বিএনপি ভোট চেয়ে ব্যর্থ হয়ে ‘ব্লেম গেমে’: শেখ হাসিনা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণের কাছে ভোট চেয়ে ব্যর্থ হয়ে ‘ব্লেম গেমে’ নেমে পড়েছে। বিএনপি যখন দেখলো যে, জনগণের কাছে গিয়ে সাড়া পাচ্ছে না, তখন একটা ব্লেম গেম শুরু করল এবং হাতেনাতেই ধরা পড়ল। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ ছিল, তাই তারা তদন্ত করে বের করতে চাইল, কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে গত ১৭ জুলাই রাজশাহীর সাগরপাড়া এলাকায় রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নির্বাচনী পথসভায় বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে রাহশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

সোমবার সন্ধ্যায় সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একথা বলেন।

রাজশাহীর পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই বিএনপি নেতৃবৃন্দ পরস্পর যোগসাজসে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর একটি অডিও পুলিশের হাতে এসেছে (এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়), যেখানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে কথোপকথনে ঘটনার জন্য নিজ দলের দুই নেতাকে দায়ী করেন। এরপরই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে বলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইখতিয়ার আলম জানান।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, একটা জিনিস আপনারা আজকে লক্ষ্য করেছেন যে, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চলছে। এর মধ্যেই তারা (বিএনপি) অভিযোগ করল যে, তাদের মিছিলে বোমা হামলার। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যখন নির্দেশ দিলাম যে, হামলাকারী যে দলেরই হোক, যেই হোক তাকে যেন গ্রেপ্তার করা হয়। কারণ এটা আমরা চাই না। সবাই স্বাধীনভাবে তাদের নির্বাচন প্রচার চালাবে। আমরা সেই পরিবেশ কিন্তু বজায় রেখেছি।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপির শাসনামলের উল্লেখ করে বলেন, বিএনপির শাসনামলে আমরা দেখেছি যে, কিভাবে আমাদের নির্বাচনের সময় বাধা দেওয়া হতো, আমাদের দলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার, জুলুম করা হতো। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমরা এটাও দেখেছি যে, তারা (বিএনপি) ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুন করতে পারে। আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা- সেটাও আমরা দেখেছি।’

এজন্যই সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটতে পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি তাঁর নির্দেশ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের (বিএনপি) মিছিলে তিনটা ককটেল ফুটল, পরবর্তীতে দেখা গেল তাদের নিজেদেরই ভাষায় বেরিয়ে আসলো, এটা নিজেরাই করেছে। শুধু আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করার জন্য।

সরকার প্রধান বলেন, তারাই ঘটনাটি ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে এবং সেটাকে ব্যাপকভাবে প্রচার করে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, বিএনপির এই অভ্যাসটা আছে- নিজেরাই বোমা মারবে, নিজেরাই গাড়ি ভাঙবে, তারপর অন্যের নাম দেবে। এই মিথ্যাচারে বিএনপির সঙ্গে কেউ পারবে না। তারা একটা নাটক সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়- এটাই তাদের চরিত্র, যোগ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের ওপর দমন-পীড়ন, বোমা ও গ্রেনেড হামলাসহ সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এসএম কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার এবং আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল ইমাম হত্যার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, উনি জেলখানায় খান, দান। বহাল তবিয়তে থাকেন। আর মামলায় হাজিরা দেওয়ার সময়েই অসুস্থ হয়ে যান। এ আরেক নাটক শুরু হয়েছে। যখনই কোর্টের তারিখ পড়ে তখনই তিনি অসুস্থ। নাইকোর দুর্নীতি মামলায় এফবিআইতো বসেই আছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকার প্রধান বলেন, এফবিআইয়ের অফিসার কিনে নিয়ে আমেরিকায় তাঁর  ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার পরিকল্পনাও এফবিআইয়ের তদন্তে ধরা পড়েছে। খালেদা জিয়াকে তাঁর সরকার নয়, বরং এতিমের টাকা আত্মসাৎ করাতেই জেলে যেতে হয়েছে বলেও পুনরোল্লেখ করেন তিনি।

তাঁর সরকারের সময়ে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কাছে তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন করে লাভ নাই। আমরা ছাড়তে পারব না, যতক্ষণ না আদালত তাঁকে ছাড়ে।

শেখ হাসিনা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ১০-১১ বছর আদালতে মামলা চলল, তাদের বাঘা বাঘা আইনজীবীরা সব ব্যর্থ হয়ে গেল এটা প্রমাণ করতে যে, খালেদা জিয়া অর্থ আত্মসাৎ করেন নাই। এখন আমাদের দোষ দিয়ে লাভ কি?

প্রধানমন্ত্রী এদিনের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আরো বলেন, সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করতে হবে। আর ২০১৪ সালের যে নির্বাচনী ইশতেহারের কতটুকু আমরা বাস্তবায়ন করতে পারলাম সেটা পর্যালোচনা করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, তবে আমি এটুকু বলতে পারি, যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম তার চাইতে বেশি কাজ আমরা করেছি। আর আগামীতে বাংলাদেশটাকে আমরা কিভাবে দেখতে চাই তার প্রতিফলন থাকবে আগামী ইশতেহারে।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালনের তাঁর সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন। আর ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হবে। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

Print Friendly

Related Posts