বিনয় এবং শ্রদ্ধায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বিনয় এবং শ্রদ্ধায় আজ জাতি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছে। ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকহানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।

১৯৭১ সালের এ দিনে বিজয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জাতির বীর সন্তানদের জোরপূর্বক তুলে নিয়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিনসহ আরো অনেকে।

পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী জাতিকে মেধাশূন্য করতে তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ রাজধানীর বিভিন্নস্থানের নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরে অমানবিক নির্যাতন শেষে বিভিন্ন বধ্যভূমি বিশেষ করে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের হত্যা করা হয়। এরপর থেকে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এদিন সকাল ৭ টা ৫ মিনিটে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টা ৬ মিনিটে মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি সেখানে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন। মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে নগরীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র এবং উচ্চ পর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজ-খবর নেন। পরে প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর ধানমন্ডিতে যান এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহিদ পরিবারের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগ প্রতিবারের মত এবারও দেশবাসীর সাথে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্য সহকারে এই শোকাবহ দিনটিকে স্মরণ ও পালন করছে।

Print Friendly

Related Posts