বইয়ের সাথে সখ্য তার

সাগর জামান
বাবলু বিশ্বাস পেশায় একজন নরসুন্দর। মাগুরা শহরের কলেজ রোডে তার সেলুন। বই পড়া তার প্রিয় শখ। বলা যায় বইয়ের সাথে তার অটুট সখ্য।  শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাবলুর প্রিয় লেখক। প্রচুর বই পড়েছেন তিনি। অব্যাহত ভাবে এখনো পড়ে যাচ্ছেন। শরৎচন্দ্রের সবগুলো প্রকাশিত গ্রন্থ তিনি পাঠ করেছেন।
ক্ষৌরকর্মের ব্যস্ততার ভেতর কখনো অবসর মিললে বাবলু বইয়ে নিমগ্ন হন। বই কিনে পড়েন। পড়া শেষ হলে অন্যকে পড়তে দেন । স্বল্প আয়ের এই বই অনুরাগী মানুষটি অর্থের অভাবে অনেক সময় বাকিতে বই কেনেন। বই ব্যবসায়ীর সাথে যুক্তি করে  বই ব্যবসায়ীর চুল ছেঁটে গোঁফদাড়ি কামিয়ে বইয়ের টাকা পরিশোধ করেন । এভাবে তিনি বই কেনেন কখনো বাকিতে কখনো নগদে।
শুধু এই নয়, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি বই উপহার দেন। তিনি বই জমিয়ে রাখেন না,ছড়িয়ে দেন অনেকের মাঝে। কেবল চিত্তবিনোদনের জন্য নয়,  তিনি বই পড়েন জ্ঞানসাধনার জন্য। অজ্ঞতা দূর করার জন্য। পাশাপাশি সাহিত্যের সুমিষ্ট শিল্প স্বাদের নির্মল আনন্দলাভের জন্য।   তিনি বই পড়েন উন্নত জীবনদর্শনের বোধে উদ্দীপ্ত হতে।
বই মানুষের ন্যায়-অন্যায় বোধকে জাগ্রত করে। তিনি প্রচুর বই পড়েছেন। এ থেকে  তিনি এই ধারণা লাভ করেছেন। আর  মানুষকে চিনতে শিখেছেন বই পড়ে। বই পড়ার মাধ্যমে গল্প উপন্যাসের অনেক চরিত্রের সাথে  পরিচিত হয়েছন। বাস্তবে সেরকম চরিত্রের সন্ধান পেয়েছেন । ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য  বই পড়ে উপলব্ধি করতে পেরেছেন তিনি।
তার যাপিত জীবনের নানা সংকট  অর্থাভাবের কষ্ট  অসহায়ত্ব এই সবকিছুর মধ্যদিয়ে তিনি বই পড়েন।  বই তাকে উজ্জীবিত করে। সাহস যোগায়। বই পড়ে বাবলু বুঝতে পেরেছেন মানুষকে শিক্ষা অর্জন করতে হবে অপরিহার্যভাবে। তার এই বোধ থেকে তিনি ছেলে শাওন বিশ্বাস ও কন্যা সোমা বিশ্বাসকে লেখাপড়া করাচ্ছেন । প্রাণান্ত পরিশ্রম করছেন ওদের লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করতে।
বই পড়ুয়া বাবলু বিশ্বাসের মতো মানুষেরা এখন হারিয়ে যাচ্ছে।   প্রযুক্তি নির্ভর সভ্যতার প্রভাবে বই পড়ার অভ্যাস কমে যাচ্ছে। সব প্রযুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে তার সুফল গ্রহণ করাটা যেমন জরুরি। তেমনি বাবলুর মতো বই পড়ার উৎকৃষ্ট অভ্যাস ধরে রাখাটাও প্রয়োজন। কারণ ভাবনার জগতকে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করতে পারে একমাত্র বইই।  বইয়ের কোনো বিকল্প নেই।
মানুষ ক্রমাগত হিংস্র হয়ে যাচ্ছে। নৈতিক চরিত্রের গুণাবলি হারিয়ে ফেলছে।  হিংসা বিদ্বেষ মানুষের ভেতর বাসা বেঁধেছে। কেবল প্রতিহিংসায় জড়িয়ে পড়ছে সবাই। বিনোদন মানে টেলিভিশন আর ফেসবুকের মধ্যে  সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এই অবস্থার জন্য অনেকাংশে  মানুষের বই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়াকে দায়ি করা যায়। মানুষের অভ্যাসগত পরিবর্তন মানুষের ভেতর ককপটতা এনে দিয়েছে, প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার মানুষের  ক্ষতিবৃদ্ধি করছে।  মানুষ ভোগ বিলাসিতায় মশগুল হয়ে পড়েছে। অর্থ আর ক্ষমতার মোহে ছুটছে সবাই । চেতনা ও চিন্তার বদল ঘটেছে। সুস্থ ভাবনা থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। বই মানুষকে  উচ্চতর ভাবনায় ভুবনে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।বই  বোধের উৎকর্ষসাধন করে।
বই প্রণয়ী বাবলুর জন্য নিরন্তর শুভেচ্ছা জানাই ।
Print Friendly

Related Posts