বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশার বহিষ্কারাদেশ এবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর।

প্রক্টর জানান, আজ বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটি-ডিবির সভা ছিল। ওই সভায় কবি সুফিয়া কামাল হলের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইফফাত জাহান এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

সুফিয়া কামাল হল সূত্রে জানা যায়, গত ৮, ৯ ও ১০ এপ্রিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সুফিয়া কামাল হল থেকে তিন শতাধিক ছাত্রী অংশ নেন। ১০ এপ্রিল রাতে ওই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা ও তাঁর অনুসারীরা অর্ধশতাধিক ছাত্রীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। এর মধ্যে হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুর্শেদা খানমকেও মারধর ও রক্তাক্ত করে।

তবে ছাত্রলীগের দাবি, ১০ এপ্রিল রাতে এশা, মুর্শেদাসহ আরো কয়েকজন একই রুমে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন পাশে এক মেয়ের চিৎকারে উত্তেজিত হয়ে মুর্শেদা দরজায় লাথি দিলে তাঁর পা কেটে যায়। মুর্শেদার কাটা পায়ের ছবি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দাবি করা হয়, ছাত্রলীগ নেত্রী এশা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন।

এরপর ওই রাতেই সুফিয়া কামাল হলে এশার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগের একাংশসহ সাধারণ ছাত্রীরা। রগ কাটার গুজবে গভীর রাতেই বিভিন্ন হল থেকে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে সুফিয়া কামাল হলের সামনে জড়ো হয়। তারা এশার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। বিক্ষোভের মুখে এশা উপস্থিত ছাত্রীদের উদ্দেশে হ্যান্ড মাইকে বলেন, ‘আমি ভুল করেছি।’

এরপর হলের প্রাধ্যক্ষ ও হাউস টিউটররা অনেক চেষ্টা করেও ছাত্রীদের শান্ত করতে পারেননি। বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা তাদের সামনেই এশার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়।

এদিকে মুর্শেদার রক্তাক্ত ছবি ভাইরাল হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমাতে সেই রাতে এশাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আক্তারুজ্জামানও এশাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন।

এ ব্যাপারে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরই মধ্যে এশার গলায় জুতার মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হয়। ১৩ এপ্রিল এশার বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাঁকে স্বপদে বহাল করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা এশার গলায় একাধিক ফুলের মালা পরিয়ে দেন। এরপর গত ১৬ এপ্রিল কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুর্শেদা খানমসহ ২৪ জন নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় কমিটি।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, গত ১০ এপ্রিল, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।’

Print Friendly

Related Posts