ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে মডেল ফাহিমের আত্মহত্যা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ‘আজ থেকে তার পথের কাঁটা সরে গেল, দোয়া রইল তার জন্য’ – ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মডেল তারকা ফাহিম শাহরিয়ার। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন উদীয়মান মডেল তারকা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ শাহরিয়ার ফাহিম (৩০)।

সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজের রুমে গলায় দড়ি দিয়ে ফাহিম আত্মহত্যা করে। পাশের কক্ষের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রেমিকার সঙ্গে অভিমান করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মবিসর্জনকারী উদীয়মান মডেল ফাহিম শাহরিয়ার সৌরভ তার মমতাময়ী মা রাশেদা আক্তার রেনুর কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত ১০ টায় কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ শামসুদ্দিন ভূইয়া মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাযে জানাজা শেষে তাকে মসজিদ সংলগ্ন মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।

fahim-3
নিজ পরিবারের সঙ্গে ফাহিম

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দূরারোগ্য ব্যধিজনিত কারণে তার মায়ের মৃত্যু হয়। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে বড়বেশি ভেঙে পড়েছিলেন সৌরভ। এদিকে এক তরুণী মডেলকে পছন্দ করতেন সৌরভ। উভয় পরিবারও তাদের এ সম্পর্কের বিষয়টিকে সাদরে সম্মতিও জানিয়েছিলেন।

ঢাকার ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অব রিয়েল এস্টেট বিষয়ে লেখাপাড়া শেষ করে ফাহিম কাজ করতেন আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ পদে। একই সঙ্গে মডেলিংও পছন্দ ছিল তার। সেখানেই পরিচয় হয় ইস্টার্ণ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া এক তরুণী মডেল তারকার সঙ্গে।

তার ফেসবুক আইডিতে নিজেকে নিয়ে তার লেখায় রয়েছে, ‘ মানুষকে অল্পতেই বিশ্বাস করি ধোঁকা খাই, তারপর বোকার মতো আবার মানুষকে বিশ্বাস করি।’ সেই বিশ্বাসই ফাহিমকে নিয়ে গেছে মৃত্যুর দুয়ারে।

সম্প্রতি মডেলিংয়ের কারণে ওই মডেল তরুণীর অবাধ চলাফেরায় বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাদের সম্পর্কের টানাপোড়ন শুরু হয়। সোমবার সকালে ওই তরুণীর একটি বিশেষ এ্যাসাইনমেন্টের কাজ করার সময় সেখানে হাজির হয়ে সৌরভ তার সঙ্গে বচসায় লিপ্ত হন এবং খারাপ আচরণ করেন বলে সৌরভের বাবা বিশিষ্ট ছড়াকার ও শিশু সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর আলম জাহান জানান।

আর এ ঘটনার পর ওইদিন রাতেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে মোহাম্মদপুরের পুলপাড়া এলাকার বাসায় আত্মহননের পথ বেছে নেন সৌরভ। এ আত্মহননের ঘটনাটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের টপ ভাইরাল হয়ে উঠেছে।

মডেল সৌরভের পিতা জাহাঙ্গীর আলম জাহান জানান, তার মধ্যে এমন ইগো কাজ করতো যে তার ভালবাসার মানুষটি অন্য কারও সঙ্গে কথা বলতে ও কাজ করতে পারবে না। এমন ইগোই তার এই নিষ্ঠুর পরিণতি ডেকে এনেছে।

সৌরভের চাচা মানবাধিকার নাট্য সংগঠনের জেলা সভাপতি হারুন আল রশীদ মনে করেন, ফেসবুক আসক্তির কারণেই তার মধ্যে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহননের প্রবণতা এসেছে। আর কোন মা-বাবার সন্তান যেন এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে তাদের বুক খালি না করেন সৌরভের বাবা ও চাচা চোখের জলে বুক ভাসিয়ে সকল সন্তানদের প্রতি এমন আহ্বান রেখেছেন।

fahim-1
বন্ধুদের সঙ্গে ফাহিম

কিশোরগঞ্জ শহরের বড় বাজার বত্রিশ এলাকার বাসিন্দা কবি জাহাঙ্গীর আলম জাহানের একমাত্র পুত্র সন্তান ফাহিম শাহরিয়ার সৌরভ ঢাকার ডেফোডিল ইউনিভার্সিটি থেকে লেখাপড়া শেষে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং এক্সিকিউটিব হিসাবে চাকরি করতেন। মোহাম্মদপুরে বাসা নিয়ে বসবাস করছিলেন কয়েক বছর ধরে।

এক পর্যায়ে শোবিজের রঙিন দুনিয়ার হাতছানিতে মডেলিংয়ের কাজেও জড়িয়ে পড়েন সুদর্শন যুবক সৌরভ। ওখানে কাজ করার সময় পরিচয় হয় ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির নওরীন নামেরএক ছাত্রীর। তিনিও মডেলিং করতেন। দিনে দিনে এ সম্পর্ক প্রেম ভালবাসায় রূপ নেয়।

এখান থেকেই শুরু হয় হাত ধরাধরি করে জীবন সাজানো ও জীবন রাঙানোর গল্প।কিন্তু। তুচ্ছ ব্যক্তিগত ইগো ও ফেসবুক আসক্তি নিষ্ঠুর পরিণতি টেনে দেয় এ গল্পের।

মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তার সর্বশেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস ছিল, ‘আম্মু মারা যাওয়ার পর থেকে আমার দুনিয়াটা অনেক ছোট হয়ে গিয়েছিল। আমার ভবিষ্যৎ চাওয়া পাওয়া বলতে যা ছিল আজ তাও আমাকে ছেড়ে চলে গেল। স্বপ্ন দেখার মতো কিছু নেই। আমার জন্য এত দিন যিনি মিডিয়াতে নিজের প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। আজ থেকে তার পথের কাঁটা সরে গেল। দোয়া রইল তার জন্য। উনি যেন সুপারস্টার হন তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ুক চারিদিকে এই কামনাই করি। যদি কখনো কাউকে কোনো প্রকার কষ্ট দিয়ে থাকি তার জন্য স্যরি। ক্ষমা করে দিবেন সবাই। শেষ কথা হচ্ছে আমার জন্য কেউ যেন কাউকে দোষারোপ না করে। আমি যা করেছি আমি আমার নিজের চিন্তা ভাবনায় করেছি। আল্লাহ হাফেজ। ভালো থেকো দুনিয়ার মানুষেরা।’

এরপরই রাত সাড়ে ১০টার দিকে আত্মহত্যা করে ফাহিম। এর আগে ২৫ মার্চ রাত ১০টা ৪৩ মিনিটে কালো ব্যাকগ্রাউন্ড খচিত অপর এক ছোট্ট স্ট্যাটাসে ফাহিম লেখেন, ‘প্রিয় কষ্ট, চল আমরা দু’জনে মিলে আত্মহত্যা করি।’

Print Friendly

Related Posts