বাংলাবাজারকে ফাতেমা খানম উপজেলা ষোষণা এখন সময়ের দাবী

নজরুল হক অনু

ভোলা সদর ও দৌলতখান উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি জনপদ বাংলাবাজার। এক সময়ের নিভৃত এই গ্রামটি সময়ের প্রয়োজনে আজ উপ-শহর। মূলত বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এর হাত ধরেই উপ-শহরটির পত্তন। ১৯৯৭ সালে বাংলাবাজার ফাতেমা খানম ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে উপ-শহর হিসাবে বাংলাবাজারের আত্মপ্রকাশ। তারপর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়, বাংলাবাজার ফাতেমা খানম শিশু পরিবার, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ফাতেমা খানম বৃদ্ধাশ্রম, ফাতেমা খানম জামে মসজিদ এবং স্বাধীনতা যাদুঘরসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কারণে বাংলাবাজার আজ জৌলুশে ভরপুর।

এছাড়া ফাতেমা খানম প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফাতেমা খানম উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, সাব রেজিস্টার অফিস, গ্রোথ সেন্টার, হাট বাজার, ব্যাংক বীমা, হোটেল রেস্তোরা, ক্লিনিক, বহুতল বাণিজ্যিক মার্কেট, ইলেট্রনিক্স সামগ্রীর শো-রুম, উন্নত ফার্ণিচার ও টাইলসের দোকান থেকে শুরু করে সবই আছে বাংলাবাজারে।

সম্প্রতি বাগমারা ব্রীজ হওয়ার কারণে ভেলুমিয়ার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ মাধ্যম তৈরী হয়েছে। সামনের দিকে বাউফল পটুয়াখালী ও বরিশালের সঙ্গে আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ তৈরী হলে এই এলাকার গুরুত্ব কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। এছাড়া দৌলতখান উপজেলাসহ লক্ষ্মীপুরের আলেকজ্যান্ডার যাতায়াতেরও প্রবেশ দ্বার বাংলাবাজার। সব মিলিয়ে ভোলার আর দশটি বাজারের মধ্যে বাংলাবাজারের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী। এখানকার বৃহদাকারের সড়ক এবং শোভনীয় অট্টালিকাগুলো দেখলে যে কোন লোকের নজর কাড়ে। এলাকাটিকে একটি উন্নত শহরের মত মনে হয়। এমনকি ভোলা শহরের অনেক এলাকার তুলনায়ও বাংলাবাজার অনেক আকর্ষণীয়। বিশেষ করে ফাতেমা খানম মসজিদ দেখলে মনে হয় মোঘল স্থাপত্য। এতে বাগদাদীয় একটি অনুভূতিও জাগে মনে। স্বাধীনতা জাদুঘর ও বৃদ্ধাশ্রম দেখলে মনে হয় ঢাকার কোন এলাকা।

এছাড়া এখানে ফাতেমা খানম মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে যা সম্পন্ন হলে বাংলা বাজারের গুরুত্ব আরো অনেক অনেক বেড়ে যাবে। মেডিক্যাল কলেজকে কেন্দ্র করে বাংলাবাজার চিকিৎসা সেবার কেন্দ্রবিন্দু হবে। বহু ডাক্তার ও ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণায় বাংলাবাজার ফিরে পাবে নতুন একরূপ। ফাতেমা খানম ডিগ্রী কলেজটিও বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা স্বাস্থ্য, পর্যটন ঐতিহ্য, ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটতে যাচ্ছে বাংলাবাজারে। এখানে একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রও আছে।

