ছাত্রলীগের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র জাবি, আহত অর্ধ শতাধিক

জাবি প্রতিনিধি: এক ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হল ও আলবেরুনী হলের ছাত্রলীগকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে।

মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের আল বেরুনী হল ও বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার সংলগ্ন এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে।

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বরত চিকিৎসক আবু জাফর মো. সালেহ বলেন, প্রায় ৫০ জনের মতো ছাত্রকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০জন ছাত্রকে এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে চার-পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হল সংলগ্ন চৌরঙ্গী এলাকায় মীর মশাররফ হোসেন হলের ১জন এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ৩জন শিক্ষার্থী গান গাইছিলেন। এই চারজনই ৪৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। এ সময় এক ছাত্রী আল বেরুনী হলের তার কিছু সহপাঠীকে ডেকে এনে তাদের কাছে ওই চারজনের কিরুদ্ধে ‘ইভটিজিং’র অভিযোগ করে। এ নিয়ে ওই চার শিক্ষার্থী এবং ওই ছাত্রীর সহপাঠীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আল বেরুনী হলের শিক্ষার্থীরা ওই চারজনকে মারধর করে। এতে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রটি গুরুতর আহত হয়। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা ভীড় জমায়।

মীর মশাররফ হোসেন হলের গেটে দায়িত্বরত এক গার্ডের কাছ থেকে জানা যায়, রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রায় ৩০-৪০জন ছাত্রলীগকর্মী উত্তেজিত কথাবার্তা বলতে বলতে বেরিয়ে যায়। এ সময় তাদের হাতে ছিল ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প, রড এবং লাঠি। পরে রাত ১২টার দিকে আল বেরুনী হলের সামনে আল বেরুনী হল ছাত্রলীগ এবং মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, এ সময় মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্য থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। দুই গ্রুপের মধ্যে চলে ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি। মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৪তম আবর্তনের এক শিক্ষার্থীর বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয় আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা। সব মিলিয়ে চৌরঙ্গী, মেডিকেল সেন্টার, আল বেরুনী হল প্রাঙ্গন, জীববিজ্ঞান অনুষদ এই পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আল বেরুনী হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

সংঘর্ষের সময় মীর মশাররফ হোসেন হলের রবিউল ইসলাম এক রাউন্ড গুলি ছোড়েন বলে অভিযোগ করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ বিষয়ে রবিউল ইসলাম বলেন, “এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করার জন্য এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে। কিছু শিক্ষক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। তারা দেখেছে আমি কি করেছি আর কি করিনি। আমি মূলত সংঘর্ষের ঘটনা জানতে পেরে বিষয়টি সমাধান করতে গিয়েছিলাম।”

এদিকে বুধবার সকাল ৮টার দিকে আল বেরুনী হলের সামনে অবস্থিত জীববিজ্ঞান অনুষদের গেটে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগকর্মীদের বিচারের দাবিতে তালা লাগিয়ে দেন। জীববিজ্ঞান অনুষদের এই ভবনে বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরিক্ষার প্রশ্নপত্র ছিলো, যা কার্যত আবদ্ধ হয়ে পড়ে। পরে সেখানে বিশ^বিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য এবং প্রক্টরিয়াল বডি’র সদস্যরা উপস্থিত হন এবং তাদের আশ্বাস পেয়ে আল বেরুনী হল ছাত্রলীগ কর্মীরা গেটের তালা খুলে দেন।

খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম সেখানে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং যখাযথ বিচার করার আশ্বাস দেন। এবং তাদের দাবী-দাওয়া সংবলিত লিখিত অভিযোগ নিয়ে বিকেল ৫টার সময় তার কার্যলয়ে আসতে বলেন। এসব বিষয়ে প্রক্টর সিকদার মো জুলকারনাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলাবিধির লঙ্ঘন। ফৌজদারি অপরাধ। আর কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা যেন না ঘটে সে দিকে আমরা নজর রাখছি। এখন পর্যন্ত যা ঘটেছে তার একটা সুষ্ঠু সামাধান যেন হয় সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিশ্চয়ই যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।”

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, “এটি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীক কোনো সংঘর্ষের ঘটনা নয়। সাধারণ কিছু শিক্ষার্থীর তুচ্ছ একটি ঘটনা নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। আমি চাইবো ভবিষ্যতে আর কোনো ছাত্রলীগ কর্মী যেন এধরনের ঘটনার সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত না করে। আর যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে শাখা ছাত্রলীগ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ঘটনার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করবে।”

সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, “যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তারা সংগঠনের আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক কাজ করেছে। তাদের জন্য উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”

Print Friendly

Related Posts