লেগুনা চালক-চা দোকানি-হকার এখন দুর্ধর্ষ ডাকাত

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া সড়কে রাত আটটার পর থেকে লেগুনা চালক, চা দোকানি ও গেঞ্জি ব্যবসায়ীর একটি সংঘবদ্ধ চক্র ডাকাতি ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত।  চক্রের মূল হোতা ইমরান ওরফে ইমুর মাধ্যমেই অধিকাংশরা ডাকাতি ও অপহরণে জড়ায়।

চক্রটি ডাকাতি, অপহরণ, নারী শ্লীলতাহানী, ছিনতাই, গাড়ি চুরিসহ নানা রকমের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। চক্রের সদস্যরা মূলত যাত্রীবেশে বাসে অবস্থান করে এবং সুযোগ বুঝে অন্যান্য যাত্রীদের নগদ অর্থ, মোবাইল ও মূল্যবান সামগ্রী ডাকাতি ও অপহরণ করে থাকে।

বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার রাতে র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অপহরণের প্রস্তুতিকালে নয়জন ডাকাতকে আটক করে।

আটকরা হলেন, মো.ইমরান ওরফে ইমু (২১), জিহাদ আলী (১৮), শান্ত হোসেন (১৯), রকিবুল হাসান (১৮), রাকিবুল ইসলাম (১৯), নাঈম মিয়া (১৯), জুলহাস (১৮), বাবুল হোসেন (২২), হাবিবুর রহমান (২৭)।

আটকের সময় তাদের কাছ থেকে দেশিও অস্ত্র, একটি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, মোবাইল, ম্যা গাজিন এবং অপহরণ কাজে ব্যবহৃত মৌমিতা পরিবহণ (নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া হতে গাজীপুর চন্দ্রা) এবং আসমানী পরিবহণ (নারায়ণগঞ্জ মোদনপুর হতে উত্তরা) নামের দুটি বাস জব্দ করা হয়।

রোববার কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের প্রধান কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

তিনি বলেন, এই ডাকাতি চক্রের মূলহোতা মো.ইমরান ওরফে ইমু। সে গত চার বছর ধরে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে লেগুনা চালায়। বন্ধু বশিরের মাধ্যমে অপরাধে যুক্ত হওয়ার পর নিজেই মূলহোতা বনে যায়, তার দলে ১২ থেকে ১৪ জন সদস্য রয়েছে। তারা এখন পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ টি অপহরণ ও গাড়ি চুরির কাজে জড়িত।

আটকদের মধ্যে জিহাদ গার্মেন্টসের একটি দোকানে কাজ করত, পরে গেঞ্জির ব্যবসা শুরু করে। অপরাধী চক্রে জিহাদ ও জুলহাসের কাজ ছিল বাসের মধ্যে যাত্রীবেশে বসে থাকা এবং যাত্রী উঠার পর যাত্রীর কাছ থেকে জোর করে নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়া।জিহাদ ও জুলহাস সম্পর্কে চাচাতো ভাই।

ডাকাতি চক্রের আরেক সদস্য মো. শান্ত হোসেন গত এক বছর যাবৎ এ চক্রের সদস্য, তিনি গাজীপুরের চন্দ্রায় হকারী করত। পরে একটি চাকরি পেলেও সেটা বেশিদিন টিকেনি। বেকারত্ব ও হতাশা থেকেই অপরাধে জড়ায়। অপরাধী চক্রে তার কাজ ছিল যাত্রীবেশে লোকজনকে গাড়ীতে উঠানোর পর দরজা বন্ধ করে দেয়া। এই পর্যন্ত সে ১০ থেকে ১২ টি ডাকাতি, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত।

মুফতি মাহমুদ বলেন, আরেক সদস্য রাকিবুল ইসলামের কাশিমপুরে চায়ের দোকান ছিল, মার্কেটে আগুন লাগায় তার চায়ের দোকান বন্ধ হয়ে যায়, পরে বছর দুয়েক ব্যাটারি চালিত অটো রিকশায় চালাত সে। ডাকাতির সময় তার কাজ ছিল যাত্রীদের গাড়ীতে উঠানোর পর তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মালামাল লুট করে নেয়া। সে এই পর্যন্ত ১০ থেকে ১৫টি ডাকাতি ও অপহরণ কাজে জড়িত ছিল।

রকিবুল হাসান দুই মাস ধরে এ চক্রে জড়ায়, রকিবুলের কাজ ছিল অন্য দুই সদস্য মো. বাবুল হোসেন ও মো. হাবিবুর রহমানকে নিয়ে বাসে যাত্রীবেশে বসে থাকা এবং যাত্রী উঠার পর মারধর করে নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়া।আরেক সদস্য নাঈম মিয়ার কাজ ছিল বাসে যাত্রীবেশে বসে থাকা। অপরাধের সঙ্গে জড়ানোর আগে আশুলিয়া জিরানী বাজারে সে চায়ের দোকান চালাত।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চক্রটি জানিয়েছে তাদের গ্রুপে ৩০/৩৫ জনের মত সদস্যে আছে। যার নেতৃত্ব আছে আটককৃত ইমরান, জিহাদ, শান্ত। তাদের টার্গেট ছিল মাসে ১০/১২ টা করে অপহরণ করা। প্রত্যেক ভুক্তভোগীর পরিবারে ফোন দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কাছে থেকে মুক্তিপণ হিসেবে তারা ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আদায় করতো।

র‌্যাব জানায়, চক্রের যে সদস্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করত তাকে এখনো আটক করতে পারেনি, ওই সদস্যসহ আরো দুজন ডাকাত সদস্যদের খুঁজছে তারা।

র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ বলেন, প্রত্যেকটি অপহরণ কাজের জন্য এ গ্রুপের ১০ থেকে ১৫ জন লোক থাকে। তাদের মধ্যে নয় থেকে দশজন সাধারণ যাত্রী সেজে গাড়িতে বসে থাকে। তারা মূলত রাত আট’টার পর থেকে এ কাজগুলো করে থাকে।  চক্রটি প্রায় ৪/৫ বছর ধরে সক্রিয়, অধিকাংশরাই ইমরান ওরফে ইমুর মাধ্যমে অপরাধে জড়ায়। এদের মাঝে অনেকেই জেলে ছিলেন। তাদের নামে রাজধানীর বিভিন্ন জেলার থানায় মামলাও আছে।

Print Friendly

Related Posts