হোয়াইটওয়াশ হল বাংলাদেশ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ হেরেছেন সাকিবরা। জিতেছে ক্রিকেট। পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা। আর ছিল রোমাঞ্চ। আরিফুল হক রশিদের শেষ বল লংঅনে পাঠিয়ে দেন। দূর থেকে ছুটে ফিল্ডিং করেন শফিক। চার হয়েছে কী না, জানতে থার্ডআম্পায়ারের কাছে যেতে হয়। দৌড়ে ২ রান হয়। দেখতে হয় ১ রানের হার। নাটকীয়ভাবে হেরে গেল বাংলাদেশ।
অবিশ্বাস্য ঘটনা!! বাউন্ডারি লাইনে শেষ মুহূর্তে চার হতে গিয়েও হয়নি। কোনোমতে ঠেকিয়েছেন ফিল্ডার। থার্ডআম্পায়ার জানিয়েছেন চার হয়নি। হোয়াইটওয়াশ হল বাংলাদেশ!

শুরুর ব্যাটিং ব্যর্থতা ছাপিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম দেখালেন অসাধারণ বীরত্ব। দেরাদুনে পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকল ম্যাচের ভাগ্য। কিন্তু তীরে এসে ডুবল তরী। রশিদ খানের শেষ বলে চার রানের সমীকরণ মেলাতে পারলেন না আরিফুল হক। দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশ সিরিজের তৃতীয় টি-টুয়েন্টি ম্যাচ হারল ১ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর- আফগানিস্তান-১৪৫/৬, বাংলাদেশ-১৪৪/৬

সিরিজ হার এড়ানোর সুযোগ শেষ হয়ে গিয়েছিল আগের ম্যাচেই। ছিল হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর সুযোগ। কিন্তু টপঅর্ডারের ব্যর্থতায় সেটিও হাতছাড়া হল। টানা তিন ম্যাচ হারের ক্ষত নিয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে সাকিব-তামিমদের।

১৪৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে শেষ চার ওভারে দরকার ছিল ৪৮ রানে কঠিন সমীকরণ। ১৭তম ওভারে দুই ছক্কায় ১৫ রান তুলে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান মাহমুদউল্লাহ। রশিদ খান পরের ওভারে মাত্র ৩ রান দিলে আবার কঠিন হয়ে যায় ম্যাচ। মুশফিক জানাতের এক ওভারে ৫টি চার মেরে ম্যাচ নিয়ে এসেছিলেন নিজেদের দিকে। কিন্তু শেষ ওভারে ৯ রানের সমীকরণ মেলাতে না পারলে বিষাদের হার সঙ্গী হয় বাংলাদেশ দলের।

৫৩ রানে চার উইকেট হারানো বাংলাদেশ দল লড়াই করে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক বীরত্বে। শেষ ওভারের প্রথম বলে মুশফিক আউট হলে ভাঙে ৮৪ রানের জুটি। মুশফিক করেন ৩৭ বলে ৪৬ রান। মাহমুদউল্লাহ ৩৮ বলে ৪৫ করে শেষ বলে রানআউট হন। শেষ বলটি মোকাবেলা করা আরিফুল ৩ বলে ৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। শেষ বলে অল্পের জন্য ছক্কা হয়নি। বাউন্ডারি সীমানায় বল গেলে দৌড়ে দুই রানের বেশি নিতে পারেননি আরিফুল ও মাহমুদউল্লাহ।

স্লগ-ওভারে দারুণ বোলিং করে লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যেই রেখেছিলেন বোলাররা। কিন্তু শুরুর অগোছালো ব্যাটিংয়ে ১৪৬ রানই হয়ে ওঠ অনেক দূরের পথ। মাহমুদউল্লাহ মুশফিক মিলে অবশ্য নাগালেই নিয়ে এসেছিলেন ম্যাচ।

টানা দুই ম্যাচ হারে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি স্পষ্ট হয় লিটন-তামিম-সৌম্যদের ব্যাটিংয়ের ধরণে। শুরুতেই সাজঘরে ফেরেন তামিম। মুজিবের বলে ক্যাচ দেয়ার আগে এ ওপেনার করতে পারেন ৫ রান, এক চারে ৬ বলে।

লিটন ও সৌম্য পরে খানিকটা হাত খোলার চেষ্টা করেছেন। তখনই রানআউটে কাটা পড়েন সৌম্য। একটি করে চার-ছক্কায় ১৩ বলে ১৫ রানের ইনিংস তার।

যার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট সৌম্য, সেই লিটনও কাটা পড়েন রানআউটেই। সেটিও সৌম্য ফেরার পরের ওভারেই। যাওয়ার আগে ১৪ বলে ১২ করে যান।

দারুণ এক ছয় মারা সাকিবও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি। এক্সট্রা কাভারে বল ভাসিয়ে ক্যাচ হয়ে থামে তার ৯ বলে ১০ রানের ইনিংস। সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের লড়াইয়ে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।

এদিন তিন পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। দলে আসেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ ও আরিফুল হক, পেসার আবু জায়েদ রাহি। বোলিং শক্তি বাড়িয়েও কাজ হয়নি। টস হেরে ধারহীন বোলিং করে গেছে সাকিবের দল।

প্রথম সাফল্য আনতে অষ্টম ওভার লেগে যায়। মোহাম্মদ শাহজাদকে এলবি করে উইকেট আনেন নাজমুল অপু। ৩ চার ও এক ছক্কায় ২২ বলে ২৬ করে যান আফগান উদ্বোধক।

পরের ওভারেই দ্বিতীয় সাফল্য আনেন আবু জায়েদ। আরেক ওপেনার উসমান ঘানিকে মুশফিকের গ্লাভসবন্দী করেন। একটি করে চার-ছয়ে ২৬ বলে ১৯ করে যান ঘানি।

তৃতীয় সাফল্য আসতে আবার একটু বিরতি। ১৩তম ওভারে আসগর স্ট্যানিকজাইকে সাব্বিরের ক্যাচ বানিয়ে উল্লাসে মাতেন আরিফুল হক। আফগান অধিনায়ক করে যান ৩ ছক্কায় ১৭ বলে ২৭ রান।

দুই বল পর মোহাম্মদ নবিকে (৩) সাজঘরে পাঠিয়ে নিজের দ্বিতীয় সাফল্য আনেন আবু জায়েদ।

নাজিবুল্লাহ জাদরানকে (১৫) সাজঘরে পাঠিয়ে এরপরই দারুণ এক অর্জনে নাম লেখান সাকিব আল হাসান। ৫০০ উইকেট আর ১০ হাজার রানের এলিট ক্লাবে ঢুকে যান তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে। সাউথ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস ও পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদির পর এই অর্জনের ক্লাবে তৃতীয় সদস্য হলেন টাইগারদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

সাত বোলার ব্যবহারের দিনে দারুণ বল করেন সাকিব। ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচায় অধিনায়কের সংগ্রহ এক উইকেট। আবু জায়েদ সমান ওভারে ২৭ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। আরিফুল হক এক ওভারে ১৩ রানে পেয়েছেন এক উইকেট। আর ৪ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট গেছে নাজমুল অপুর ঝুলিতে।

Print Friendly

Related Posts