অসহায় এসতারা এখন পথে পথে ভিক্ষা করে বেড়ায়

ইফতেখার শাহীন, বরগুনা॥ কারও অন্তরের ব্যাথা অন্য কেউ অনুভব করেনা। ব্যাথিত জনের কথা ভাবার সময়টুকু নেই যেন কারও। বাঁচার তাগিদে মানুষ কিছু না কিছু পেশায় নিয়োজিত। সেই সব পেশার মধ্যে একটি পেশা ভিক্ষাবৃত্তি।

সমাজে অনন্যপায় হয়ে শেষ অবস্থানে পৌঁছে যখন আর কোন অবলম্বন না থকে তখন শুরু করে ভিক্ষাবৃত্তি।

দেখা হলো একজন অন্ধ মহিলার সাথে। মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে যিনি রাতে এখানে সেখানে ঘুমিয়ে থাকেন।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের স্বীকার এই অসহায় এসতারা। বয়স ৪০। এসতারার স্বামী মৃত রুস্তুম মোল্লা। বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের কালাইমুদাফাত গ্রামে। এ দুনিয়ায় তার একমাত্র ছেলে অন্ধ মায়ের খোঁজটুকু পর্যন্ত রাখে না।

রাত শেষে একটি ঝুলি কাঁধে নিয়ে অন্ধ এসতারা চলছে যেনো অনন্তকাল ধরে। এ চলার শেষ নেই, নেই এর শেষ ঠিকানা। এই পথ চলার মাঝেই করুণ আকুতি জানিয়ে তার স্বরে বলছে “স্যার একটা টাহা দ্যান অথবা দু-মুঠো চাল দেন।

ঘর্মাক্ত হয়ে বরগুনা শহরের অলিগলি দোকান গ্রাম গঞ্জের হাট বাজারগুলোতে দিনের পর দিন ভিক্ষা করে বেড়ায় অন্ধ এসতারা। কতদিন কতটা পথ অতিক্রম করতে হবে তা তার জানা নেই। এসতারা তার জীবনের করুণ কাহিনী বলতে বলতে এক সময় কেঁদে ফেলেন।

অশ্রুসজল নয়নে তিনি জানান, ২০০৭ সালে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন উপজেলা টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কুমড়াখালী আবাসন প্রকল্পের ৪ নং ব্যারাকে ৪/৬ নং কক্ষ এসতারার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। সিডরের পর পরই অন্ধ এসতারা যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকা যান। পরবর্তীতে তিনি সুস্থ্য হয়ে আবাসনে ফিরলে তিনি এসে দেখেন তার কক্ষটিতে লাল মিয়া নামের একজন পরিবার নিয়ে থাকছেন।

এসতারা জানান, তৎকালীন আবাসনের সভাপতি নুর ইসলাম ও কাদের এরা দুজন মিলে এসতারাকে ওই আবাসন থেকে তাড়িয়ে দেয়। তারপর থেকে এসতারা পথে পথে ঘুরছে। সরকারিভাবে বৈধ বরাদ্দের কাগজ থাকলেও নেই আজ তার মাথা গোজার ঠাঁই।

এসতারা আবাসনের বর্তমান সভাপতি দুলাল সরদার ও সাধারণ সম্পাদক ফারুকের কাছে গেলে তারা এর কোন সুরাহা না দিয়ে এসতারাকে তার প্রাপ্য কক্ষটির কাছে ভিড়তে না দিয়ে এরাও তাকে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

 

 

Print Friendly

Related Posts