সাগর জামান ॥ এরই মধ্যে বিকেলের মিঠেল আলো বাড়ি ফিরে গেছে। গোধূলিও হারিয়ে গেছে। সন্ধ্যার আঁধার দিকবলয় বাড়িয়ে দিয়েছে । মিয়ানো আলোয় চলছে এক অদম্য নারীর বেসাতি। স্বাবলম্ববী হওয়ার সংগ্রাম।মুখে তবু তার আলোকিত হাসি।
প্রতিদিন বিকেল হলেই সংসারের সব কাজ গুছিয়ে সে হাজির হয় মাগুরা শহরের নতুন বাজার সংলগ্ন বেলতলা সড়কে। সড়কের পাশেই সে তার ব্যবসায়িক পসরা সাজিয়ে বসেন । রকমারি রান্নার সব উপকরণ নিয়ে তৈরি করতে থাকেন চপ, পুরি, পিঁয়াজু, সিঙ্গারা, পাপড়, ছোলা, ইত্যাদি সব মজাদার খাবার। সিদ্ধ হস্তে খাবার তৈরির পাশাপাশি ক্রেতাদের মাঝে সযত্নে তা পরিবেশন করেন নিষ্ঠার সাথে, ক্লান্তিহীনভাবে প্রতিদিন।
গল্পটা মাগুরা শহরের বেলতলার বাসিন্দা সাখি বিশ্বাসের। সাখি বিশ্বাস একজন উদ্যমী নারী। স্বামী স্বপন বিশ্বাস বিদ্যুত মিস্ত্রি। স্বপন বিশ্বাসের একার রোজগারে বৃদ্ধা মা প্রতিবন্ধী সন্তান সহ পাঁচজনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। এখন সাথি বিশ্বাস সংসারের কাজ সেরে এই ব্যবসার কাজে সময় দেন। এ পেশায় নিয়োজিত হওয়ার পর ঘুচে গেছে তার সংসারের টানাপোড়েন। সাচ্ছন্দে চলছে সংসার। বৃদ্ধা শ্বাশুরী প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসা খরচও চালাতে পারছেন।
সাথি বিশ্বাসের দুইটি পুত্র সন্তান। বড় ছেলে অমৃত বিশ্বাস বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, ছোট ছেলে অরণ্য বিশ্বাস চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। ছোট ছেলেকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। লেখা পড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে। তাইতো প্রাণান্ত পরিশ্রম করছে সে। মাগুরায় এধরণের পেশাকে অনেকে বেছে নিয়েছেন কিন্তু সাথি বিশ্বাস ছাড়া কোনো নারীকে এ পেশায় দেখা যায়নি।
আপাত দৃষ্টিতে সাথি বিশ্বাসকে একজন সাধারণ খেটে খাওয়া নারী হিসাবে দেখতে পান অনেকে। কিন্তু তার স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য এই পেশা নির্বাচনকে নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম প্রয়াসই বলতে হবে। তিনি অন্যের বাসাবাড়ীতে কাজের মানুষ হয়ে কাজ না করে পেশাদার রাঁধুনি হয়ে নিজের ছোট ব্যবসায় তার রন্ধন প্রজ্ঞা কাজে লাগাচ্ছেন।
সাথি বিশ্বাস একজন নারী গৃহবধু বলে কেবল সংসারের নিগড়ে বাঁধা থাকেননি। ঘোর অনটনের মধ্যে তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং তিনি তার আত্মনির্ভর চেতনার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পরিশ্রমের মাধ্যমে তার জীবনে সাফল্য এনেছে আত্মনির্ভরতা অর্জন করেছেন। তার এই সার্থক কর্ম প্রয়াস অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে ।