‘সরি’ বললেন ডিআইজি মিজান

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে আজ বৃহস্পতিবার পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু করে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা সাড়ে ৭ ঘণ্টা পুলিশের উচ্চপদস্থ এই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সেখান থেকে বের হয়ে হাসিমুখে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিআইজি মিজান। তিনি বলেন,‘একজন সাংবাদিক ভদ্র মহিলার সঙ্গে আমার কনভারসেশন হয়েছে, এজন্য আমি স্যরি। এজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’

সম্প্রতি এক সংবাদ পাঠিকাকে মোবাইলে কল করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ডিআইজি মিজান। এ সময় তিনি ওই নারী ও তার স্বামীকে হত্যার হুমকি দেন। ওই নারীকে তিনি বলেন, ‘তুই আমার ২৮ বছরের চাকরি খাইসিস, তোর জামাইকে আমি মেরে ফেলবো। ওকে ৬৪ টুকরা করবো আর তোকে মেরে জিরো পয়েন্টে তোর মাথা আমি রাখবো।’ এ সময় ওই নারী কাঁদতে কাঁদতে অনেক আকুতি-মিনতি করলেও কথা শোনেননি মিজান। ওই নারীকে মোবাইল ফোনে হুমকির মধ্যেও অনৈতিক প্রস্তাব দিচ্ছিলেন মিজান। ফোনে তিনি বলেন,‘তুই আমার চাকরি খাইসিস, আমার গাড়ি তোর বাসার সামনে যাবে। এক্ষণ আমার গাড়িতে উঠবি তুই। আমার সাথে কিছুক্ষণ থাকবি।’ ওই সংবাদ পাঠিকার মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা অডিওতে কয়েকজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে নানা ধরনের কটূক্তিও করেন মিজান।

এর আগে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে আরেক নারী অভিযোগ করেন, পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের কাছে অবস্থিত তার বাসা থেকে কৌশলে তাকে গত বছরের জুলাই মাসে তুলে নিয়ে যান পুলিশ কর্মকর্তা মিজান। পরে বেইলি রোডের তার বাসায় নিয়ে তরুণীকে তিনদিন আটকে রাখেন। এরপর বগুড়া থেকে মেয়েটির মাকে ১৭ জুলাই ডেকে আনা হয় এবং ৫০ লাখ টাকা কাবিননামায় মিজানকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। পরে লালমাটিয়ার একটি ভাড়া বাড়িতে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে রাখেন মিজান। গত ৮ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ শুরু আগেই বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়। এরপর ৯ জানুয়ারি তাকে ডিএমপি থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এ কারণে পুলিশ সপ্তাহে যোগ দেননি ডিআইজি মিজান।

এসব বিষয়ে আজ দুদক কার্যালয়ের বাইরে সাংবাদিকদের ডিআইজি মিজান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বলব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমার বিরুদ্ধে ইনকোয়ারি আছে, সুতরাং উনারাই ভালো বলতে পারবেন, কতটুকু প্রমাণিত হয়েছে, কতটুকু প্রমাণিত হয়নি।’

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, চাকরিকালীন সময়ে ডিআইজি মিজান বিভিন্ন ক্ষমতার অপব্যবহার করে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার নামে-বেনামে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে। একাধিক ব্যাংক হিসাবে রয়েছে বিপুল অর্থ ও ফিক্সড ডিপোজিট। দেশের বাইরেও অর্থপাচারেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মূলত এসবের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডাকা হয়।

তিনি আজ সকাল  ৯টার দিকে সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন। ডিআইজি মিজান সাংবাদিকদের বলেন,‘দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। আমার ট্যাক্স ফাইলের বাইরে আমার কোনো সম্পদ নেই, বাকিটুকু আপনারা তদন্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমি আবারও বলি যে যে জায়গায় সম্পদ আছে বা আমার আত্মীয়স্বজনের নামে যে সম্পদ আছে, তা আমার ট্যাক্স ফাইলে আছে।’

Print Friendly

Related Posts