পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যায় মডেল ও পুলিশ জড়িত

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি’র পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যাকান্ডে মডেল ও পুলিশ জড়িত । কথিত তিন মডেল ও অবসরপ্রাপ্ত ৩ পুলিশ সদস্য জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে তদন্তের সাথে জড়িত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এদের গ্রেফতারে রাজধানী ও ঢাকার বাইরে একাধিক টিম কাজ করছে। অন্যদিকে গ্রেফতারকৃত রহমতকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে তদন্তের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা। পুলিশ সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

বন্ধু রহমত উল্লাহর সঙ্গে রাজধানীর বনানীর একটি বাসায় আড্ডায় গিয়েছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান (৩৪)। সেখানে যাওয়ার পর বুঝতে পারেন চক্রের ফাঁদে পড়েছেন। চক্রটির লক্ষ্য ছিল রহমত উল্লাহকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে ‘ব্ল্যাকমেল’ করা। কিন্তু মামুন সেখানে থাকায় তাঁদের পরিকল্পনায় বিঘ্ন ঘটে। চক্রের লোকজন তাঁদের দুই বন্ধুকেই বেদম মারধর করেন। একপর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন মারা যান।

মামুন হত্যা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনার এমন বর্ণনাই দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, হত্যার পর লাশ গুমের কাজে চক্রটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন মামুনের বন্ধু রহমত উল্লাহ। রহমতের গাড়িতে করেই বস্তায় ভরে মামুনের লাশ গাজীপুরের কালীগঞ্জের উলুখোলায় একটি বাঁশঝাড়ে ফেলা হয়। এরপর সাত লিটার পেট্রল ঢেলে বস্তার ওপর আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার পুলিশ মামুনের পোড়া লাশ উদ্ধার করে।

পুলিশ বলছে, মামুনকে হত্যা করা হয়েছে বনানীর একটি বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে। এ ঘটনায় রহমতসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে বনানী থানায় হত্যা মামলা করেছেন মামুনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান। রহমতকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পূর্ব বিভাগ। রহমত পেশায় প্রকৌশলী।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (পূর্ব) খোন্দকার নুরুন্নবী জানান, ঘটনায় রহমত নামে একজনকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তার কাছ থেকে হত্যাকান্ডে জড়িত সবার নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। আমরা জড়িত সবাইকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি। খুব শিগগিরই এই হত্যার পুরো রহস্য উন্মোচিত করা সম্ভব হবে।

ওই সূত্র আরো জানায়, তিন মডেল হলো- মেহেরুন নেসা ওরফে আফরিন, তার ছোট বোন ফারিয়া বিনতে মীম ওরফে মাইশা ও সুরাইয়া আক্তার কেয়া। মামুনকে হত্যার সময় এই তিনজনই বনানীর ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিল। সন্দেহভাজন এই তিন মডেলের বিরুদ্ধে মামুনকে হত্যায় সহযোগিতা ছাড়াও ফাঁদ পেতে অশ্লীল ছবি তুলে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, গুলশান-বনানী কেন্দ্রিক এ চক্রটিতে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে। চক্রের অন্যতম সদস্য হলো এ তিন তরুণী। আফরিন, কেয়া ও মাইশা বিভিন্ন লোকের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে তাদের বনানীর ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতো।

নানারকম পার্টি করার আড়ালে তাদের অন্তরঙ্গ ছবি তুলে তা প্রকাশের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করাই ছিল এই চক্রের কাজ। কেয়া এ চক্রের অন্যতম সদস্য শেখ হৃদয় ওরফে আপনের দ্বিতীয় স্ত্রী। তারা তিনজনই শোবিজ মিডিয়ায় তৃতীয় শ্রেণির মডেল ও অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করে। তিন কথিত মডেলসহ এ প্রতারকচক্রের সঙ্গে একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক তিন সদস্যও জড়িত।

মূলত তারাই ‘টার্গেট’ ব্যক্তিকে মারধর এবং নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে অর্থ আদায় করতো। এ তিনজনের মধ্যে আতিক অন্যতম বলে জানিয়েছেন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। আর স্বপন ও মিজান তাকে সহযোগিতা করতো। এ তিনজনের মধ্যে স্বপনের অবস্থান শনাক্তের পর নজরদারি করা হচ্ছে।

Print Friendly

Related Posts