সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি গ্রহণ করলেন শেখ হাসিনা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন থেকে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য পশ্চিমবঙ্গের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গতকাল সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি.লিট) ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন। গতকাল বর্ধমান জেলার আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন ও তৃতীয় বার্ষিক সমাবর্তনে এই ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সাধন চক্রবর্তী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায় অতিথি ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং দু’দেশের শিক্ষাবিদ, কবি, শিল্পি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দু’দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেখ হাসিনা সকলকে ক্ষুদ্র স্বার্থ ও সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে ওঠার এবং মানুষ হিসেবে মর্যাদার উন্নয়নে নজরুলের শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘মানবজাতির একজন সদস্য হিসেবে প্রত্যেককেই কেবল নিজের কর্মস্থলেই নয় বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবতার মর্যাদা সবার উপরে তুলে ধরতে হবে।’ কবির জন্মদিনে কবির জন্মস্থানে আসতে পেরে এবং কবির নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি গ্রহণ করতে পেরে শেখ হাসিনা গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন।

‘আমি মনে করি এই সম্মান কেবলমাত্র আমার একার নয় বরং এই সম্মান বাংলাদেশের জনগণের’-উল্লেখ করে তিনি ডিগ্রি প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা সাহিত্য আকাশে বিদ্রোহী কবি নজরুলের আগমন ঘটেছে ধুমকেতুর মতো। নজরুল ছিলেন কবি, সাহিত্যিক, সঙ্গীত রচয়িতা, সঙ্গীতজ্ঞ, গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক, নাট্যকার অভিনেতা, সাংবাদিক, সম্পাদক এবং সৈনিক, তিনি বাংলা সাহিত্যকে মূল্যমান সম্পদে সমৃদ্ধ করেছেন।

বৃটিশ শাসকদের বাংলা ভাগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাগ হলেও নজরুল ভাগ হননি। এ কারণেই আমরা দেখছি বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ দু’জায়গায়ই নজরুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নজরুলের সাহিত্যকর্মে সর্বদাই ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবতার বার্তা প্রতিফলিত হয়েছে। নজরুল এক হাতে সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় ধর্মীয় বার্তা পৌঁছে ইসলামিক হামদ্-নাত লিখেছেন এবং আরেক হাতে শ্যামা সঙ্গীত বৈষ্ণব গান রচনা করেছেন, সুর দিয়েছেন এবং এই অসাধারণ সৃষ্টির মাধ্যমে হিন্দু ধর্মীয় বার্তা সাধারণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

নজরুলের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্কের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ বয়সের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ফরিদপুরে নজরুলের সাক্ষাত ঘটে। বঙ্গবন্ধু তাঁর জয়বাংলা স্লোগান নজরুলের কবিতা থেকে নিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দুই স্বল্পায়ু ব্যক্তিত্বের চরিত্রের বেশ মিল রয়েছে। একজন ছিলেন সাহিত্যের কবি অন্যজন ছিলেন রাজনীতির কবি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং নজরুল চিন্তা ও আদর্শে একই ছিলেন এবং উভয়ই শোষণ, বঞ্চনামুক্ত একটি সেক্যুলার সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন এবং তারা স্বৈরাচারী শাসকের কাছে মাথা নত করেননি বরং তারা কারাবরণ করেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জনগণের সৌভাগ্য এই যে, তারা বঙ্গবন্ধু ও নজরুলের মতো দুই কবিকে পেয়েছে। তারা কেবলমাত্র বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ করেননি তারা আমাদের জীবন ও মূল্যবোধে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন।

তিনি বলেন, বাঙালি এই দুই কবির কাছ থেকে সম্ভবত নিজেদের চরিত্রের কমনীয়তা ও দ্রোহের সংমিশ্রন লাভ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, নজরুল জন্মেছিলেন পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায়। কিন্তু তিনি ধারণ করেছেন গোটা বাংলাকে। তিনি তাঁর শৈশব কাটিয়েছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালে।
পরে নজরুল বাংলাদেশের অনেক সাহিত্য সম্মেলন ও রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দিয়েছেন এবং কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর এবং অন্যান্য স্থানে কাটিয়েছেন এবং স্থানীয় জনগণের সংস্পর্শে এসেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে নজরুলকে ঢাকায় নিয়ে আসনে এবং তাঁর চিকিৎসা ও বাংলাদেশে বসবাসের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দেন। নজরুলের বিখ্যাত ‘চল চল চল/ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ গানটি বাংলাদেশের রণসঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়েছে। মৃত্যুর পর নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সমাহিত করা হয়েছে।

Print Friendly

Related Posts