দেশের অনেক উপজেলা শহরের তুলনায় বাংলাবাজার অনেকটাই চাকচিক্য এবং উৎসব মূখর। এমনকি ভোলার মনপুরা, তজুমুদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলা শহরের চেয়েও বাংলাবাজারের সৌন্দর্য যে কোন মানুষকে আকর্ষণ করে। গত ২০ বছরে বাংলাবাজার উপ-শহর থেকে শহরে পরিণত হয়েছে। কিন্তু শহরের মর্যাদা পায়নি। পৌরসভা গঠিত হলে এটি আর বাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেনা। শহরে পরিণত হবে। তাই বাংলাবাজারকে একটি পৌরসভায় রূপান্তরীত করে একজন পৌর পিতার হাতে তুলে দিলে শহরটিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। পৌরকর এবং সরকারী বরাদ্দ ও অনুদান আর দশটি উন্নত শহরের মতো বাংলা বাজারকেও আধুনিক শহরে রূপান্তরীত করবে। যেমনটি করেছে নোয়াখালীর চৌমুহনীকে। ভৌগলিক বিবেচনায় নোয়াখালির চৌমুহনী আর ভোলার বাংলাবাজার একই। সেক্ষেত্রে দ্রুত বাংলাবাজারকে পৌরসভা করে চৌমুহনীর আদলে গড়ে তোলা জরুরী। তবে শুধু পৌরসভা নয়, বাংলাবাজার এবং তার আশ-পাশ এলাকার গুরুত্বকে বিবেচনা করে এটিকে একটি উপজেলায় রূপান্তরীত করা দরকার এবং এটি বিচ্ছিন্ন কোন দাবী নয়, গোটা ভোলাবাসীর প্রাণের দাবী।

আগেই বলেছিলাম চৌমুহনীর কথা। চৌমুহনী শহরকে কেন্দ্র করে বেগমগঞ্জ উপজেলা গড়ে উঠেছে এবং সেই উপজেলা শহরটি কিংবা চৌমুহনী শহরটি অনেক বড় একটি শহর। বাংলাবাজারে উপজেলা শহর করা হলে সেটিও অনেক বড় শহরে পরিণত হতে পারে। বাংলাবাজার থেকে বাগমারা ব্রীজ পর্যন্ত এলাকায় এবং দৌলতখান সড়ক জুড়ে শিল্পায়ন করার পাশাপাশি গুইংগারহাট ও খায়ের হাটের রাস্তার মাথা আজাদ নগর পর্যন্ত শহুরে কার্যক্রম ছড়িয়ে দিলে অদূর ভবিষতে এই জনপদের চেহারা পাল্টে যাবে। এ শহরটি ভোলার আর পাঁচটি অর্থাৎ ভোলা, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশনের চেয়েও আকর্ষণীয় একটি শহর হতে পারে। কেননা এসব শহরগুলো মানুষের পদচারণায় গড়ে উঠেছে। পরিকল্পনা মাফিক গড়ে ওঠেনি।

বাংলাবাজারকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা গেলে এসব শহরকে সহজেই ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর সেই দূরদর্শী-চিন্তা নিয়ে এখন থেকেই যদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাহলে বাংলাবাজারকে যে ভোলার প্রধান আকর্ষণ হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব তাতে কোন সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যেই বাংলাবাজার ও তার আশ-পাশে ২০ হাজার মানুষ এসে বসতি গড়ে তুলেছে। যাদের নাগরিক সুবিধা দিচ্ছে উত্তর জয়নগর ও দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদ। তাদের আর্থিক সক্ষমতা ও কারিগরী দক্ষতা বিপুল সংখ্যক এই জনগোষ্ঠীর জন্য যথেষ্ট নয়। সে বিবেচনায়ও বাংলাবাজারকে দ্রুত পৌরসভা করা দরকার। আর পৌরসভা এবং আশ-পাশের এলাকা নিয়ে একটি উপজেলা গঠন জরুরী। যে উপজেলা শুধু এই এলাকা নয় গোটা জেলার চিত্রই পাল্টে দেবে।

