বজ্রপাতে দুইদিনে ৩০ জনের মৃত্যু

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে দুইদিনে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার মাগুরা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রাঙামাটি, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গাজীপুরে বজ্রপাতে ১৮ জন নিহত হয়েছে। বজ্রপাতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৮ জন। সোমবার বৈরী আবহাওয়ায় বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে; আহত হয়েছেন আরও অন্তত সাতজন।

মাগুরা সদরের অক্কুর পাড়া ও রায় গ্রাম এবং শালিখা উপজেলার বুনাগাতী ও বাকলবাড়িয়া গ্রামে বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন অক্কুর পাড়ার ভ্যানচালক শামীম, রায় গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে আলম, জয়পুরহাটের মনপুরা এলাকার আলম মিয়ার ছেলে মেহেদী এবং বাকলবাড়িয়া গ্রামের শক্তিপদ বিশ্বাসের ছেলে প্রল্লাদ বিশ্বাস (৪০)।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, কামারখন্দ ও শাহজাদপুর উপজেলায় বজ্রপাতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও চারজন। নিহতরা হলেন, কাজিপুরের ডিগ্রি তেকানী গ্রামের শামছুল মন্ডল (৫৫), তার ছেলে আরমান (১৪), কামারখন্দের পেস্তক কুড়া গ্রামের কাদের হোসেন (৩৭), শাহজাদপুর উপজেলা ছয়আনি গ্রামের ফারুক খানের ছেলে নাবিল (১৭) ও রাশেদুল ইসলামের ছেলে পলিন (১৫)।

নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় এক গৃহবধূ ও এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সাপাহারে সোনাভানের স্বামীসহ আরও তিনজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন সাপাহারের শিমুলডাঙ্গা রামাশ্রম গ্রামের সোনাভান (২২) এবং পোরশার বা‌লিয়াচান্দা গ্রা‌মের মুক্তার হোসেন (১৪)।

সুনামগঞ্জ সদরের সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে নিহত হয়েছেন ললিত মিয়া (৩০) নামের এক কৃষক। রোববার বেলা সাড়ে ১০টায় বাড়ির পাশে বোরো ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে নিহত হন গৃহবধূ মানছুরা বেগম (৩৫)। ঘরের বাইরে কাজ করার সময় দুপুর ১টার দিকে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।

নোয়াখালী সদর ও সেনবাগ উপজেলায় বজ্রপাতে এক স্কুল ছাত্র ও এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও দুইজন। নিহতরা হলেন সদর উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের সোহেল রানা জগলুর ছেলে ও নোয়াখালী জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির দিবা ক-শাখার ছাত্র ইকবাল হাসনাত পিয়াল (১৩) এবং ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর গ্রামের মো. রজন মিয়ার ছেলে মো. শাহিন (২৬)।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও শ্রীপুরে বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত পাঁচজন। নিহতরা হলেন গাইবান্ধার গোবিন্ধগঞ্জ উপজেলার হরিনাথপুরের আব্বাস আলীর ছেলে জাফিরুল ইসলাম (২৮) ও গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের ধলাদিয়া গ্রামের কালু কবিরাজের স্ত্রী বিলকিস বেগম (৪৩)।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় বজ্রপাতে আব্দুর রহিম (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দুইজন।

সোমবার বৈরী আবহাওয়ায় বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে; আহত হয়েছেন আরও অন্তত সাতজন। তাদের মধ্যে চারজনই নারায়ণগঞ্জের। জামালপুর ও মৌলভীবাজার জেলায় মারা গেছেন দুইজন করে। মৌলভীবাজারের একজন ওমানে চাকরি করতেন। সম্প্রতি তিনি ছুটিতে দেশে আসেন। সোমবার দুপুরে ঝড়ের সময় বজ্রপাত হলে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের অধিকাংশ ঝড়-বৃষ্টির সময় ক্ষেতে ধান কাটছিলেন।

নারায়ণগঞ্জে মারা গেছেন এক কিশোরসহ ৪ জন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে পৃথক দুটি স্থানে ব্রজপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও একজন। সোমবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের টাওড়া গ্রামের নূরুল হকের ছেলে কৃষক রফিকুল ইসলাম (৩৪) ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মারা যান। তার সঙ্গে থাকা কামাল মোল্লার ছেলে হাশেম মোল্লা (৪০) গুরুতর আহত হন। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রফিকুন নাহার বলেন, বজ্রপাতে আহত হাশেম মোল্লাকে গুরুতর অবস্থায় এলাকাবাসী নিয়ে এলে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। এছাড়া একই সময় উপজেলার তারাব পৌরসভার তেতলাব গ্রামের কিশোর ফরহাদ (১৫) বিলে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে মারা যায়। অন্যদিকে দুপুরে সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের মুছারচর এলাকায় ধান কাটার সময় ব্রজপাতে ওবায়দুল ইসলাম (৩২) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়। আহত হন সাদেক (৫৫) নামের অপর এক কৃষক।

মৌলভীবাজারে মাবা গেছেন প্রবাসীসহ ২ জন। নিহত ২ জনের মধ্যে একজন ওমানে চাকরি করতেন। সম্প্রতি তিনি ছুটিতে দেশে আসেন। এছাড়া এ জেলায় আহত হয়েছেন আরও চারজন। সোমবার বেলা ১২টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাখাইছড়া চা-বাগানে পাশে আনারস বাগানে কাজ করার সময় বজ্রপাত হয়। এতে আহত হন কিশোর গোয়ালা (২০), দিপেন সবর (২৫), রাখাল সবর (২৭) রিপন ভুঁইয়া (১৮) ও অজয় গোয়ালা (২২)। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রিপন ও অজয় গোয়ালাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানোর সময় রাস্তায় অজয় মারা যান। এছাড়া কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের উত্তরভাগ গ্রামের হাজী আব্দুল মতলিবের ছেলে তমিজ উদ্দীন (২৫) বজ্রপাতে মারা গেছেন। তমিজ মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে চাকরি করতেন। কিছুদিন আগে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। সোমবার বেলা ১২টার দিকে মাঠ থেকে গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। একই সঙ্গে তার চাটি গরুও মারা যায়।

জামালপুরের মারা গেছেন ২ জন। নিহতরা হলেন – ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের দক্ষিণ চিনাডুলি গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের ছেলে বকুল মিয়া (২২) ও সরিষাবাড়ি উপজেলার শিবপুর গ্রামের আলেপ উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩৬)।

সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় মারা গেছেন ১ জন। নিহত ইয়াহিয়া আহমদ (৪২) সি‌লে‌টের কানাইঘাট উপজেলার রায়পুর গ্রামের ইলিয়াছ আলীর ছেলে। কিছুদিন আগে ধান কাটার কাজে কানাইঘাট থে‌কে দ‌ক্ষিণ সুনামগঞ্জ আসেন তিনি।
রাজবাড়ীতের বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ঝাউগ্রামে মতিন শেখ নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়।

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় মারা গেছেন শামসুল হক (৩৮) নামে ১ জন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বজ্রপাতের এ ঘটনা ঘটে।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পল্টন ঘাটে বজ্রপাত হলে একজন মারা যান।

 

Print Friendly

Related Posts