সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরীর জীবনাবসান

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ৯৬ বছর বয়সে জীবনাবসান সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরীর। বাংলা সাহিত্য হারাল তাঁর অন্যতম সেরা নক্ষত্রটিকে। চলে গেলেন ওপার বাংলার বিশিষ্ট সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। রবিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এই সাহিত্যিক।

সাহিত্য অ্যাকাডেমি, আনন্দ পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার ছাড়াও একাধিক সম্মানে ভূষিত হন তিনি। বাড়ি বদলে যায় উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান রমাপদ চৌধুরী। তাঁর রচিত খারিজ উপন্যাস অবলম্বনে ছবি তৈরি করেছেন মৃণাল সেন। তাঁর রচনায় বনপলাশীর পদাবলী ছবির পরিচালনা করেছিলেন উত্তম কুমার। রমাপদ চৌধুরীর প্রয়াণে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

অনেকদিন আগেই নিজের লেখা থামিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম সেরা কলমটিই হাতে ছিল তাঁর। ১৯২২ সালের ২২ ডিসেম্বর খড়গপুরে তাঁর জন্ম।  স্কুলের পাঠ শেষ করে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং পরবর্তীকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

বাবার কর্মসূত্রে গোটা দেশ ঘুরে ফেলেছিলেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতাই ফুটে উঠত তাঁর কলমে। সতেরো আঠেরো বছরে লেখা গল্প ‘উদায়স্ত’ প্রকাশিত হয়েছিল যুগান্তর পত্রিকায়। এপর প্রকাশিত হয় ‘বারো ঘোড়ার আস্তাবল’।

স্নাতকোত্তর পাশ করে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীতে যোগ দেন। কর্মজীবনে কালক্রমে তিনি ওই পত্রিকার অ্যাসোসিয়েট এডিটর পদে দায়িত্ব পালন করেন। বহু বছর ধরে তিনি পত্রিকার ‘রবিবাসরীয়’ বিভাগের সম্পাদক পদ অলঙ্কৃত করেন।

১৯৫৪ সালে প্রথম উপন্যাস ‘প্রথম প্রহর’ প্রকাশ হওয়ার আগেই তাঁর দু’টি ছোটগল্প সংকলন প্রকাশিত হয়। ষাটের দশকে ‘দেশ’ পত্রিকায় তাঁর উপন্যাস ‘বনপলাশীর পদাবলী’ পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি পাঠক সমাজকে আলোড়িত করেন। ১৯৬৩ সালে আনন্দ পুরস্কার পান। ১৯৭১ সালে ‘এখনই’ উপন্যাসের জন্য পান রবীন্দ্র পুরস্কার। ১৯৮৮ সালে ‘বাড়ি বদলে যায়’ উপন্যাসের জন্য তিনি  সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে তিনি পঞ্চাশটির উপরে উপন্যাস রচনা করেন। এছাড়া দেশ পত্রিকার গল্প সংকলনও দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদনা করেন।

২০১১ সালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্মারক আন্তর্জাতিক পুরস্কার চালু করলে প্রথম বছর ‘বনপলাশী পদাবলী’ উপন্যাসের জন্য রমাপদ চৌধুরীকে ওই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ফুটে উঠেছে ‘দ্বীপের নাম টিয়া রং’, কখনও বা লেখা হয়েছে ‘বনপলাশীর পদাবলী’। ১৯৮৮ সালে পেয়েছিলেন সাহিত্য অ্যাকাডেমি সম্মান। আনন্দ পুরষ্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার-সহ একাধিক সম্মান পেয়েছেন তিনি।

তাঁর একাধিক গল্প ও উপন্যাসকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বহু চলচ্চিত্র। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ‘দ্বীপের নাম টিয়ারং’, ‘এখনই’, ‘পিকনিক’, ‘বনপলাশীর পদাবলী’, ‘যে যেখানে দাঁড়িয়ে’, ‘খারিজ’। ‘অভিমন্যু’ উপন্যাস অবলম্বনে তপন সিংহ পরিচালিত হিন্দি ছবি ‘এক ডক্টর কি মওত’।

Print Friendly

Related Posts