কেমন চলছে বরিশালের এ্যাপেক্স হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল!

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালের এ্যাপেক্স হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটি পুরো খামখেয়ালিপনার মধ্যদিয়ে পরিচালিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ডাঃ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, অধ্যক্ষের ব্যাপক অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় হাসপাতালটি ডুবতে বসেছে ।

অধ্যক্ষের আচার-আচরণে ওই প্রতিষ্ঠানটির সাধারন শিক্ষকদের সবসময়ই ভয়ে তটস্থ থাকতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটি ও হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের কাছে বার বার অভিযোগ করেও কোন লাভ হচ্ছেনা বলে জানালেন ভুক্তভোগি শিক্ষকরা।

শিক্ষকদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের ম্যানেজ করে নিজের ইচ্ছেমতো কলেজ পরিচালনা করে আসছেন ডাঃ জাকির। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করছেন। তার কথার বাইরে যাওয়ার সাধ্য নেই কারও। নুন থেকে চুন খসলেই তার ওপর নেমে আসে নানা নির্যাতনের খড়গ। কথায় কথায় তিনি সাধারণ শিক্ষকদের ছুঁড়ে দেন চাকরিচ্যুতির হুমকি।

ডাঃ জাকিরের অতি পরিচিত ডায়লগ- ‌‌আমি শিক্ষক সমিতির নেতা আমাকে কে কি বলবে। বরিশাল শহরে আমার ক্ষমতাবান আত্মীয় স্বজন রয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও আমার কথা শোনে। কেউ আমার কিছু করতে পারবেনা।’

২০১৭ সালের নভেম্বরে তিনি এই কলেজে যোগদানের পরপরই একজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করেন। ঐ শিক্ষক তার বিরুদ্ধে মামলা করলেও কোন লাভ হয়নি। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি হলেও তার কোন প্রতিকার আজও পাওয়া যায়নি।

বলা হয়, তিনি কলেজে যোগদান করেন তখন তার কাছে টাই কেনারও পয়সা ছিলনা, এখন তিনি অনেক টাকার মালিক। এর উৎস তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডাঃ জাকিরের   বেপরোয়া আচরনের কথা সম্প্রতি এ্যাপেক্স হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষক ও কর্মচারীরা বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিতভাবে জানান।

লিখিত দাবিতে তারা জানান, বর্তমান অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন তার ব্যাক্তি স্বার্থ ও ক্ষমতার অপব্যাবহার করে কলেজের নিয়ম কানুন নিজের মত করে পরিচালিত করছেন। তিনি শিক্ষক কোন মতামত গ্রহণ না করে উল্টো বোর্ডের চেয়ারম্যান ও শিক্ষক সমিতির নেতাদের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে চলছেন। অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন কলেজের ম্যানেজিং কমিটিকে ভুল বুঝিয়ে বোর্ডের বিভিন্ন খরচের কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ চলেছেন। তিনি নিয়মিত কলেজে আসেন না, সপ্তাহে দুই-তিন দিন কলেজ করে বাকী দিনগুলো তিনি বোর্ডের কাজের কথা বলে ঢাকায় থাকেন এবং ঢাকায় চেম্বারে বসেন।

তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ করা হয় যে, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ইর্ন্টানি কার্যক্রম তিনি এককভাবে করে থাকেন। পরীক্ষার চূড়ান্ত ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার ব্যবহারিক খাতা ও এ্যাপ্রোন সকল শিক্ষকদের পরামর্শ ছাড়া তিনি এককভাবে তৈরি করে বিক্রয় করেন ও সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেন বলেও তারা দাবি করেন।

অভিযোগে  আরো বলা হয়, এ্যাপেক্স হোমিও কলেজের নামে অগ্রনী ব্যাংক এ বটতলা শাখায় শিক্ষক কল্যাণ তহবিলের একাউন্টটি বর্তমান অধ্যক্ষ ডাঃ জাকির হোসেন তার একক নামে পরিচালনা করে আসছেন। ওই একাউন্ট পরিচালনার কথা ছিল অধ্যক্ষসহ আরও দুই জন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে। এ ছাড়া তিনি কলেজের কোন রাষ্ট্রিয় আচার-অনুষ্ঠানও করেন না। তিনি এই কলেজের আউটডোর বন্ধ করে দিয়েছেন। কলেজের টাকায় বরিশাল শহরের বটতলায় তের লক্ষ টাকায় একটি দোকান কিনেছেন তিনি।

স্থানীয় জনগণের কাছে তার এ বিষয়টি খুবই কৌতুহল সৃষ্টি করেছে, কারণ তার চাকরির বয়স মাত্র এক  বছর। তিনি কলেজ থেকে মাসে ২৫ হাজার টাকা সম্মানী নিয়ে থাকেন। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এত অল্প সময় কিভাবে তিনি এত অর্থ বিত্তের মালিক হলেন।

এসব বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

Print Friendly

Related Posts