যতদিন ইচ্ছা সাজা দিন, বারবার আসতে পারব না: খালেদা

কারাগারের মূল ফটক দিয়ে ঢুকে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় ডান দিকে ৭ নম্বর কক্ষে সাজানো হয়েছে এই অস্থায়ী আদালতের এজলাস। সেখানে ঢোকার পথে ডান পাশের একটি কক্ষকে বানানো হয়েছে বিচারকের খাস কামরা।

সকালে আদালত কক্ষে গিয়ে দেখা যায় এজলাস লাল কাপড়ে মুড়ে বিচার কাজের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বিচারকের চেয়ারের বাঁ পাশে তৈরি করা হয়েছে আসামির কাঠগড়া, তার সামনে সাদা কাপড়ে মোড়া টি টেবিল আর একটি চেয়ার।

উল্টো দিকে সাক্ষীর কাঠগড়া। আর সামনে প্রসিকিউশনের বসার ব্যবস্থা। আসামিপক্ষের উকিলদের বসার জায়গা হয়েছে বিচারকের মুখোমুখি। আর এজলাসের সামনে পেশকারের বসার জায়গা।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান খাস কামরায় যান। এর পরপরই দুই পুলিশ সদস্য মামলার নথিপত্রে একটি ট্রাঙ্ক পৌঁছে দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সকাল ১০টার দিকেই আদালতকক্ষে হাজির হন। দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল, আবদুল্লাহ আবু, শাহআলম তালুকদারকে আদালতে তাদের নির্ধারিত জায়গায় বসে থাকতে দেখা যায়।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা না এলেও ঢাকা বারের সভাপতি বিএনপিপন্থি আইনজীবী গোলাম মোস্তফা খান আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তার ভাষ্য, পর্যবেক্ষক হিসেবে তিনি আদালতে এসেছেন।

এ মামলার আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানকে আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগেই আসামির কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। সোয়া ১২টার দিকে কারাকক্ষ থেকে প্রধান আসামি খালেদা জিয়াকে নিয়ে আসা হয় আদালত কক্ষে।

খালেদা জিয়াকে আদালত কক্ষে হাজির করার পরপরই বিচারক মামলার কার্যক্রম শুরু করেন। বুধবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে নতুন এই এজলাসে বিচার কার্যক্রম শুরুর পর খালেদা জিয়া নিজের অসুস্থতার কথা তুলে ধরে বিচারককে বলেন, “আপনার যতদিন ইচ্ছা সাজা দিন, আমি এ অবস্থায় বারবার আসতে পারব না। এই আদালতে ন্যায়বিচারও হবে না।”

খালেদা জিয়াসহ এ মামলার তিন আসামিকে এজলাসে হাজির করা হলেও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কেউ না আসায় বিচারের শেষ পর্যায়ে থাকা এ মামলার শুনানি এদিন শুরু করা যায়নি।

আধা ঘণ্টারও কম সময় আদালতের কার্যক্রম চলার পর ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর শুনানির নতুন তারিখ ঠিক করে দেন। যুক্ততর্কের শুনানি শেষ হলেই সোয়া তিন কোটি টাকা আত্মসাতের এ মামলা রায়ের পর্যায়ে যাবে।

আদালতে পুরোটা সময় খালেদা জিয়া ছিলেন হুইল চেয়ারে বসা। তার পরনে ছিল ট্রেডমার্ক গোলাপী শাড়ি, পায়ে সাদা জুতা। বুক থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা ছিল সাদা একটি কাপড়ে।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানি এতদিন চলছিল কারাগারের কয়েকশ গজ দূরে বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কারা অধিদপ্তরের মাঠে বিশেষ এজলাসে।

নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে ‘আদালত’ ঘোষণা করে সেখানেই দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানি করার নির্দেশ দেয়।

এ কারাগারেই আরেকটি ভবনের দোতলার একটি কক্ষে গত সাত মাস ধরে বন্দি রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি একই বিচারক তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন।

এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায়ের পর খালেদা জিয়াকে এক দিনও দাতব্য ট্রাস্ট মামলার শুনানিতে হাজির করা হয়নি। প্রায় প্রতি তারিখেই আদালতকে তার অসুস্থতার কথা জানানো হয়েছে কারাগারের পক্ষ থেকে। ফলে এ মামলায় যুক্তিতর্কের শুনানি আটকে রয়েছে সাত মাস ধরে।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলে আসছিলেন, খালেদা জিয়া ‘অসুস্থতার ভান করছেন’। এ অবস্থায় সরকার কারাগারের ভেতরেই আদালত বসিয়ে বিচার এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে মঙ্গলবার বিকালে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।

সেখানে বলা হয়, “বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার ও সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকে। সেজন্য নিরাপত্তাজনিত কারণে বিশেষ জজ আদালত-৫ নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এর প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হল।

Print Friendly

Related Posts