যেভাবে জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয় হত্যাকাণ্ড

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ রাজধানীর কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের বাড়িতে বসবাসকারী জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয়কে হত্যার ছক তৈরি হয় বেশ অনেক দিন ধরেই। প্রথমে তাঁদের সম্পর্কে সব তথ্য সংগ্রহ করেন হত্যাকারীরা। এরপর নামা হয় কিলিং মিশনে। ঘটনার দিন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন সাতজন। দুজন বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন। ভেতরে ঢোকেন পাঁচজন। কুরিয়ার সার্ভিসের ভুয়া আইডি ও পার্সেল নিয়ে ঢোকেন তাঁরা।

পাঁচজনের মধ্যে তিনজন বাড়িটির সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যান। দুজন গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে আটকে রাখেন। এই দুজনের একজন হলেন আসাদুল্লাহ।

২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের বাড়িতে ঢুকে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও তাঁর বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জুলহাসের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান কলাবাগান থানায় এ মামলা করেন।

ওই মামলায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে আসাদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এ নিয়ে এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

আসাদুল্লাহ (২৫) ওরফে ফকরুল ওরফে ফয়সাল ওরফে জাকির ওরফে সাদিকের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামে। বাবার নাম এমদাদুল হক। বর্তমানে গাজীপুরের টঙ্গীতে মরকুন কবরস্থান গেট এলাকায় থাকছিলেন তিনি।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, আসাদুল্লাহর পরিবার জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর বাবা চুয়াডাঙ্গা জেলার মাধবপুর ইসলামিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি সে সময় জামায়াতে ইসলামীর রুকন ছিলেন। ২০০১ সালে মদনপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে পাস করেন আসাদুল্লাহ। এরপর যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মেকানিক্যাল পড়া শুরু করেন। ২০১৫ সালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেন। ২০১৫ সালের শেষের দিকে সংগঠনে তাঁর নাম দেওয়া হয় ফয়সাল। ২০১৬ সালে ১ জানুয়ারি যশোর থেকে ঢাকার উত্তর বাড্ডায় তাঁকে একটি বাসায় প্রশিক্ষণ দিতে নিয়ে আসা হয়।

মনিরুল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর এই ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিটিটিসি। জুলহাস ও তনয় হত্যাকাণ্ডে ১৩ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁরা সবাই আনসুরাল্লাহ বাংলা টিমের বিভিন্ন সময়ের নেতা ও সদস্য। ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়। তবে হত্যাকাণ্ডে সাতজন অংশ নেন। এঁদের মধ্যে দুজন বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাসার ভেতরে ঢোকেন পাঁচজন। ভুয়া কুরিয়ারের আইডি ও পার্সেল নিয়ে তাঁরা ভেতরে ঢোকেন। আসাদুল্লাহসহ দুজন গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে আটকে রাখেন।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন আরাফাত ওরফে শামস ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ, সায়মন ওরফে শাহরিয়ার এবং আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের। এই তিনজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জুলহাস ও তনয়ের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন সায়মন ও জাবেদ। আরাফাত সরাসরি দুজনকে হত্যায় অংশ নেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন টঙ্গী থেকে বাসে করে ঢাকায় আসেন আসাদুল্লাহ। ঘটনাস্থলে এসে নামাজ আদায় করে কিলিং মিশনে অংশ নেন তিনি।

Print Friendly

Related Posts