যেভাবে ২০-দল ও ঐক্যফ্রন্টের আসন ভাগাভাগি, ২৯৮ প্রার্থীই ধানের শীষ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টন করা নিয়ে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে এ দুই মোর্চার নেতৃত্বদানকারী দল বিএনপিকে। শরিক দলগুলোর শীর্ষনেতাদের সঙ্গে কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। শেষ পর্যন্ত শরিকদের ৫৯টি আসনে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। ৩শ আসনের এ নির্বাচনে অবশিষ্ট আসনগুলোয় লড়াই করবেন বিএনপির প্রার্থীরা।

জামায়াতকে শেষ মুহূর্তে ২২টি আসনে বেঁধে দেয়া গেছে। এসব আসনের মধ্যে কক্সবাজার-২ থেকে জোটের সমর্থন নিয়েই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন জামায়াতের হামিদুর রহমান আযাদ। আর ২২টি আসনের বাইরেও পাবনা ১-এ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। এ আসনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রার্থী করা হয়েছে সদ্য আওয়ামী লীগ থেকে গণফোরামে যোগদানকারী অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে। অর্থাৎ আসনে ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে উন্মুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনেরও একই দশা। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদের পাশাপাশি জামায়াতের নুরুল ইসলাম বুলবুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। এ ছাড়া জোটের সিদ্ধান্তেরও বাইরে চট্টগ্রাম ১৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী জাফরুল ইসলামের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জামায়াতের জহুরুল ইসলাম।

সূত্রমতে, জামায়াতকে প্রাথমিকভাবে ২৫টি আসনে ছাড় দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু গত শনিবার রাতে সিলেট-৫, ৬ ও সাতক্ষীরা-৩ আসন বাদ দিয়ে  দলটিকে চিঠি দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সৃষ্টি হয় মনকষাকষি। ২২ আসনের বিপরীতে জামায়াতকে দেওয়া চিঠি বিএনপির কাছে ফেরত পাঠায় দলটি। এর পর বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াতের সঙ্গে অনেক চেষ্টার পর ফের কথা বলা সম্ভব হয়। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, চট্টগ্রাম-১৬ ও পাবনা-১ আসন উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে দুই দলের সমঝোতা হয় এবং বিএনপির চিঠি গ্রহণ করে জামায়াত।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গেও আসন বণ্টন নিয়ে টানাপড়েন চলে বিএনপির। ৩টি আসনে ছাড় দেওয়ার পর দলটির শীর্ষনেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আরও একটি আসন চান। শেষ পর্যন্ত তার দাবি মেনে নিয়ে টাঙ্গাইল-৩ আসনটিতে ছাড় দেওয়া হয়। প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের স্ত্রী কামরুন্নাহারকে এ আসনে মনোনীত করা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বাদ দিয়ে কাদের সিদ্দিকীর দলের প্রার্থী মনজুরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাগপাকে এবার কোনো আসনই দেওয়া হয়নি।

২০-দলীয় জোটের শরিক এলডিপির কর্নেল (অব) অলি আহমেদ তার দলীয় প্রতীক ‘ছাতা’ নিয়েই লড়াই করবেন। কক্সবাজার ২-এ হামিদুর রহমান আযাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। তাকে সমর্থন দেবে বিএনপি। বাকি ২৯৮ আসনে দুই জোটের প্রতিটি দলের নেতাই উভয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়বেন। এর মধ্যে বিএনপির নেতারা লড়াই করবেন ২৪২ আসনে।

ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর মধ্যে গণফোরাম ৭টি, জেএসডি ৪টি, নাগরিক ঐক্য ৪টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে ৪টি আসনে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। ঐক্যফ্রন্টভুক্ত শরিকদের মোট ১৯টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ২২টি, এলডিপি ৫টি, খেলাফত মজলিশ ২টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দুই অংশকে ৪টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ২টি এবং বিজেপি, কল্যাণ পার্টি, এনপিপি, লেবার পার্টি ও পিপিবিকে একটি করে আসনে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। সর্বশেষ হিসাবে, ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটভুক্ত সব শরিকের জন্য মোট ৫৯টি আসনে ছাড় দিয়েছে বিএনপি।

জেএসডি (৪টি) : আ স ম আবদুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪), আবদুল মালেক রতন (কুমিল্লা-৪),  শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন (ঢাকা-১৮) ও সাইফুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-৩)।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (৪টি) : বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মেয়ে কুঁঁড়ি সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল-৮), লিয়াকত আলী (টাঙ্গাইল-৪), ইকবাল সিদ্দিকী (গাজীপুর-৩) ও মনজরুল ইসলাম (নাটোর-১)।

গণফোরাম (৭টি) : সুব্রত চৌধুরী (ঢাকা-৬), মোস্তফা মহসিন মন্টু (ঢাকা-৭), এএইচএম খালেকুজ্জামান (ময়মনসিংহ-৮), রেজা কিবরিয়া (হবিগঞ্জ-১), অধ্যাপক আবু সাইয়িদ (পাবনা-১), আমসা আমিন (কুড়িগ্রাম-২) ও সুলতান মো. মনুসর আহমেদ (মৌলভীবাজার-২)।

নাগরিক ঐক্য (৪টি) : মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-২), এসএম আকবর (নারায়ণগঞ্জ-৫), শাহ রহমত উল্লাহ (রংপুর-১) ও নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর (বরিশাল-৪)।

এলডিপি (৫টি) : চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির অলি আহমেদ, চট্টগ্রাম ৭-এ মো. নুরুল আলম, কুমিল্লা ৭-এ রেদোয়ান আহমেদ, লক্ষ্মীপুর ১-এ সাহাদাত হোসেন সেলিম এবং ময়মনসিংহ ১০-এ সৈয়দ মাহমুদ মোর্শেদ।

খেলাফত মজলিশ (২টি) : হবিগঞ্জ-৪ আসনে আহমেদ আবদুল কাদের ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আবদুল বাসিদ আজাদ।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (৪টি) : সুনামগঞ্জ ৩-এ শাহিনুর পাশা, হবিগঞ্জ ২-এ আবদুল বাসিদ আজাদ, যশোর ৫-এ মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, সিলেট ৫-এ উবায়দুল্লাহ।

জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর ২টি) : গাইবান্ধা-৩ টিআই ফজলে রাব্বী, কুষ্টিয়া-২ আহসান হাবিব লিংকন।

জামায়াতে ইসলামী (২২টি) : ঢাকা-১৫ আসনের ডা. শফিকুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে রফিকুল ইসলাম খান, খুলনা-৫ আসনে মিয়া গোলাম পারোয়ার, খুলনা-৬ আসনে আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-১১ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, চট্টগ্রাম- ১৫ আসনে শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ আসনে হামিদুর রহমান আযাদ, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ আসনে আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আসনে আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ আসনে মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ আসনে আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ আসনে মাজেদুর রহমান, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ আসনে শামীম সাঈদী, বাগেরহাট-৩ আসনে আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ আসনে আবদুল আলীম, যশোর-২ আসনে আবু সাঈদ মো. সাহাদাত হোসেইন, ঝিনাইদহ-৩ আসনে মতিউর রহমান, পাবনা-৫ আসনে ইকবাল হোসেইন, রংপুর-৫ আসনে গোলাম রাব্বানী। জানা গেছে, জোট শরিকদের ছাড় দিতে গিয়ে লক্ষ্মীপুর ১-এ নাজিম উদ্দিন, লক্ষ্মীপুর ৪-এ আশরাফ উদ্দিন নিজান, বরিশাল ৪-এ মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তিন জনই ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির সাংসদ ছিলেন। ঢাকা-৬ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন মনোনয়নবঞ্চিত হন। এখানে গণফোরামের সুব্রত চৌধুরীকে প্রার্থী করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদকে বাদ দিয়ে নাগরিক ঐক্যের এসএম আকরাম ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন।

এ ছাড়া বিজেপি থেকে ঢাকা ১৭-এ আন্দালিব রহমান পার্থ, নড়াইল-২ আসনে এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, রংপুর ৩-এ পিপিবির রিটা রহমান, চট্টগ্রাম ৫-এ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম এবং লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান পিরোজপুর-২ আসনের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন।

Print Friendly

Related Posts