মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রাখার আহবান প্রধানমন্ত্রীর

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দুর্ভোগ অবসানে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রাখতে মুসলিম দেশগুলোর সক্রিয়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা-ওআইসি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, “..জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের মর্যাদা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ওআইসিকে আমি দৃঢ়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

“ইসলামী সম্মেলন সংস্থাকে অবশ্যই মিয়ানমার সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে যাতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা অনুযায়ী তাদের অধিবাসী রোহিঙ্গাদের দেশে নিরাপদে ফেরত নিয়ে যায়।”

গত বছরের অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢল নামে মুসলিম রোহিঙ্গাদের। নিপীড়িত সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আগে থেকে আছে আরও চার লাখের মতো রোহিঙ্গা।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতক সংস্থা ও দেশের চাপে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে গত ডিসেম্বরে চুক্তি করলেও শরণার্থী প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা তাদের উপর চালানো নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা দিয়ে আসছেন। একে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ (সঃ) নিপীড়িত মানবতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কাজেই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি যখন জাতিগত নির্মূলের মুখোমুখি, ওআইসি তখন নিশ্চুপ থাকতে পারে না।

“নিপীড়িত মানবতার জন্য আমরা আমাদের চিত্ত ও সীমান্ত দুই-ই উন্মুক্ত করে দিয়েছি। মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের ব্যথায় ব্যথিত।”

১৯৭৫ সালে ১৫অগাস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর নিজের উদ্বাস্তু হয়ে বিদেশের মাটিতে কাটানোর অভিজ্ঞতাও ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সামনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দুই দিনের সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের ৪০ জন মন্ত্রী ও সহকারী মন্ত্রীসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইতিহাসের এক ‘বিশেষ সন্ধিক্ষণে’ ঢাকায় ইসলামী পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ওআইসির মহাসচিব ইউসুফ এ ওথাইমিন, আইভরি কোস্টের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারসেল আমোন তানোহ, কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। এছাড়া তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ওআইসির বিভিন্ন আঞ্চলিক গ্রুপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

Print Friendly

Related Posts