টনিরহাট থেকে বাংলাবাজার

পাকিস্তান আমলে বাংলাবাজার ছিল টনিরহাট। বাংলাবাজারের টনি পরিবারের নামেই ছিল এর নাম। ঐ পরিবারের সদস্য মোহাম্মদ আলী টনি যিনি ছিলেন ভয়ংকর প্রতারক ও দুর্ধর্ষ এক রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের বড় একটি দলকে তিনি দাওয়াত করে খাওয়ানোর কথা বলে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেন। এসময় পাক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে বহু মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারান। যুদ্ধ পরবর্তীকালে এদেশের মুক্তিকামী জনতা মোহাম্মদ আলী টনিকে ভোলায় এনে প্রকাশ্যে শাস্তি দিয়ে হত্যা করে সেদিনের জবাব দেন। যে টনির কারণে টনিরহাটের মাটি অপবিত্র হয়েছিলো, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে লাল হয়েছিলো, স্বাধীনতার পর এ দেশের মানুষ সেই কুখ্যাত রাজাকার টনি পরিবারের নাম মুছে দিয়ে এই এলাকার নামকরণ করেছেন বাংলা বাজার।

আজকের বাণিজ্যমন্ত্রী তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং সাবেক ছাত্রনেতা, বঙ্গবন্ধুকে উপাধি দেয়া হয় যার হাত ধরে, যিনি আইয়ূব সরকারের পতন ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করেন সেই তোফায়েল আহমেদ এর জনপ্রিয়তা তখনও আকাশচুম্বী। তার ইমেজ শুধু এ অঞ্চলে নয় গোটা দেশেই অভাবনীয়। তখন তিনি জাতীয় পরিষদেরও সম্মানিত সদস্য। স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য এবং রাজনৈতিক সচিব। তোফায়েল আহমেদ এর সমতুল্য তখনও কেউ নেই। ২৭ বছরের যুবক তোফায়েল আহমেদ তখনও এককভাবে ভোলার আবাল বৃদ্ধ বণিতার প্রাণের নেতা। তার প্রতি ভোলার মানুষের ভালোবাসারও শেষ নেই। ভোলাবাসী ভালেবেসে টনিরহাটের নাম “ তোফায়েল নগর” রাখার প্রস্তাব করেছিলেন কিন্তু তোফায়েল আহমেদ তাতে সম্মত হননি। তিনি নিজের নামের অর্থাৎ তোফায়েল নগর প্রস্তাব প্রত্যাখান করে টনিরহাটের নাম রাখেন বাংলাবাজার। বাংলাবাজারে তিনি থাকার জন্য একটি বাড়ী তৈরী করেছেন।মৃত্যুর পর যেন তার সমাধি এই বাংলাবাজারে হয় সেই ঘোষণা দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন বাংলাবাজারের প্রতি তার ভালোবাসা কতো গভীর।

এখানে দুটি বিষয় খুবই উল্লেখযোগ্য। একটি হলো, আজকের বাংলাবাজার যার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত তার নামকরণও করেন তিনি নিজেই। গত ৪৭ বছর তিনি তিলে তিলে এই বাংলাবাজারকে গড়ে তুলেছেন। অন্যটি হলো যে এলাকাটি তার নামে হলে বাংলাদেশ যত দিন বেঁচে থাকবে ততদিন এই এলাকাটি বেঁচে থাকতো এবং তার নাম প্রচার হতো। কিন্তু তিনি সেটিতে রাজি হলেন না। নিজের নামটি নিজেই সরিয়ে নিলেন। এটি বিরল একটি উদাহরণ। দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকার নাম নিজের নামে না করে তিনি যে ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়েছেন তার মূল্যায়ন কি আমরা কখনো করেছি? আমরা কি বিষয়টি নিয়ে কখনো ভেবেছি? আজকের প্রজন্ম কি তোফায়েল আহমেদ এর এই মহানুভবতার কথা জানে? কেউ কি তাদেরকে এসব বলে?

