সুন্দরবনে বাঘের সঠিক সংখ্যা কত!

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বন উজাড় ও শিকারী কর্তৃক বাঘ হত্যাসহ নানা কারণে সুন্দরবনে বাঘের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। বাঘের সঠিক সংখ্যা কত, তাও আজো এক রহস্য।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে সুন্দরবনে বাঘ শুমারি শুরুর পর মে মাসে সম্পন্ন হয়। এরপর দু’ মাসেও শুমারির ফল প্রকাশ হয়নি। ফলে সুন্দরবনে বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, আগামী বছরের প্রথম দিকে শুমারির ফল প্রকাশের সম্ভাবনার কথা বলেছেন কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থার মধ্যেই আজ রোববার পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এ বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনে শুরু হয় তৃতীয় দফায় ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনা বা পরিবীক্ষণ। সুন্দরবনের খুলনা ও শরণখোলা রেঞ্জের দুটি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্যের ৪৭৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় করা হয় এই মনিটরিং। ২৩৯টি পয়েন্টে গাছ বা খুঁটির সাথে ৬৭০টি ক্যামেরা বসিয়ে এ বাঘ মনিটরিং করা হয়।

প্রথম দফায় ২০১৩ সালে সুন্দরবনের ২৬ শতাংশ এলাকায় ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ শুমারি হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিং’র মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের কাজ করা হয়। ২০১৫ সালের মার্চে প্রকাশিত শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০৬টি।

এর আগে ২০০৪ সালের এক গবেষনায় উল্লেখ করা হয়, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ৪৪০টি। এর মধ্যে পুরুষ ১২১টি, স্ত্রী ২৯৮টি এবং বাচ্চা রয়েছে ২১টি। তবে, সর্বশেষ সুন্দবনের বাঘের সংখ্যা, অবস্থান ও গতিপ্রকৃতি জানতে তৃতীয় দফা মনিটরিং কার্যক্রম শুরু করে বন বিভাগ।

সূত্র জানান, ২০১০ সালে জানুয়ারি মাসে থাইল্যান্ড’র হুয়ানে অনুষ্ঠিত হয় টাইগার রেঞ্জ দেশ সমূহের ‘এশিয়া মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স’। এখান থেকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, প্রতিবছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হবে। ওই সাল থেকে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষনে ৯দফা পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ২০২০ সালের মধ্যে বাঘের সংখা দ্বিগুণ করা।

সূত্র জানিয়েছে, বন উজাড় ও শিকারীদের কারণে বাঘের অস্তিত্ব বিপন্নের পথে। সুন্দরবনে বাঘের খাবারের ৮০শতাংশ আসে হরিণ থেকে। চোরা শিকারীরা হরিণ নিধন করে তার সাথে বিষ মিশিয়ে বাঘকে খেতে দেয়। বাঘ হরিণের মাংস খেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকার পর হত্যা করা হয়।

বিশ্বের ১৩টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। এ ১৩টি বাঘ সমৃদ্ধ দেশকে বলা হয় ‘টাইগার রেঞ্জ কান্ট্রি’। দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ভুটান, লাওস, নেপাল ও রাশিয়া।

বাঘের ৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে বালিনীজ, জাভানীজ ও কাম্পিয়ান টাইগার বিশ্ব হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বেঙ্গল, সাইবেরিয়ান, সুমাত্রান, সাউথ চায়না ও ইন্দো চায়না উপ-প্রজাতি টিকে আছে। সারা বিশ্বে প্রায় লক্ষাধিক বাঘ ছিল। ২০১৫ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ৪ হাজার। আর সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০৬টি। বিশ্বের ১৩টি দেশের মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম।

বন বিভাগের সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে বাঘ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যামেরার সাহায্যে বাঘ গণনা শুরু হয়। খুলনা বিভাগীয় বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃত সংরক্ষণ বিভাগ প্রথম দফায় এ প্রকল্পকে জনবল ও ৭০টি ডিজিটাল ক্যামেরা সরবরাহ করে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আবারো সুন্দরবনের ৩টি অভয়ারণ্য এলাকায় ক্যামেরা ট্র্যাপিং এর মাধ্যমে বাঘ গণনার কাজ শুরু হয়।

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃত সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মদিনুল আহসান বলেন, ‘বাঘ শুমারির অংশ হিসেবে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। এর প্রতিবেদন তৈরি করতে সময়ের প্রয়োজন। তবে বাঘের সংখ্যা কমবে না বাড়তে পারে তা বলা যাচ্ছে না। আগামী বছরের প্রথম দিকে শুমারির ফল প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।’

বাঘ প্রকল্পের গবেষণা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল মোজাহিদ বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বাঘের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে সরকার। তবে বাঘের সংখ্যা বাড়তে পারে।’

খুলনা সার্কেলের উপ-বন সংরক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আগের চেয়ে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বাঘ গণনা করা হয়েছে। তবে, প্রতিবেদন প্রকাশ না হলে কিছুই বলা যাচ্ছে না।’

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশিরুল-আল-মামুনও একই কথা বললেন।

 

Print Friendly

Related Posts