রাজধানীর সড়কে সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ক্লাস বন্ধ রেখে ব্যাগ কাঁধে ইউনিফর্ম পরে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে সারাদিন কার্যত অচল থাকে রাজধানীর রাজপথ। ক্রমশ জটিল আকার নিতে থাকা এই আন্দোলনের মধ্যে বুধবারও বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে।

ঢাকায় আন্দোলনরত ছাত্ররা পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গাড়ি থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স দেখতে চেয়েছে পুলিশের সামনেই। লাইসেন্স দেখাতে না পারলে গাড়ির চাবি আটকে রাখে তারা। ধানমণ্ডিতে শিক্ষার্থীদের লাইসেন্স দেখাতে না পারায় পুলিশের একটি গাড়িকে দীর্ঘসময় আটকে থাকতে হয়। একই ধরনের সমস্যায় পড়ে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বেশ কয়েকটি গাড়ি।

বাংলামোটরে উল্টো পথ দিয়ে যাওয়ার সময় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে। মন্ত্রীর সামনেই শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয়-‘আইন সবার জন্য সমান’।

শনির আখড়ায় শিক্ষার্থীদের এড়াতে উল্টোপথ দিয়ে দ্রুত গতিতে যাওয়া একটি পিকআপ এক আন্দোলনকারীকে ধাক্কা দিয়ে যায়। পায়ে আঘাত নিয়ে ওই কলেজছাত্র এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের পাল্টায় নারায়ণগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকরাও সকাল থেকে ছয় ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আটকে রেখে বিক্ষোভ করে। সেখানে রাস্তায় স্কুলছাত্রদের মারধর করার ঘটনাও ঘটে।

সকাল ১০টার পর থেকে নগরীর উত্তরাংশের উত্তরা থেকে দক্ষিণ প্রান্তের শনির আখড়া পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলে। এক পর্যায়ে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয় তাদের সঙ্গে।

তারা স্লোগান দেয়- ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’। শিক্ষার্থীদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা দেখা যায়- ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘বিবেক তুমি কবে ফিরবে’।

বিক্ষোভ থেকে সন্তানকে বাসায় ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকা এক মা বলেন, সরকার কেন এটাকে এখনও সমাধান দিচ্ছে না? সরকার দাবিগুলো মেনে নিক, যাতে আমাদের সন্তানরা দ্রুত বাড়িতে ফিরে যেতে পারে।

ঢাকার রাস্তায় গণ পরিবহন গত দুদিন ধরেই কম ছিল। এর মধ্যে সকালে রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু হলে বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়া যানবাহনের জট দেখা গেলেও দুপুরের পর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়।

আন্দোলনকারীরা অ্যাম্বুলেন্স ও হজযাত্রীদের গাড়িকে ছাড় দিলেও চলতি পথে যানবাহন না পেয়ে সাধারণ মানুষকে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।

সৌভাগ্যবান কেউ কেউ রিকশা বা ভ্যান পেলেও বহু মানুষকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হয়। আর ঢাকা থেকে বের হওয়ার দুই গুরুত্বপূর্ণ পথ উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীর রাস্তা বন্ধ থাকায় দূরপাল্লার যাত্রীরা পড়েন অনিশ্চয়তায়।

Print Friendly

Related Posts