শুধু কি তাই, আওয়ামীলীগের দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষমতায় আসার পর ৯৬’র সরকার আমলে ভোলার প্রাণকেন্দ্রে যে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়, সবাই চেয়েছিলেন সেই কলেজটির নাম হোক তোফায়েল আহমেদ কলেজ। কিন্তু তিনি তাতে সম্মত হননি। বরং তার পরম স্নেহের সহকর্মীর নামে কলেজটির নাম করণ করেন। যেটি এখন ওবায়দুল হক কলেজ নামে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাবাজারের নাম তোফায়েল নগর হতে পারতো। ওবায়দুল হক কলেজের নাম তোফায়েল আহমেদ কলেজ হতে পারতো। তোফায়েল আহমেদ চাইলে এমন হাজারো প্রতিষ্ঠানের নাম হতে পারতো। কিন্তু তিনি তা চাননি বরং যারা চেয়েছিলেন তাদেরকে তিনি বিরত রেখেছেন। তোফায়েল আহমেদ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন তার জীবদ্দশায় তিনি নিজের নামে কিছু করবেন না। কেউ করলেও সম্মত হবেন না। অথচ আজকের এই সমাজে কত মানুষ নিজের নামে কত কিছু করে বেড়াচ্ছেন। নিজের নাম জাহির করার জন্য হুমড়ী খেয়ে পড়ছেন। সেক্ষেত্রে নি:সন্দেহেই তোফায়েল আহমেদ ব্যতিক্রম একজন মানুষের নাম। রাজনীতিতেও তিনি পদ পদবী বা মন্ত্রীত্বের জন্য লালায়িত নন। তিনি শুধু আওয়ামীলীগের তোফায়েল নামে পরিচিতি হতে চান। যে কারণে জীবনে কোনদিন দল ত্যাগ করেননি। অবশ্য তিনি সফলও হয়েছেন। তাকে পরিচিত করার ক্ষেত্রে কিংবা তিনি পরিচয় দিতে গিয়ে অন্য কিছু বলার প্রয়োজন হয় না। শুধু তোফায়েল আহমেদ বললেই মানুষ চিনে নেন। কারণ তোফায়েল আহমেদ একজনই এবং তোফায়েল আহমেদ তোফায়েল আহমেদই। তার নামই একটি ব্রান্ড।

শের এ বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তোফায়েল আহমেদ যাদের নামের মাঝেই নিহিত আছে ইতিহাস। এসব নাম শুনলে মানুষকে ব্যাখ্যা করে বলতে হয় না এরা কারা। তেমনি আজ এবং আগামীদিনে যারা শুনবে তোফায়েল আহমেদ এর নাম তাদেরকেও বুঝিয়ে বলতে হবে না। নাম শুনলেই সব বুঝে যাবে চিনে যাবে, জেনে যাবে। তোফায়েল আহমেদ এর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাও তোফায়েল আহমেদ এর মর্যাদা নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত নন।

ফাতেমা খানম উপজেলায় বাঁধা নেই

যে তোফায়েল আহমেদ নিজের নামে কিছু না করে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন, দিয়ে যাচ্ছেন। সেই তোফায়েল আহমেদকে আমরা এবার দেখতে চাই মা ফাতেমা খানমের স্মৃতির মাঝে। আমরা সবাই জানি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মায়ের জন্য জীবন বাজি রেখে নদী সাঁতরে বাড়ী এসেছেন মায়ের নির্দেশে। মায়ের প্রতি ভালোবাসার অনন্য এক উদাহরণ বিদ্যাসাগর। তেমনি মা ভক্ত এক মানুষ তোফায়েল আহমেদ। মায়ের জীবদ্দশায় মায়ের সকল আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। মায়ের অবর্তমানে নানা কাজে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার নিদর্শন রেখে চলছেন তোফায়েল আহমেদ। মায়ের স্মৃতি ধরে রাখার জন্যও অনেক কাজ করেছেন।

