ধর্ষণ চেষ্টা, জাবির এক শিক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ

জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রথম বর্ষের (৪৭তম ব্যাচ) এক ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে এক ছাত্রকে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভিযুক্ত সাহেদ ইসলাম (আল আমিন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র।

গতকাল রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক ছাত্রকে মারধরের খবর পেয়ে প্রক্টরিয়াল টিম সেখানে উপস্থিত হয়ে আল আমিনকে উদ্ধার করে। পরে তাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে লিখিত বক্তব্যে আল আমিন জানায়, অভিযোগকারী ওই ছাত্রীর সাথে তার ফেসবুকে পরিচয়। পরিচয়ের তৃতীয় দিনে সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম খালেদা জিয়া হল এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনের মাঠে (বৃন্দাবন বলে পরিচিত) তারা দেখা করে। প্রথম দেখাতেই আল আমিন তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় এবং শারীরিক সম্পর্ক করতে চায়। এ সময় ছাত্রীটি তাকে বাঁধা দেয়। পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেয়েটি আল আল আমিনকে ফোনকল করে পুনরায় তার সাথে দেখা করতে চয়। রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় দেখা করতে এলে ওই ছাত্রীর সাথে থাকা বিভাগের সহপাঠি এবং সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাকে মারধর করে।

এ বিষয়ে প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, ‘আমার ধারণা আল আমিন একজন বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ। ঘটনাটি যৌন নিপীড়নের সাথে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল এর পরবর্তী কার্যক্রম দেখবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শৃঙ্খলা বিধি ভঙ্গের কারণে প্রক্টরিয়াল টিম তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তবে মানহানির ভয়ে ঘটনার শিকার ছাত্রী এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি।’

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল জানান, ‘অভিযুক্তকে পুলিশী হেফাজতে রাখা হয়েছে। এখনও কোনো মামলা হয়নি। মামলা হলে কোর্টে উঠানো হবে।’

এ বিষয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. শাহেদুর রশিদ বলেন, ‘আল আমিন বহিস্কৃত অবস্থায় আছে। তার বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত বিভাগের শিক্ষার্থী নয়।’

প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছর ৪৬তম ব্যাচে এক ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে আল আমিন। ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষমান তালিকায় থাকা ওই ছাত্রীকে উপাচার্য কোটায় ভর্তি করানোর আশ্বাস দেয় সে। পরবর্তীতে ছাত্রীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ভর্তি করানো হয়েছে বলে জানায়। ঐ ছাত্রী আল আমিনের কথায় বিশ্বাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগে এক বছর ক্লাস করার পর প্রথমবর্ষ ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় জানতে পারে যে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই নয়। ভর্তি জালিয়াতির ওই ঘটনায় অভিযোগ প্রমাণ হলে এ বছরের ১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আল আমিনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল: এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনা সহ সারা দেশে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন করে পুরাতন কলা ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিল পরবর্তী সমাবেশে সুমাইয়া ফেরদৌসের সঞ্চালনায় ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অলিউর রহমান সান, সুদীপ্ত দে দীপ্ত, নুসরাত তুবা, সুপ্রভা মিলি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় ছাত্রফ্রন্ট জাবি সংসদের সভাপতি সুস্মিতা মরিয়ম, সাধারণ সম্পাদক দিদার, সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন সহ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly

Related Posts