হোঁচট খেল আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল চাপে চ্যাম্পিয়ন জার্মানি

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর আগে ‘ফেভারিট কারা’ এ নিয়ে ছিল চুলচেরা বিশ্লেষণ। সাম্প্রতিক ফর্মের বিবেচনায় এমন তালিকার উপরের দিকেই ছিল স্পেন, জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালের নাম। কিন্তু নির্মম সত্যিটা হলো উল্লেখিত প্রতিটা দলই বিশ্বকাপ শুরু করেছে পয়েন্ট হারানোর মধ্য দিয়ে। বাকি দলগুলো তবুও পরাজয় এড়ালেও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানির ভাগ্যে তো সেটাও জুটেনি।

মেক্সিকোর কাছে অনাকাক্সিক্ষত ১-০ গোলের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে রাশিয়া যাত্রা শুরু কয়েছে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ফেভারিট পতনের শুরুটা হয়েছিল বিশ্বকাপের তৃতীয় দিন অর্থাৎ ১৬ জুন বিশ্বকাপে অভিষিক্ত আইসল্যান্ডের কাছে আর্জেন্টিনার ১-১ ড্র’র মধ্য দিয়ে। আগের দিন পর্তুগাল-স্পেন ৩-৩ ড্রর ম্যাচকে অবশ্য অঘটনের মধ্যে ফেলা যায় না। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং ডিয়াগো কস্তার গোল আর পাল্টা গোলের জমজমাট ম্যাচে ৮৮ মিনিট পর্যন্তও এগিয়ে ছিল স্পেন। ৫৮তম মিনিটে নাচোর গোল জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল ২০১০ চ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু শেষ সময়ে রোনালদোর হ্যাটট্রিক পূর্ণ করা দুর্দান্ত ফ্রিকিকে হার এড়ায় ইউরো চ্যাম্পিয়নরা।
লিওনেল মেসি পেনাল্টি মিস করে পড়েন নতুন সমালোচনায়। ভক্তদের মাঝে এখন উঁকি দিচ্ছে শঙ্কা? আর্জেন্টিনার সান্তনা অপর দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ও জার্মানি ম্যাচ। পরশু একই রাতে প্রথমে জার্মানির পরাজয়ের পরের ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ ড্র করে নেইমারের ব্রাজিল। যদিও প্রথমার্ধে ফিলিপ কুতিনহোর দুরপাল্লার মাপা শটে ব্রাজিলের শুরুটা ছিল দারুণ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সুইসদের সমতায় ফেরান স্টেফেন জুবের। আলো ছড়াতে পারেননি নেইমার। সঙ্গে জেসুস-উইলিয়ানে গড়া আক্রমণত্রয়ী জালের দেখা থেকে বঞ্চিত হন। ১৯৭৮ সালের পর প্রথম পয়েন্ট খুঁইয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে সেলেসাওরা। অপরদিকে ১৯৬৬ সাল থেকে ফিফা বিশ্বকাপে অপরাজিত যাত্রা ধরে রাখে সুইজারল্যান্ড।

জার্মানির পরাজয়টা দুর্ভাগ্য বললে ভুল হবে। মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রথমার্ধে হিরভিং লোজানোর গোলে পিছিয়ে পড়ার পর দিকহারা জার্মানরা আক্রমণের নেশায় বার বার নিজেদের রক্ষণ অরক্ষিত করে ফেলে। মেক্সিকানরা সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের পরাজয়ের ব্যবধান আরো বাড়তো বৈকি।
ফেভারিটদের হোঁচটের ভিড়ে ভাগ্যপ্রসুত জয় পায় ফ্রান্স ও উরুগুয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টি ও পাল্টা পেনাল্টি গোলে সমতায় থাকা ম্যাচে শেষ সময়ে আত্মঘাতী গোলে জয় পায় ফরাসিরা। আর শেষ সময়ের গোলে মোহাম্মদ সালাহহীন মিসরকে হরায় নিজেদের ফেভারিট দাবি করা দুই বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। আর্জেন্টিনার গ্রপের আরেক ফেভারিট ক্রোয়েশিয়াও জয় দিয়ে যাত্রা শুরু করে। নাইজেরিয়াকে তারা হারায় ২-০ গোলে।