বাংলাবাজারে মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ফাতেমা খানম প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফাতেমা খানম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফাতেমা খানম ডিগ্রী কলেজ এবং ফাতেমা খানম জামে মসজিদ, ফাতেমা খানম বৃদ্ধাশ্রম ও ফাতেমা খানম শিশু পরিবার। ফাতেমা খানমের নামে গড়ে ওঠা অসংখ্যা প্রতিষ্ঠানের বাংলা বাজারকে যদি ফাতেমা খানম উপজেলা করা হয় তাহলে নিশ্চয় সঠিকই হবে।
তাই আমরা চাই বাংলাবাজার উপজেলার নাম করণ হোক “ফাতেমা খানম উপজেলা”।

নামকরণের পক্ষে আমাদের যুক্তিগুলো হলো- যে মাটিতে তোফায়েল আহমেদ এর মতো একজন মানুষের জন্ম হয়েছে এবং যে মহিয়সী নারী এমন একজন মানুষকে গর্ভে ধারণ করেছেন। সেই রত্নগর্ভা নারীর নামে এলাকার নাম হবে না তো কার নামে হবে? জনগন স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এই এলাকাটির নামকরণ করতে চেয়েছিলেন “ তোফায়েল নগর” কিন্তু তাতে তোফায়েল আহমেদ রাজি হননি। কিন্তু সেই এলাকাটিকে তার মায়ের নামে করতে বাঁধা কোথায়?

এই এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে ফাতেমা খানম স্কুল এবং ফাতেমা খানম কলেজকে কেন্দ্র করে। মোঘল স্থাপত্যে গড়া ফাতেমা খানম মসজিদও দেশবাসীর জন্য দেখার বিষয়। একটি এলাকার নাম হয় সাধারণত সেই এলাকায় গেলে যে বিষয়টি সবচে বেশী চোখে পড়ে তার ওপর ভিত্তি করে। সেক্ষেত্রে বাংলাবাজার গেলে ফাতেমা খানম স্কুল, ফাতেমা খানম কলেজ, ফাতেমা খানম মসজিদ, ফাতেমা খানম বিশ্ববিদ্যালয়, ফাতেমা খানম বৃদ্ধাশ্রম, ফাতেমা খানম শিশু পরিবারও মাদ্রাসাসহ যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই চোখে পড়বে ফাতেমা খানম এর নাম। সুতরাং ফাতেমা খানম নামটি অধিক গ্রহণযোগ্য।

তাছাড়া বাংলাবাজারের আশপাশে ওতরউদ্দিন, কমর উদ্দিন, বক্সে আলীসহ অসংখ্য ব্যক্তির নামে এলাকা থাকার জলন্ত উদাহরণ রয়েছে। এছাড়া ভোলার অধিকাংশ এলাকাইতো ব্যক্তির নামে। আমাদের ভোলা, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমুদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন, মনপুরা, ভেলুমিয়া, চর ফয়েজুদ্দিন, চর নিজাম, আমিনাবাদ, নুরাবাদ, মুজিবনগর, ওচমানগঞ্জ, আসলামপুর, নজরুল নগর, ওমরপুর, আবদুল্লাহপুর, আবু বকরপুর, চর জহিরুদ্দিন, চর নাসরিন, চর হাসিনা, চর তাজাম্বুলসহ অসংখ্য জনপদের নাম ব্যক্তির নামে। নামকরণের আগে যদি জনমত সংগ্রহ করা হয় তাহলে সবাই ফাতেমা খানম উপজেলা নামকরণের পক্ষেই মতামত দেবে। তাহলে সব মিলিয়ে বাংলাবাজারে ফাতেমা খানম উপজেলা প্রতিষ্ঠা করতে তেমন কোন বাঁধা আছে বলে মনে হয় না। তাই মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয়কে উদ্যোগ গ্রহণের জোর আবেদন করছি। জেলা আওয়ামীলীগ কিংবা জেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি, শ্রীঘ্রই বাংলাবাজারকে ফাতেমা খানম উপজেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।

