পিত্তথলির পাথর টিউমার কিংবা ক্যানসার

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সহিদুর রহমান

 

তাসলিমা বয়স ৪৩ বৎসর। দীর্ঘ ১০ বৎসর যাবত পেটের ব্যথায় ভুগছে। পেটের ব্যাথা হলে সকলে যা করে সেও তাই করেছে।থেমে থেমে ব্যাথা হয়। কখনো সখনো তীব্র হয়, আবার কখনো কখনো হালকা ব্যাথা থাকে। স্বাভাবিক ওষুধে কাজ হয়, তাই তেমন গুরুত্ব দেয় না । এর সংগে বমি বমি ভাব, বুক জ্বালা, খাওয়ায় অরুচি, অল্প খেলে পেট ভরে আসে, চুকা ঢেক আসে প্রভৃতি উপসর্গ সমুহ দেখা দেয়।

স্বাভাবিক ওষুধে কাজ ভালই চলছিল। বিপত্তি ঘটল হঠাৎ যখন তীব্র ব্যাথা শুরু হলো যা আর সাধারণ ওষুধে কাজ করলো না। চার পাঁচদিন ধরে ব্যাথা, সাথে বমি, জ্বর। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। পরীক্ষা চলছে, চিকিৎসাও চলছে। না ব্যাথার তীব্রতা কোন অবস্থাতেই কমছে না। একটি মাত্র পরীক্ষাতেই রোগ ধরা পড়ে গেল সেটা হলো আলট্রাসনোগ্রাম।

পরীক্ষার রিপোর্ট হলো পিত্তথলীর ভিতর অসংখ্য পাথর, সাথে একটি ছোট আকারের টিউমার। টিউমারের আয়তন লো ৩ সেন্টিমিটারের মতো। মুল লিভারের দিকে এর অবস্থান। যেহেতু টিউমার ও পাথর একত্রে তাই বিষয়টি ভাবনার ব্যাপার।

নানান চিকিৎসা শুরু হলো, জ্বর ও ব্যাথার তীব্রতা কমাবার জন্য। ক্রমান্বয়ে উপসর্গ কমা শুরু হলো। রোগী সুস্থতা ফিরে পেতে শুরু করেছে। এরপর একটি সিটি স্ক্যান করা হলো রোগের বিস্তার জানার জন্য।

টিউমার সাধারনত ক্যানসার হয়, ক্যানসার হলে তা বিস্তার ঘটায়, লিভার, পেরিটনিয়াম, লিম্ফনোড প্রভৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে। যা রোগীকে অকাল মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এই রোগীর ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান করা হলো, সিটি স্ক্যান রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বুঝা গেলো কোথাও ক্যানসারের বিস্তৃতি ঘটেনি।

তাই অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। রোগীকে ও তার আত্মীয়দেরকে বুঝানো হলো অপারেশনের ধরন ও তার ফলাফল সম্পর্কে। তারা সম্মতি প্রদান করলো। এরপর সার্বিক পরীক্ষা পদ্ধতি করে রোগীকে অপারেশনের উপযোগী করে তোলা হলো।

নির্দিষ্ট দিনে তার অপারেশন হয়েছে। অপারেশনের সময় ডায়াগোনসষ্টিক ল্যাপারোসকপি করা হলো। এই পরীক্ষার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে অপারেশন পুর্ব সকল পরীক্ষায় কোন ক্যানসার কোথাও ছড়িয়ে পড়েনি, কিন্তু ডায়াগোনসষ্টিক ল্যাপারোসকপিক পরীক্ষায় দেখা গেল ক্ষুদ্র একটি ক্যানসার লিভার এর উপরিভাগে স্থান করে নিয়েছে। অথবা পেরিটোনিয়ামের কোন একটি স্থানে ছড়িয়ে আছে। এই ক্ষুদ্র ক্যানসারটি তার বড়ো অপারেশনের অন্তরায়। সে সকল ক্ষেত্রে বড়ো সার্জারী পরিহার করা হয।

এই রোগীর ক্ষেত্রে এ রকম অবস্থা দেখা যায়নি। তাই মেজর সার্জারী করার সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছিল।অপারেশনটি ছিল রেডিক্যাল কলিসিস্টেকটমি। লিভারের সেগমেন্ট ৪ এ অংশটি কাটা হয়েছে। এমন নিখুঁত সার্জারী করা হয়েছে যা ভবিষ্যতে তার ক্যাানসার বিস্তারের কোন সুযোগ সৃস্টি করবে না। তবে মাইক্রোমেটাসটাসিস বলে একটা অবস্থা ক্যানসারের ক্ষেত্রে বিরাজ করে যার জন্য ভাল ফল লাভের আশায় কেমোথেরাপী দিতে হয়। সুখবর হলো লিভার টিসু ও লিম্ভনোডে কোন ক্যানসার পাওয়া যায়নি। রোগীকে আশ্বস্থ করা হয়েছে সফল সার্জারী করা হয়েছে বলে।

 

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সহিদুর রহমান

এমবিবিএস,এফসিপিএস,এফআইসিএস,এফআইএসএস(আমেরিকা) ।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন।ইনটারন্যাশনাল স্কলার(আমেরিকা)।
হেপাটোবিলিয়ারী প্যানক্রিয়েটিক এন্ড লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারী বিভাগ্
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
চেম্বার-লিভার গ্যাষ্ট্রিক স্পেশালাইজড হাসপাতাল।বাড়ী -৭৫,রোড নং-৫/এ,ধানমন্ডি,সাতমসজিদ রোড, ঢাকা ।
ফোন-০১৮৭৯১৪৩০৫৭,০১৭১৫৫১৭৬২১।
www.Prof.Dr.Md.Shahidur.com

Print Friendly

Related Posts