বর্ণাঢ্য ব্যাক্তিত্বের অধিকারী মুস্তাফা নূরউল ইসলাম আর নেই

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ভাষা সংগ্রামী জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম আর নেই। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজের বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।

নূরউল ইসলামের জন্ম ১৯২৭ সালে ১ মে, বগুড়ায়। পাঁচ বছর বয়সে ১৯৩২-৩৩ সালে কলকাতায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের হাতে তার লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে গ্রাজুয়েশনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। পরে লন্ডন ইউনিভার্সিটির প্রাচ্যভাষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র সোয়াস থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেন তিনি।

করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছিল অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলামের হাতে। এরপর রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন তিনি।

মুস্তাফা নূরউল ইসলামের কর্মজীবনের শুরু সাংবাদিকতা দিয়ে, দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রতিবেদক হিসেবে। এরপর ১৯৫১ সালে তিনি সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। দুই বছর পর চলে যান শিক্ষকতায় করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

স্বাধীনতার আগে কয়েক বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন অধ্যাপক নূরউল ইসলাম। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে বাংলা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৭৪ সালে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে যোদ দেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। ১৯৭৫ সালে হন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। তবে সামরিক সরকারের সঙ্গে মতভিন্নতার কারণে বাংলা একাডেমির চাকরি ছেড়ে জাহাঙ্গীরনগরে ফিরে যান। ১৯৯২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার আগে-পরে জাতীয় জাদুঘর পরিচালনা পর্ষদের তিন মেয়াদের চেয়ারম্যান, নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের তিন মেয়াদের সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।

ছাত্রজীবনেই দিনাজপুর-রংপুর অঞ্চলের তেভাগা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির প্রায় প্রতিটি আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে লন্ডনে পিএইচডি করার সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।

৩০টির বেশি প্রবন্ধ সংকলন ও গবেষণা গ্রন্থ রয়েছে অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলামের। তার বইয়ের মধ্যে ‘সমকালে নজরুল ইসলাম’, ‘সাময়িকপত্রে জীবন ও জনমত’, ‘আমার বাংলা’, ‘বাঙালির আত্মপরিচয়’, ‘সেরা সুন্দরম’, ‘পূর্বমেঘ’, ‘আমাদের মাতৃভাষার চেতনা ও ভাষা আন্দোলন’, ‘আবহমান বাংলা’, ‘মুসলিম বাংলা সাহিত্য’, ‘সময়ের মুখ: তাহাদের কথা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

টেলিভিশনে উপস্থাপনার জন্যও অনেকের পরিচিত মুখ ছিলেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। বিটিভিতে ‘মুক্তধারা’ অনুষ্ঠানটি একাধারে ১৫ বছর উপস্থাপনা করেন তিনি।

মুস্তাফা নূরউল ইসলামের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তার মেয়ে আতিয়া ইয়াসমিন ও নন্দিতা ইয়াসমিন এবং ছোট ছেলে রাজন দেশের বাইরে আছেন।

‘সাহিত্যিক’ ও ‘সুন্দরম’ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম সাহিত্যে অবদানের জন্য একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন।

 

Print Friendly

Related Posts