ভোলা হবে প্রথম শ্রেণির জেলা

একটি কথা সবার নজরে আনতে চাই, ভোলা বি গ্রেডের একটি জেলা। ৮টি উপজেলা হলে ভোলা হবে এ গ্রেডের জেলা। এ গ্রেডের জেলা হলে ভোলায় রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা অনেক বাড়বে। ডিসি আফিস এসপি অফিস, ব্যাংক বীমাসহ বিভিন্ন দফতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বাড়বে। সিনিয়র অফিসারদেরকে ভোলায় পদায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে চরফ্যাশনে নতুন ৩টি থানা হয়েছে কিন্তু উপজেলা হয়নি। যেটা মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয় চাইলেই হতে পারে। সরকারে বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয়ের যে প্রভাব আছে তাকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত ভোলায় আরো একটি উপজেলা হোক এবং ভোলাকে যেহেতু আপনি দেশের শ্রেষ্ঠ একটি জেলা হিসাবে গড়ে তোলতে চান তার অংশ হিসাবে প্রথমেই ভোলায় আরেকটি উপজেলা করে ভোলাকে ৮টি উপজেলা সমৃদ্ধ একটি এ গ্রেডের অর্থাৎ প্রথম শ্রেণির জেলায় উন্নীত করুন। নিশ্চয় এই দাবী অযৌক্তিক কিংবা অসম্ভব কোন দাবী নয়।

প্রস্তাবিত ফাতেমা খানম উপজেলার কাঠামো-
প্রস্তাবিত ফাতেমা খানম উপজেলার কাঠামো এমন হতে পারে ১টি পৌরসভা এবং ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে এটি গঠিত হবে। বাংলা বাজার যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবহ একটি নাম সেহেতু সেই নামটিও থাকতে পারে। তবে সেটি থাকবে বাংলাবাজার পৌরসভা নামে। এছাড়া দৌলতখান উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ জয়নগর এবং ভোলা সদর উপজেলার উত্তর এবং দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নকে ফাতেমা খানম উপজেলায় সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। এতে সবচেয়ে বড় লাভ হবে বাংলা বাজারবাসীর। বর্তমানে বাংলাবাজার ভোলা সদর ও দৌলতখান উপজেলার মধ্যে অবস্থিত। তাতে অনেক কাজে ঝামেলা হয়। আলাদা উপজেলা হলে এই ঝামেলা থাকবে না। এখন বাংলা বাজারে কোন ঘটনা ঘটলে সেটা কোন থানার মধ্যে তা নিয়ে বিরম্বনায় পড়তে হয়। সে কারণেও এটিকে উপজেলা করা দরকার।

বর্তমানে দৌলতখানের নয়টি ইউনিয়ন থেকে উত্তর এবং দক্ষিণ জয়নগর ফাতেমা খানম উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও দৌলতখানে ৭টি ইউনিয়ন থাকে। তজুমুদ্দিন ৫টি এবং মনপুরা ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। তাতে দৌলতখান ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন থাকলে সমস্যা হবে না। উত্তর ও দক্ষিণ দিঘলদী ফাতেমা খানমে চলে গেলেও ভোলায় ১১টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা থাকবে, তাতেও ভোলা তেমন কোন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। যেহেতু বাগমারা ব্রীজ হওয়ায় ভেলুমিয়ার সঙ্গে বাংলাবাজারের যোগাযোগ ভালো হয়ে গেছে সেহেতু ভেলুমিয়াও যদি ফাতেমা খানমে চলে যায় তাহলেও ভোলা সদর উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা থাকে।

অপর দিকে খায়েরহাট তোফায়ের আহমেদের স্মৃতি বিজড়িত এলাকা। ভোলা সদর, দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের কিছু কিছু অংশ নিয়ে খায়েরহাট বাজার। সেখানে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনাও ঝামেলাপূর্ণ। তাই নেতার বাড়ীসহ খায়েরহাটকে আলাদা একটি ইউনিয়ন করে ফাতেমা খানম উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করলে উপজেলাটি যেমন ১টি পৌরসভা এবং ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে শক্তিশালী একটি উপজেলা হয় তেমনি খায়েরহাটের প্রশাসনিক ঝামেলারও অবসান ঘটে। খায়েরহাট হাসপাতালকে ২০ শয্যা থেকে সহজে ৫১ শয্যায় উন্নীত করে ফাতেমা খানম উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র বানানো সহজ।