সুইজারল্যান্ডের কাছে পয়েন্ট হারালেও ‘ই’ গ্রপে ফেভারিট এই দুটি দলই। যদিও নিজেদের প্রথম ম্যাচে কোস্টারিকাকে হারিয়ে এগিয়ে গেছে সার্বিয়া। কিন্তু ‘ডি’ গ্রপে আইসল্যান্ডের কাছে আর্জেন্টিনার ধাক্কাটা বড় প্রভাব ফেলতে পারে বিশ্বকাপে। নাইজেরিয়াকে হারিয়ে এগিয়ে গেছে ক্রোয়েশিয়া। যাদেরকে গ্রæপের দ্বিতীয় ফেভারিট ভাবা হচ্ছে। ক্রোয়েটদের বিপক্ষে যে মেসিদের ম্যাচটা সহজ হবে না তাও সবার জানা। আর নাইজেরিয়া তো সব সময়ই আর্জেন্টিনার জন্য শক্ত প্রতিপক্ষ। গত মার্চে প্রস্তুতি ম্যাচে আফ্রিকান সুপার ঈগলদের কাছে তাদের ৪-১ গোলের পরাজয় কিন্তু ভক্তরা এখনো ভুলে যাননি।

১২ বছর পর বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের শুরুটা দারুণ হলো সুইডিশদের। ভিডিও অ্যাসিসট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সহায়তায় পাওয়া একমাত্র পেনাল্টি গোল থেকে গতকাল দক্ষিণ কোরিয়াকে হারায় সুইডেন।

কিম মিন-উসের ফাউলের শিকার হন ভিক্টোর ক্লাসোন। মাঠের রেফারি অবশ্য খেলা চালিয়ে যান। পরবর্তিতে আবেদনের পরিপেক্ষিতে ভিডিও বিশ্লেষণের পর পেনাল্টি পায় সুইডেন। তা থেকে গোলরক্ষক চো হিউন-উকে ভুল পথে পরিচালিত করে দলকে জয়সূচক গোল উপহার দেন ৩৩ বছর বয়সী ডিফেন্ডার আন্দ্রেস গ্রানকোভিসত। এই জয়ে ‘এফ’ গ্রপে মেক্সিকো ও সুইডেনের অর্জন সমান ৩ পয়েন্ট করে। আগের দিন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে একমাত্র গোলে হারায় মেক্সিকো।

ম্যাচে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরী করে সুইডেন। কিন্তু গোলরক্ষক চো’র কাছে বার বার পরাস্থ হতে হয় সুইডিশদের। অবশেষে ৬৫তম মিনিটে আর গোলপোস্ট অক্ষত রাখতে পারেনি চো। ২০০২ সালে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন হেনরিক লারসন, এরপর আর কোনো সুইডিশ বিশ্বকাপে পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করতে পারেননি। গ্রানকভিসত সেটিই করে দেখান। পক্ষান্তরে নিজেদের রক্ষণ সামলে আক্রমণে উঠলেও প্রতিপক্ষে ডি বক্সে গিয়ে সবকিছু এলোমেলো করে ফেলে দক্ষিণ কোরিয়া; এমনকি লক্ষ্যে কোন শটই নিতে পারেনি তারা। ফলে টানা নবম বিশ্বকাপে অংশ নেয়া পূর্ব এশিয়ার দলটির আসরে যাত্রা শুরু হলো হতাশা দিয়ে।

২৩ জুন সুইডেনের পরবর্তি প্রতিপক্ষ জার্মানি। একই দিন মেক্সিকোর মুখোমুখি হবে দক্ষিন কোরিয়া।

Print Friendly

Related Posts