন্ন এযেন তান্ডব
মহা-প্রলয় জলোচ্ছাস আচমকা,
পৈত্রিক ভিটা মাটি শ্মশানটা,
তবুও উঠে দাঁড়াব, নুতন সমাজ গড়ব
পায়রা বন্দর গড়ব।

১২
পাল্কি গেল, রিক্সা এলো
ভটভটি, বাস গাড়ী আরো কত কি,
সাম্পান স্টিমার জাহাজ দুনিয়ায় ঘুরছি।
কপি, হারিকেন, চৌদ্দ লাইট, হ্যাজাক লাইট কোথায় গেল।
বিদ্যুৎ এলো, সৌরভ এলো,
তবুও আঁধার রয়ে গেল।

১৩
গোল পাতা, ছন, নাড়ার ঘর,
গোয়াল ঘর, পাক ঘর, থাকার ঘর
টিন-ইট সিমেন্ট বালু বদলে দিচ্ছে দিন দিন।
প্রকৃতি জলবায়ু হার মানল
বৃথা, মনুষ্যযুদ্ধ শুরু হলো
উন্নতির সিঁড়িতে পা-রাখছি
পায়রা বন্দর গড়ছি।

১৪
বাসক তুলসী নীম থানকুনি পাতা
কোথায় গেল নকশী কাঁথা
স-ব দিয়েছ গুড়িয়ে
সাজিয়েছ থরে থরে ভেজাল হোটেল ফার্মেসী।
নিজের ধনে পায়রা বন্দর গড়ছি।
পায়রার এ স্বপ্ন
দেখেছে কে জান
এই লোনা কাদা মাটি থেকে উঠা
এক চৌকষ সৈনিক স্বপ্নিল ১৯৮২ইং
সদ্য এক সেনা কর্মকর্তা উদাস সমুদ্র প্রেমী
নাম তাঁর হাবিবুর রহমান তালুকদার
পরে যিনি হলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
দিল দরখাস্ত সেনা প্রধান এরশাদের হাতে
হয় যাতে পায়রা বন্দর
তাঁর জন্ম ভূমি পায়রাতে
তারই ধারাবাহিকতায় পায়রা বন্ধন
শান্তি বন্ধন দেশ দুনিয়ার স্থলে বন্দরে সমুদ্রে
গভীরে দিল বাতি
২০১৮, শেখ হাসিনা
তাই আজ সালাম জানাই সংগ্রামী জনতা।

১৫
কষ্ট, পানির কষ্ট কার সৃষ্ট ?
অতল পানির পাড়ের পায়রা দক্ষিনাঞ্চল
কেন থাকবে সুপেয় পানি বাদে।
যদি ঢাকা পায় পানি পদ্মা থেকে,
তবে কেন পাবনা পানি সাগর থেকে।
পানি চাই, নির্মল বায়ু চাই, আলো চাই
পরিবেশ চাই, বাঁচার মত বাঁচতে চাই।
বিশ্ব দরবারে দেখতে চাই
নিজের সম্পদে শ্রমে বুদ্ধিতে দেশ প্রেমে
পায়রা বন্দর গড়ছি।
আমাদের সৃষ্টি দাও সবাই দৃষ্টি
বৈষম্য অসাম্য অন্যায্য থাকবেনা মোদের কৃষ্টি।
আনব মোরা দুনিয়াটাকে হাতের মুঠে,
সূর্য যেভাবে আসে হাতের তালুতে,
কূয়াকাটা সৈকতে।

গানের সূরে বলি-পায়রা
সব কিছু মোর উজাড় করে দিয়েছি তোমায় তুলে,
কেমনে রইবে ভুলে।

গত ১০ আগষ্ট ২০১৮ কলাপাড়ায় (পটুয়াখালী) পায়রা বন্দর কার্যকমের প্রশিক্ষণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপলক্ষ্যে কবিতাটি লেখা ও পাঠ করা হয়।
——————————————————————————————————————————-

এএইচএম নোমান, প্রতিষ্ঠাতা ‘ডরপ’ এবং গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার বিজয়ী-২০১৩  ই-মেইল: nouman@dorpbd.org

Print Friendly

Related Posts