১০ জেলার সড়কে গেল ৩৯ প্রাণ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ দেশের ১০ জেলায় শুক্রবার রাত ১০টা থেকে শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯ জন নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত ১৪১ জন। হতাহতদের মধ্যে অনেকেই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করে কর্মস্থলে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন। দূরপাল্লার বাস বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এই সময়ে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধার পলাশতলী উপজেলার মহেশপুরে। এখানে একসঙ্গে ১৬ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পাগলাপীরের সালেয়া শাহ বাজারে আরো একটি দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।

এর বাইরে ঢাকার সাভার উপজেলায় চারজন, গোপালগঞ্জে তিনজন, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা, নাটোর সদর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলায় দুজন করে এবং চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় একজন নিহত হয়েছে।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৩৩ জন। শনিবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে উপজেলার মহেশপুর এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান। বাস যাত্রীদের অধিকাংশই নীলফামারী, কুষ্টিয়া ও ঠাকুরগাঁও জেলার যাত্রী ছিলেন। নিহতদের মধ্যে ১৫ জনই পুরুষ, একজন নারী। আহতদের মধ্যে নারী-পুরুষ ছাড়া শিশুরাও রয়েছে। ওসি মাহমুদুল হাসান সকালে জানান, আলম এন্টারপ্রাইজের একটি বাস যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুরের দিকে যাচ্ছিল। পথে ভোরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে উল্টে যায়। এতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

রংপুর : রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পাগলাপীরে বিআরটিসির দোতলা বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১০ জন। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার পাগলাপীরের সলেয়া শাহ বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দোতলা বাসটি যাত্রী নিয়ে দিনাজপুর থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। পাগলাপীরের সলেয়া শাহ এলাকায় বাসটির চাকা পাংচার হয়ে যায়। তখন যাত্রীদের অনেকে গরমের কারণে বাস থেকে নেমে রাস্তার ওপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এ সময় একই দিক থেকে আসা একটি বালুবোঝাই ট্রাক বাসটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে রাস্তায় বসা ছয় বাসযাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। হতাহতরা  সবাই দিনাজপুরের। গুরুতর আহত অবস্থায় ১০ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন নিশাত ও সাজ্জাদ।

সাভার: আমিনবাজারের তুরাগ এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২০ জন। শনিবার সকাল ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দিন জানান, দ্রুতি পরিবহনের বাসটি রংপুর থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আমিনবাজারের তুরাগ এলাকায় ইউটার্ন নেওয়ার সময় বাসটিকে একটি ট্রাক পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে ২৩ জনকে উদ্ধার করে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানকার চিকিৎসক চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

নাটোর : নাটোর সদর উপজেলায় ইজিবাইক ও ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো তিনজন।  শনিবার সকাল ৭টার দিকে নাটোর শহরের আলাইপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন সুলতা রানী দেবনাথ ও কানাই লাল দেবনাথ। তাঁদের বাড়ি নলডাঙ্গা উপজেলার সোনাপাতিল গ্রামে। ইজিবাইকটি স্টেশন এলাকা থেকে যাত্রী নিয়ে মিশন হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল। শহরের আলাইপুরে বালুবাহী একটি ট্রাক পেছন থেকে ইজিবাইককে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই যাত্রী নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন নিহত সুলতা দেবনাথের স্বামী মঙ্গল দেবনাথ, তাদের কন্যা আঁখি দেবনাথ এবং ইজিবাইকচালক আবুল কালাম।

পাবনা : সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক ও তাঁর সহকারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ২০ বাসযাত্রী। শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার ভুইয়াগাতী এলাকায় বগুড়া-নগরবাড়ী সড়কে  এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন রায়গঞ্জ উপজেলার শ্যামনাই গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে ট্রাকচালক শরিফ ফকির (৩৫) ও একই গ্রামের ধুকু মিয়ার ছেলে চালকের সহকারী রফিকুল ইসলাম (৩০)। আর কে পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি বগুড়া থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। ভুইয়াগাঁতী এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া বাজারে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এক ধানকল মালিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে। নিহত ধানকল মালিক ওবায়দুর রহমান (৪৫) আলোকদিয়া চকপাড়ার মরহুম ইরফান আলীর ছেলে। আহত দুই মোটরসাইকেল আরোহী চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে মহসিন (৩৫) ও একই উপজেলার ছুটিপুর গ্রামের হাফিজুল বিশ্বাসের ছেলে মাসুদ রানা (৩৬)। তাঁরা খালাতো ভাই।

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় বাসচাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। এ সময় আরো ১০ যাত্রী আহত হয়েছেন। শনিবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার ঘোনাপাড়ায় গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন বেসরকারি সংস্থা রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টারের (রিক) গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের কর্মচারী ইমরান হোসেন (৩৮) ও মাঠ কর্মকর্তা পুলক ব্যাপারী (৩৪)। হতাহতদের সবার বাড়ি পিরোজপুরে। এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার দাসেরহাটে বাসের চাপায় ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১০ বাসযাত্রী আহত হয়েছেন। নিহত ভ্যানচালকের নাম লোকমান শেখ (৫০)। তিনি মুকসুদপুর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের ইসমাইল শেখের ছেলে।

লক্ষ্মীপুর : লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলায় মালবাহী পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ সময় চারজন আহত হন। ভোরে রামগতি-সোনাপুর সড়কের শেখের কিল্লা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন রামগতির চরআফজল গ্রামের গোফরান মিয়ার ছেলে মো. মিলন (৫০) ও একই এলাকার শাকেরা খাতুন (৭০)।

ফরিদপুর : ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় বরিশাল থেকে বগুড়াগামী তুহিন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ২০ জন। নিহতের মধ্যে বাসের চালক নাটোরের ইব্রাহিম (৪০) ও অপরজন চালকের সহকারী একই এলাকার হাবিব (৩২) বলে জানা গেছে। সকাল ৯টার  দিকে বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা বগুড়াগামী তুহিন পরিবহনের বাসটি ভাঙ্গার পূর্ব সদরদী নামক স্থানে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে পৌঁছলে বাসটির সামনের চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাস্থলেই  দুজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়।

নেত্রকোনা : জেলার দুর্গাপুর উপজেলার শুকনাকুড়ি নামক স্থানে শ্যামগঞ্জ-জারিয়া-দুর্গাপুর সড়কে শনিবার বিকেলে মাহেন্দ্র ট্রাক্টর ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে শাওন (১৩) নামের এক কিশোর ঘটনাস্থলেই নিহত এবং নয়জন আহত হয়। নিহত শাওন পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামের ভুট্টু মিয়ার ছেলে। সে মাহেন্দ্র গাড়ির হেলপার। শনিবার বিকালে মাহেন্দ্র ট্রাক্টরটি দুর্গাপুর থেকে বেশকিছু যাত্রী নিয়ে শ্যামগঞ্জের দিকে রওনা দেয়। বিকেল ৪টার দিকে ট্রাক্টরটি শুকনাকুড়ি নামক স্থানে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগামী মাইক্রোবাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই হেলপার শাওন নিহত ও নয়জন আহত হয়।

 

Print Friendly

Related Posts