মুন্সীগঞ্জে প্রকাশককে গুলি করে হত্যা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বিশাকা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী, ব্লগার ও মুক্তমনা লেখক শাহজাহান বাচ্চুকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।  সোমবার ইফতারের আগ মুহূর্তে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কাকালদী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। শাহজাহান বাচ্চুর বাড়ি ওই গ্রামে।

এলাকার কমল কৃষ্ণ পাল জানান, মোটরসাইকেলে করে এসে দুষ্কৃতকারীরা চায়ের দোকানে সামনে এসে শাহজাহান বাচ্চুকে গুলি করে পালিয়ে যায়। বাচ্চু মুক্তমনা লেখক ও ফেসবুকে লেখালেখি করতেন। বিশাকা নামের তাঁর একটি প্রকাশনা রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পূর্ব কাকালদী মুন্সীগঞ্জ-শ্রীনগর সড়কের তিন রাস্তার মোড়ে আনোয়ার হোসেনের ফার্মেসির সামনে বসে কথা বলছিলেন শাজাহান বাচ্চু। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে চারজন লোক এসে তাঁকে ধরে রাস্তায় নিয়ে যায়। তারা লোকজনকে সরে যেতে বলে এবং একটি ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। শাজাহান বাচ্চুকে রাস্তায় এনে তাঁর বুকের ডান পাশে একটি গুলি করে। এ সময় সিরাজদিখান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাসুম ওই রাস্তা দিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে থানার দিকে যাচ্ছিলেন।

এএসআই মাসুম জানান, ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগে একটি বিকট আওয়াজ পান। সামনে গিয়ে দেখেন, একটি লোক পড়ে আছে। প্রথমে ভেবেছিলেন বিদ্যুতের তারে সমস্যা হয়েছে কিনা। পাশের রাস্তা থেকে তাঁকে উদ্দেশ করে কেউ বলে, সালাকে গুলি কর। এমন সময় একজন ব্যাগ থেকে একটি ককটেল ছুড়ে মারে তাঁর দিকে। তিনি দৌড়ে পিছিয়ে যান। তিনি পিস্তল বের করতেই আরেকজন তাঁর দিকে গুলি ছোড়ে। তিনি বসে গুলি করার চেষ্টা করলে বিপরীত রাস্তায় সন্ত্রাসীরা দৌড়ে দুই মোটরসাইকেলে চারজন কেটে পড়ে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হামিদা খানম জানান, শাহজাহান বাচ্চু জেলা কমিউনিস্ট পার্টির আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি একজন মুক্তমনা মানুষ ছিলেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান সার্কেল) আসাদুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দুইটি মোটরসাইকেলে করে চারজন দুর্বৃত্ত ব্লগার ও মুক্তমনা লেখক শাহজাহান বাচ্চুকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। তার লাশ মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বাচ্চুর মেয়ে দূর্বা জাহান সোমবার রাতে ফেইসবুকে এক পোস্টে বলেন, “আমার বাবা শাহজাহান বাচ্চু আজকে মরে গেছে। আমাদের গ্রামে। বাবাকে কারা যেন দুইটা গুলি করে মেরে ফেলেছে।”

পরে তার এক বন্ধু ওই পোস্টের কমেন্টে লিখেছেন, “উনি দোকানে বসেছিলেন। মোটরসাইকেলে করে দুইজন এসে গুলি করে পালিয়ে যায়। দূর্বার মোবাইলে ফোন করে অপরিচিত কেউ ওর বাবার মৃত্যু সংবাদ দেয়। তারপর দূর্বা ওর বাবার নম্বরে ফোন করলে পুলিশ ফোন রিসিভ করে।”

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, বাংলাবাজারের প্রকাশনা সংস্থা বিশাখা প্রকাশনী নিয়মিতভাবে কবিতার বই বের করত। প্রকাশনীটি নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহার মতো প্রখ্যাত কবিদের কাব্যগ্রন্থ বের করত। প্রকাশক হিসেবে সজ্জন ছিলেন বাচ্চু। তবে খুব একটা কথা হতো না তার সাথে।

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ জানান, বিশাখা প্রকাশনী তাদের সমিতির সদস্য ছিল না।

প্রায় তিন বছর আগে আরেক প্রকাশক জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা হয় কুপিয়ে। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের অফিসে খুন হন দীপন, যিনি মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করেছিলেন। ওই বছরেরই ফেব্রুয়ারিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন অভিজিৎ।

অভিজিতের পর ব্লগার নীলাদ্রী নিলয়, অনন্ত বিজয় দাশ ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর বাবুকে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এদের উপর হামলার জন্য জঙ্গিদের সন্দেহ করা হলেও বাচ্চুর উপর কারা হামলা চালিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা কেউ বলতে পারছে না।

Print Friendly

Related Posts