মাধ্যমিকে পাসের হার কমেছে যে কারণে..

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ইংরেজি ও গণিতে বাজে ফলের পাশাপাশি মানবিক বিভাগে ফল বিপর্যয়ের ধাক্কায় এবার মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার নেমে এসেছে নয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। সারা দেশের সার্বিক পাসের হারকে অনেকখানি টেনে নামিয়েছে মাদ্রাসা, কারিগরি ও সিলেট বোর্ডের ফলাফল। চলতি বছরের মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে এক চতুর্থাংশ এসএসসিতে বসেছে এই তিন বোর্ডে থেকেই।

আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি মিলিয়ে সার্বিকভাবে এবার ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পাস করেছে। পাসের এই হার গতবছরের চেয়ে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ পয়েন্ট কম।

উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনায় গতবছর এসএসসিতে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে নেমে এসেছিল ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশে। এবার তা আরও কমে আসার ক্ষেত্রেও মূল্যায়নের নতুন নিয়মের কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন, “আগে অনেকে খাতা না দেখেই নম্বর দিয়ে দিতেন। এখন ভালো করে খাতা দেখার ফলে গতবারের মত এবারও পাসের হার কমেছে।”

ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা, রাজশাহী, যশোর, চট্টগ্রাম, সিলেট, দিনাজপুর, মাদ্রাসা এবং কারিগরি বোর্ডে ইংরেজি ও গণিতে পাসের হার কমেছে। কুমিল্লা বোর্ডে ইংরেজি ও গণিতে এবং বরিশাল বোর্ডে শুধু গণিতে পাসের হার বেড়েছে। পাসের হার কমার কারণ হিসেবে সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা এবং গণিতের সৃজনশীল প্রশ্নকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ।

বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হারে বড় হেরফের না হলেও মানবিক বিভাগে এবার বিপর্যয় হয়েছে। এই বিভাগে এবার পাসের হার ৬৯ শতাংশ, যা গতবার ৮০ দশমিক ২১ শতাংশ ছিল। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি মু. জিয়াউল হক ফল বিশ্লেষণ করে বলছেন, গণিত ও ইংরেজির সঙ্গে মানবিকের পাসের হারই এবারের সার্বিক ফলাফলের এই চেহারার মূল কারণ। তিনি বলেন, “গ্রাম অঞ্চলে মানবিকের শিক্ষার্থী বেশি। গণিত ও ইংরেজিতে যে মানের শিক্ষক দরকার সেই মানের শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না।”

গণিত ও ইংরেজির শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দিয়ে জিয়াউল হক বলেন, “একজন শিক্ষককে প্রতিনিয়ত সিলেবাস ও কারিকুলামের বিষয়ে আপডেট থাকার জন্য নিজেকেও সচেষ্ট থাকতে হবে। সেই জায়গায় সঙ্কট আছে, শিক্ষকরা সেই জায়গায় হাত দিতে চান না, নিজে তৈরি হতে চান না। আমরা সেই তাগাদা দেব।”

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম ছায়েফ উল্যা জানান, তার বোর্ডে এবার গণিতে পাসের হার গতবারের চেয়ে ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে।

সিলেট বোর্ডে এবার পাসের হার সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম- ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। পাসের এই হার গতবারের চেয়ে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ পয়েন্ট কম। এ বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কবির আহমদ বলছেন, সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি সৃজনশীল প্রশ্নে গণিত পরীক্ষা হওয়ায় সিলেট বোর্ডে পাসের হারে ধাক্কা খেয়েছে। গণিতে অভিন্ন সৃজনশীল প্রশ্ন হওয়ায় এ বিষয়ে বেশি ফেল করেছে। ইংরেজিতেও অনেক শিক্ষার্থী ফেল করেছে।

২০১৭ সাল থেকে সৃজনশীল প্রশ্নে গণিতের পরীক্ষা হচ্ছে। তবে এবার সারা দেশে একই প্রশ্নে সব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। সিলেট বোর্ডে এবার শুধু গণিতেই পাসের হার গতবারের চেয়ে ১৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। ইংরেজিতে পাসের হার কমেছে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ পয়েন্ট। কবির আহমদ বলেন, সিলেটে মানবিকের পরীক্ষার্থী বেশি হওয়ায় পাসের হারের ধাক্কা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অংকে তো শিক্ষার্থীরা এমনেতেই দুর্বল। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা গণিতের সৃজনশীলে অভ্যস্ত না, শিক্ষকরাও না।

Print Friendly

Related Posts