বাজেট ২০১৮-১৯: প্রাক-আনুষ্ঠানিকতার ফলাফলের অপেক্ষা

মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান

 

বৃহস্পতিবার (৭ জুন) দেশের এযাবত কালের সর্বোচ্চ অংকের বাজেট পেশ হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংগঠন, নেটওয়ার্ক, জোট, বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠন, বিভিন্ন ব্যবসায়িক সমিতি, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন সকলেই যার যার দাবি দাওয়া পেশ করেছে। সরকারের বাজেট প্রনয়নের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ফেব্রুয়রি ২০১৮ থেকেই অর্থ-মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারী পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা পর্যায়ের জনগণের সাথে প্রাক-বাজেট আলোচনা করেছে। এরই মধ্যে গত ১০ মে, অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে প্রাক-বাজেট আলোচনা করেছে, শুনেছেন তাদের চাহিদা এবং বাজেট নিয়ে তাদের ভাবনা।

ফলাফল কি হবে তা বিশ্লেষন থেকে অনুমেয়। তবে অনেকের মতে আলোচনা যে হচ্ছে সেটাই কম কিসের। বিভিন্ন মিডিয়াতে বাজেট সম্পর্কিত নানা শিরোনামে বাজেটের নানা খুটিনাটি বিষয়ে বিভিন্ন লেখালেখি এবং আলোচনা হয়েছে। বাজেট আলোচনা এখন শুধু অর্থনীতিবিদদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বিভিন্ন পেশাজীবি এখন বাজেট নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করছে। নানামুখী জনসচেতনতা তৈরী হচ্ছে।

সমাজের পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জীবন মান পর্যালোচনার মাধ্যমে অর্ন্তভূক্তিমূলক বাজেট প্রনয়নের উপর ইদানিং বেশ জোড় দিয়ে বলা হচ্ছে, যা খুবই যৌক্তিক। যেমন গত ২৭ মে-২০১৮ ‘প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেট ভাবনা’ শিরোনামে একটি বেসরকারী টেলিভিশনে আয়োজিত বিস্তারিত আলোচনায় নীতি নির্ধারকের কাছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সরাসরি তাদের চাহিদার কথা তুলে ধরতে পেরেছে। ৫ মে দৈনিক ইত্তেফাক ও উন্নয়ন সংগঠন ডরপ যৌথভাবে আয়োজন করে “বাজেট ও এসডিজি’। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাজেটের প্রয়োজনীয়তা এবং পানি, স্যানিটেশন খাতকে জনগুরুত্বপূর্ন খাত হিসেবে চিহ্নিত করে সকল বক্তারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর দৃষ্টি অর্জন করে। ১০ মে আয়োজন করা হলো ওয়াটার এইডের নেতৃত্বে দেশের সকল পানীয় জল বিষয়ক সংগঠনের অংশগ্রহণে ন্যায্যতা ভিত্তিক বরাদ্দের দাবী জানানো হয়।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে ওয়াশ বাজেট বরাদ্দ ছিল ৪৯৭৭ কোটি টাকা, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। জনপ্রতি বরাদ্দে জোর দিয়ে আলোচনায় গ্রাম শহরের বৈষম্য দুরীকরণেও বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

শহর-গ্রামীণ দারিদ্র বৈষম্য বিষয়ে নীতি নির্ধারনের দৃষ্টি আকর্ষনে ২৯ জানুয়ারি তে প্রাক-বাজেটের যৌথ আয়োজন করে কনসার্ন ওয়াল্ডওয়াই এবং অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ। বিষয় ছিল জাতীয় বজেট ২০১৮-১৯ দরিদ্রের আশা এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচী, অর্থমন্ত্রী ও সাংসদের উপস্থিতিতে। এছাড়াও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ২৬ মে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১২লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে, যা সরকার ঘোষিত আসছে বাজেটের প্রায় ৩গুন।

দেশে ধনী দরিদ্রের ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে অন্যতম দুর্ভাবনার বিষয় মাথায় রেখে এই বাজেটে প্রস্তাব করা হয়। দরিদ্র মানুষের ৮২ শতাংশ গ্রামে বাস করে। গ্রামে ভূমিহীন, ৪০ ভাগ খানায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ৬০ ভাগ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে কার্যত বঞ্চিত। সমিতি উল্লেখ করে বাজেট তৈরী হয় মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে, যা অর্থ-বিভাগ চুড়ান্ত করে। এ ব্যবস্থায় সৃজনশীল চিন্তার সুযোগ কম। এতে সমস্যা চিহ্নিত করে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌছানো যায় না।

এ অবস্থা নিরসনে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি রাজস্ব কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন। ২৮ মে একশন এইড বাংলাদেশ ও একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দের দাবী জানানো হয়। বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম জলবায়ু পরিবর্তনে আঘাতের শিকার দেশ, সেখানে জাতীয় বাজেটে সুনিদিষ্ট দিক নির্দেশনার দাবি জানানো হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত নিরসনের উদ্যোগ নেয়ার কথা থাকলেও বিশেষ সচেতনতা করা প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য বাজেটের বরাদ্দ গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তুলনায় ১০-১৫ শতাংশ বাড়ানের দাবি জানানো হয়েছে। যেটি চাহিদা নিরূপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনিষ্টিটিউট অব পাবলিক হেল্থ। ২৯ মে ২০১৮ একটি ইংরেজী দৈনিক পত্রিকায় অভিমত ব্যক্ত করেন। পেশাজীবি কোন সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বিষয়ে কোন জোড়ালো দাবি উঠে আসেনি। কৃষি খাতের বাজেট বিষয়ে প্রতিবছরই সরকারের জোড়ালো দৃষ্টি কামনা করা হয়।

সুতরাং গত প্রায় ৫-৬মাস ধরেই এই অর্থবছরের বাজেটকে জনবান্ধব ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষনে প্রাক-বাজেটসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। আমরা আশা করি উন্নয়ন বাজেটে বা এডিপিতে এবারের এই বিষয়গুলো পর্যাপ্ত গুরুত্ব পাবে এবং বাজেট আলোচনায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনে জনগণের বিশেষ সুপারিশ নিয়ে জনবান্ধব বাজেট ২০১৮-১৯ ঘোষিত হবে। গত অর্থবছরের বাজেট ছিল “তৃষ্ণার্ত বাজেট” কারন পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন বাজেটে পর্যাপ্ত জনপ্রতি বাজেট বরাদ্দ হয়নি। আমাদের জোর দাবী এবার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার জন্য পরিকল্পনা কমিশনের বিনিয়োগ কৌশল অনুযায়ী বরাদ্দ হয়।

লেখক : গবেষনা পরিচালক, ডরপ

ইমেইল: research@dorpbd.org

 

Print Friendly

Related Posts