শরৎচন্দ্র হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ শুধু লেখক কথাসাহিত্যিকই ছিলেন না শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়৷ সেই সময় রীতিমতো রাজনীতির সঙ্গে যোগ ছিল এই সাহিত্যিকের৷ কংগ্রেসের পাশাপাশি শরৎচন্দ্রের নিবিড় যোগ ছিল বিপ্লবীদের সঙ্গেও৷

এই বাজে শিবপুরে থাকাকালেই ১৯২১ খ্রীস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি তখন দেশবন্ধুর চিত্তরঞ্জন দাশের আহ্বানে কংগ্রেসে যোগ দেন ৷তবে তারও আগে ১৯১৯ সালে ইংরেজ সরকারের রাওলাট আইনের প্রতিবাদে কলকাতায় যে মিছিল হয়েছিল তাতে শরৎচন্দ্র একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।

তিনি তখন হাওড়ায় থাকতেন বলে দেশবন্ধুর উদ্যোগে শরৎচন্দ্রকেই হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯২১ থেকে ১৯৩৬সাল পর্যন্ত একটানা দীর্ঘ ১৬ বছর তিনিই হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। মাঝে ১৯২২ খ্রীস্টাব্দে তিনি একবার হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতির পদ ত্যাগ করতে চাইলে দেশবন্ধু তা করতে দেননি।

তবে শরৎচন্দ্রের সঙ্গে বরাবরই কিন্তু ভারতের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র সংগ্রামী বা সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীদের যোগাযোগ ছিল। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স বা সংক্ষেপে বি ভি দলের সর্বাধিনায়ক প্রখ্যাত বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ, কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলার আসামী বিপ্লবী শচীন সান্যাল প্রমুখ ছাড়াও বারীন ঘোষ, উপেন বন্দোপাধ্যায়, চারু রায়, অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিপিন গাঙ্গুলী প্রমুখ খ্যাতনামা বিপ্লবীদের সঙ্গেও তাঁর যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিল। বিপিনবাবু সম্পর্কে শরৎচন্দ্রের মামা হতেন।

শরৎচন্দ্র বহু বিপ্লবীকে নিজের রিভলবার, বন্দুকের গুলী এবং অর্থ দিয়েও সাহায্য করতেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নায়ক মহাবিপ্লবী সূর্য সেনকেও তিনি তাঁর বৈপ্লবিক কাজের জন্য অর্থ সাহায্য করেছিলেন।

শরৎচন্দ্রের লেখা পথের দাবী উপন্যাসটি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ করেছিল৷ এই জনপ্রিয় উপন্যাসটি ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের অগস্ট মাসে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এক বিপ্লবী সব্যসাচীর রোমাঞ্চকর কাহিনি ব্রিটিশ আমলে লিখিত একটি সাহসী উপন্যাস।

পথের দাবী ধারাবাহিক ভাবে বঙ্গবাণী পত্রকায় বের হত। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে ছিল সেই পত্রিকার অফিস। পুলিশ কমিশনারের চিঠি ও নোট অনুযায়ী তদানিন্তন চিফ সেক্রেটারি পথের দাবীকে ‘বিষময়’ বলে উল্লেখ করেন। ১৯২৬ সালের ১১ ডিসেম্বর অ্যাডভোকেট জেনারেল ব্রজেন্দ্রনাথ মিত্র মত দেন যে পথের দাবী দেশদ্রোহকর ও বাজেয়াপ্তযোগ্য।

১৯২৭ এর ৪ জানুয়ারি প্রকাশিত গেজেটে পথের দাবী নিষিদ্ধ হয়। তখন সারা দেশ জুড়ে এই নিষিদ্ধকরণ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল। এই বই নিষিদ্ধকরণের বিরোধিতা করে আইনসভায় সুভাষচন্দ্র বসু ও হরেন্দ্রনাথ চৌধুরী প্রশ্ন তোলে ।

Print Friendly

Related Posts