বাংলাদেশ ৩ বছরের জন্য ওপিসিডব্লিউ’র নির্বাহী পরিষদের সদস্য

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ আগামী ২০১৯-২০২১ মেয়াদে তিন বছরের জন্য রাসায়নিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ সংস্থা -ওপিসিডব্লিউ -এর নির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গত ১৯ নভেম্বর সংস্থাটির সদস্য রাষ্ট্রসমূহের ২৩তম অধিবেশনে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ নির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। বাংলাদেশ সর্বসম্মতিক্রমে এ অধিবেশনের ভাইস-চেয়ারপার্সনও নির্বাচিত হয়েছে।

ওপিসিডব্লিউ -এর নির্বাহী পরিষদের ২০১৯-২০২১ মেয়াদের জন্য এশিয়া গ্রুপ থেকে বাংলাদেশসহ ৬টি দেশ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।

রাসায়নিক অস্ত্র নীরস্ত্রীকরণ সংস্থা বা ওপিসিডব্লিউ (Organisation for the Prohibition of Chemical Weapons) একটি আন্তঃসরকারী সংস্থা। এটির সদর দফতর নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত।

অস্ত্র ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র নীরস্ত্রীকরণ করাই এ সংস্থার প্রধান কাজ। এছাড়াও সংস্থাটি রাসায়নিক অস্ত্র সংক্রান্ত সম্মেলনের আয়োজন করে। এটি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ ও প্রয়োজনে অস্ত্রগুলো ধ্বংসের ব্যবস্থা করে থাকে। সদস্যভূক্ত রাষ্ট্রসমূহের অস্ত্র ব্যবহার না করার ঘোষণা ও পরিদর্শক দলের প্রতিবেদনের নিশ্চয়তা – উভয়ের মাঝে সমন্বয় সাধন করে।

ওপিসিডব্লিউর জন্ম: বিশ্বে রাসায়নিক অস্ত্র পুরোপুরি ধ্বংসের প্রথম আন্তর্জাতিক চুক্তি রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন (সিডব্লিউসি)। এ কনভেনশন বাস্তবায়নে নব্বইয়ের দশক থেকে কাজ শুরু করে ওপিসিডব্লিউ। সংস্থাটি সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রে আসে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের কাজ শুরু করার পর।

সিডব্লিউসি চুক্তিটি কী ও ওপিসিডব্লিউর সদস্য কারা: সিডব্লিউসি চুক্তিতে রাসায়নিক অস্ত্রের উৎপাদন, মজুতকরণ, হস্তান্তর বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে এটা কার্যকর হয়। ১৮৯টি দেশ এ কনভেনশনে সমর্থন দিয়েছে। এর মধ্যে আলবেনিয়া, ভারত, ইরাক, লিবিয়া, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের কাছে রাসায়নিক অস্ত্র থাকার বিষয়টি স্বীকার করে।

দক্ষিণ কোরিয়া রাসায়নিক অস্ত্র থাকার বিষয়টি স্বীকার না করলেও ওপিসিডব্লিউ মনে করে, এ দেশটির কাছেও রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে। সিরিয়া সম্প্রতি তার কাছে রাসায়নিক অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করেছে। এসব অস্ত্র ধ্বংসের লক্ষ্যে সোমবার এ কনভেনশনের সদস্য হতে যাচ্ছে দেশটি। কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি উত্তর কোরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, মিসর ও দক্ষিণ সুদান। ইসরায়েল ও মিয়ানমার কনভেনশনে স্বাক্ষর করলেও চূড়ান্ত অনুমোদন করেনি।

ওপিসিডব্লিউ কী করে: ৮৬টি দেশে ওপিসিডব্লিউর পাঁচ হাজারের বেশি পরিদর্শক কাজ করেছে। সংস্থাটি বলছে, ঘোষিত মজুত থাকা শত ভাগ রাসায়নিক অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। আর এর মধ্যে ৮১ দশমিক ১ শতাংশ ধ্বংস করা হয়েছে। আলবেনিয়া ও ভারত তাদের ঘোষণা দেওয়া অস্ত্রের মজুত পুরোপুরি ধ্বংস করেছে। দক্ষিণ কোরিয়াও একই কাজ করেছে বলে মনে করা হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে ওপিসিডব্লিউর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র তার মজুতের ৯০ শতাংশ, রাশিয়া ৭০ ও লিবিয়া ৫১ শতাংশ ধ্বংস করেছে।

ওপিসিডব্লিউর সদস্য ১৩টি দেশ তাদের মোট ৭০টি রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদন স্থাপনার কথা স্বীকার করে। এগুলো একটি কমিশনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। ওপিসিডব্লিউ বলছে, ইতিমধ্যে ৪৩টি স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। ২১টি স্থাপনা শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য রূপান্তর করা হয়েছে।

ওপিসিডব্লিউ কারা পরিচালনা করে: সদস্যদের দেওয়া তহবিল দিয়ে ওপিসিডব্লিউ পরিচালিত হয়। ২০১১ সালে সংস্থাটির বাজেট ছিল ১০ কোটি মার্কিন ডলার। নেদারল্যান্ডসে সংস্থাটির ৫০০ বিজ্ঞানী কাজ করেন।

২০১৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ কার্যক্রমে যুক্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা দি অর্গানাইজেশন ফর দ্য কেমিক্যাল ওয়েপনস (ওপিসিডব্লিউ)

Print Friendly

Related Posts