ফাতেমা খানম উপজেলা হলে এসব এলাকার মানুষ ব্যাপক ভাবে উপকৃত হবে। ভেলুমিয়ার মানুষ উপজেলার কাজে ভোলায় আসলে যে পরিশ্রম হয় বাংলাবাজারে অফিস হলে সহজ হয়। বাস টার্মিনালের পরই দৌলতখান। সেসব এলাকার মানুষদেরও দৌলতখান যেতে কষ্ট হয়। বাংলাবাজার সহজ হয়। দক্ষিণ দিঘলদীর মানুষের জন্যও ভোলা সদরে যোগাযোগ বহু কষ্টের কিন্তু বাংলাবাজার কাছের এবং আরামের। ভোলার সংসদীয় আসনগুলো দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন, লালমোহন-তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন ও মনপুরার মতো ভোলা সদর ও ফাতেমা খানম উপজেলা নিয়ে গঠিত হতে পারে। বাংলাদেশের বহু জেলার নামে কোন মৌজা নেই। যেমন নোয়াখালী, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুরসহ এমন বহু জেলা আছে যে নামে কোন কোন মৌজা নেই সেহেতু ফাতেমা খানম নামে কোন মৌজা না থাকলেও উপজেলা হতে কোন বাঁধা নেই। এমনকি ভোলার অন্যান্য উপজেলা গুলোতেও উপজেলার নামে কোন মৌজা নেই।

তাই মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আমাদের প্রাণের দাবী, স্থানীয় জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলন হিসাবে আপনি দ্রুত বাংলাবাজারকে ফাতেমা খানম উপজেলা ঘোষণার উদ্যোগ গ্রহণ করুন। আপনি জাতীয় নেতা, বাংলাদেশের ইতিহাস, মন্ত্রী সভার সিনিয়র সদস্য, সরকারের কয়েকজন মুরব্বীর মধ্যে অন্যতম। সরকার আপনাকে সম্মান করে, ভালোবাসে, গুরুত্ব দেয়, সচিবরা সকলে আপনার অনুগত, আপনি উদ্যোগ নিলে কেউ দ্বিমত করবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ যাবৎ আপনার সকল আবদার পূরণ করেছেন। ভোলা বরিশাল ব্রীজের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন, নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে ভোলাকে রক্ষা করছেন, শিল্পভিত্তিক কল-কারখানা গড়ে তুলতে সহযোগিতা করছেন, শতভাগ বিদ্যুতের আওতাায় আনছেন ভোলাকে, প্রায় ৫’শত মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতে যাচ্ছে ভোলায়, সারা দেশে যখন গ্যাস সংযোগ বন্ধ তার মধ্যেও আপনি ভোলায় সংযোগের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ভোলাকে দেশের শ্রেষ্ঠ জেলা বানাতে চান আপনি। সিঙ্গাপুরের আদলে গড়ে তুলতে চান প্রিয় ভোলাকে। তাই আপনার জন্য বাংলাবাজারকে ফাতেমা খানম উপজেলা করা কঠিন কোন বিষয় নয়। জনগণ আপনার সঙ্গে আছে, ফাতেমা খানম উপজেলা গঠনে জনমত আপনার পক্ষে আছে, তাই আপনি নির্বাচনের আগেই আমাদেরকে আর দশটি সুসংবাদের মতো এই সংবাদটিও দিন, যে ‘শ্রীঘ্রই বাংলাবাজার ফাতেমা খানম উপজেলা হচ্ছে’।

নজরুল হক অনু : সম্পাদক- দৈনিক দক্ষিণপ্রান্ত

Print Friendly

Related Posts