সাইফুল আহমেদ এর পদাবলী

মালী ও মৌমাছির লড়াই

 

বাগানে কাজে ব্যস্ত মালী।

এমন সময় এক মৌমাছি এসে বসলো

একটি ফুলের ওপর।

মালী বলে,

‘দাঁড়াও মৌমাছি, মধু শুষে নিও না।

ফুলকে ফুটতে দাও ফুলের নিয়মে।

মধু শুষে নিলে, ফুল ঝরে যাবে, মরে যাবে।’

 

মৌমাছি বলে,

‘ওহে মালী! বিরক্ত করো না।

আহরিত হওয়ার জন্যই ফুলে মধুর বাস।

শুষে না নিলে মধু রোদে শুকিয়ে যাবে।

ফুল তো চিরকাল ফুটে থাকবে না।’

 

মৌমাছির কথা শুনে তাকে তাড়িয়ে দিল মালী।

মৌমাছিও হাল ছেড়ে দিল না।

বাতাসে ডানা ঝাপটে প্রতিবাদ তুলে

ঘুরে বেড়াতে লাগলো ফুলের চারদিকে,

সুযোগ পেলেই এসে বসবে তার ওপর।

 

 

স্মৃতির আঙ্গুল

 

আয়নাতে চুল আঁচরাতে গিয়ে দেখি

আঙ্গুলে তোমার চুল লেগে আছে।

এক বিকেলে বেড়িবাঁধের বাঁধহীন কাশবনে

উদ্যম হাওয়ায় তোমার উড়ন্ত চুলে

হাত বুলাতে গিয়ে

আঙ্গুল হয়েছিল ভালবাসার চিরুনি।

কখন যে কয়েকটি চুল

গায়ে মেখে নিয়েছিল সুচতুর আঙ্গুল;

স্মৃতির আঙ্গুল।

 

 

প্রজাপতি

 

দেহঘরে এক প্রজাপতি বাস করে

রঙ-বেরঙের পাখা

গুন গুনিয়ে গায়

আমি বসে থাকি, প্রজাপতি ওড়ে

আমি চুপ থাকি, প্রজাপতি কথা কয়।

চঞ্চল প্রজাপতি

কোনো শিকলে সে বাঁধা পড়ে না

কোনো তান্ত্রিক তাকে তাড়াতে পারে না।

কখনো লাল গোলাপ, কখনো নীল অপরাজিতায়

বসে সেই প্রজাপতি মধু শুষে নেয়।

 

রহস্যাবৃত প্রজাপতি!

সময়ের উইপোকায় দেহঘর ধসে গেলেও কি

তুমি উড়? বেঁচে থাকো?

 

Saiful-Ahmed-1

পুষ্পা

 

হঠাৎ একদিন

আমার প্রতিবেশীর সুশোভিত টবে

দেখি এক অচেনা ফুল

স্বল্প প্রস্ফুটিত

তবু

পাপড়িতে সে করেছে ধারণ

অবনীর সমস্ত রূপ, সম্ভাবনা।

আমি তন্ময় হয়ে চেয়ে থাকি

যেমন তাকিয়ে ছিল ব্যালবোয়া

সদ্য আবিষ্কৃত প্রশান্তের দিকে,

আর মনে মনে ভাবি

ফুলের সুবাস যেন পৌঁছে চতুর্দিক।

এরপর একদিন

শীতের ছুটিতে কয়েক দিনের ভ্রমণ শেষে বাড়িতে এসে

সে ফুলকে দেখি না আর।

লোক মুখে শুনি,

একঝাঁক মধুলোভী

ফুলকে আহরণ করতে গিয়ে

করেছে বৃন্তচ্যুত।

মালীর কাছ থেকে জানি ফুলের নাম

‘পুষ্পা’।

 

তৃপ্তির দেয়াল

 

কে অধিক পবিত্রতা দাবি করতে পারে,

পথিক নাকি পথ?

পথকে ছুঁয়ে যায় অগণ্য পথিকের পা,

পথিকের পায়েও অসংখ্য পথের ধূলো।

সন্দেহে সতীত্বের প্রশ্ন না তোলাই ভালো

তৃপ্তির দেয়ালে এতে জন্ম নিতে পারে

ঘৃণার শৈবাল।

Print Friendly

Related Posts