মোশারেফ হোসেন শাজাহানের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী

জুবায়ের চৌধুরী পার্থ, ভোলা: মোশারেফ হোসেন শাজাহান ভোলার সম্ভ্রান্ত তালুকদার পরিবারে ১৯৩৯ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।  বাবা আলতাজের রহমান তালুকদার ও মা মাসুমা খাতুন।

স্থানীয় চরনোয়াবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু। ১৯৬০ সালে তিনি বরিশাল বিএম কলেজ এবং বরিশাল ল কলেজ থেকে স্নাতক ও এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাষ্টার্সে ভর্তি হন কিন্তু ১৯৬৪ সালে রাজনীতিতে যোগ দেয়ার কারণে আর মাষ্টার্স ডিগ্রী নেয়া সম্ভব হয়নি।

কলেজ জীবনে তিনি নাটক, গল্প ও উপন্যাস লিখতেন। মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতেন। একইসাথে বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৬২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘‘ঝরা পালকের গান’’ প্রকাশিত হয়। ১৯৬৪ সালে তার পরবর্তী গ্রন্থ ‘‘নীড় ভাঙ্গা ঝড়’’ প্রকাশিত হয়। এসময় তিনি এবং তার গ্রন্থগুলো ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

১৯৬৭ সালে তিনি বরিশাল বানারীপাড়ার হাতেম আলী মিয়ার দ্বিতীয় কন্যা মেধাবী ছাত্রী ফিরোজা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে ফিরোজা বেগম রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে প্রফেসর পদে উন্নীত হন এবং মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তার স্ত্রীরও বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল।

একজন আলোকিত মানুষ মোশারেফ হোসেন শাজাহান। এক দিকে তিনি সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব, লেখক, সাহ্যিতিক, নাট্যকার সমাজকর্মী , সমাজ সেবক, সাংবাদিক ও ভোলার ১ম মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ছিলেন। ছাত্রাবস্থায়ই রচনা করেন নাটক ‘নীর ভাঙ্গাঁ ঝড়’ সেই নাটকে তিনি নিজেও অভিনয় করেছেন। ভোলা থেকে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের পৃষ্ঠপোষকতায় সেই পাকিস্তান আমলে ‘পাক্ষিক মেঘনা পত্রিকা’ প্রকাশ করেছিলেন। এ পত্রিকাটির কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর উদ্যোগে পাকিস্তান আমলে ১৯৬৮ সালে সর্ব প্রথম ভোলা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ছিলেন, সেই প্রেসক্লাবের সভাপতি ।

১৯৭০ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মত পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ভোলার মুক্তিযোদ্ধারা তার নেতৃত্বে সংগঠিত হয়। অন্য দিকে তিনি দক্ষিন বাংলার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সেই ১৯৬৫ সাল থেকে ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবন তার। ১৯৭৯ সালে তিনি তৃতীয়বারের মতো জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং উপ-মন্ত্রীর মর্যাদায় বৃহত্তর বরিশাল জেলা উন্নয়ন সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৬ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েছিলেন, ১৯৯১ সালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং ২০০১ সালে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

ছোটবেলা থেকেই তিনি মানবিক মূল্যবোধের সাথে সাথে রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক চর্চায় মনোনিবেশ করেন। ২০১২ সালের আজকের দিনে তিনি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Print Friendly

Related Posts